ক্রীড়া দলের বিদেশযাত্রার ৫০ বছর
বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়া দলের বিদেশ সফরের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ১৯৭২ সালের এই দিনে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের কোনো দল গিয়েছিল প্রথম বিদেশ সফরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হকি দলের ভারত সফরের মাধ্যমে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের দুয়ার খুলেছিল বাংলাদেশ। ওই সময় আমি আরমানিটোলা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র।
ঢাকার হকির প্রাণকেন্দ্র এই স্কুল এবং আমি স্কুল হকি দলের গোলরক্ষক। স্কুলের সাবেক ছাত্ররা তখন দেশের হকির বড় তারকা। আব্দুস সাদেক, শামসুল বারী, প্রতাপ শংকর হাজরা, আবদুল মাজেদ, এহতেশাম সুলতান, মোহসিন, সিকান্দার, রাজুসহ অনেকে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁদের নিয়েই এপ্রিল মাসের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আব্দুস সাদেকের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের দল গড়ে ভারত সফরের জন্য। অধিনায়ক আব্দুস সাদেক সেই সফরের গোড়ার কথা বলেছেন, ‘আমরা কয়েকজন হকি খেলোয়াড় মিলে ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই সফরের ব্যবস্থা করেছিলাম। ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ম্যাচ খেলার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল আমাদের পক্ষ থেকে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও সফরের অনুমোদন দেয় এবং তারাই সম্ভবত সফরের খরচ দিয়েছিল। ’
অথচ বিশ্ব হকিতে তখন ভারতের দোর্দণ্ড প্রতাপ। ভারতের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে হকি দল। সেই সাক্ষাতের স্মৃতি এখনো অমলিন আব্দুস সাদেকের কাছে, “বঙ্গবন্ধু আমাদের ভারত সফর নিয়ে ভীষণ আন্তরিক ছিলেন। সবার সঙ্গে পরিচিত হতে গিয়ে দলের ছোটখাটো গড়নের রাজুকে দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন। দুই হাতে তাকে ওপরে তুলে নিয়ে হাসি দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুই কী খেলবি রে। ’ ভারত সফরে আমাদের অ্যাম্বাসাডরের মতো ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারত আমাদের মিত্র শক্তি ছিল, তাই এই সফরে তাদের আতিথেয়তা ছিল এক কথায় অসাধারণ। ম্যাচ দেখতে চলে আসতেন ওদের রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরাও। প্রত্যেক জায়গায় ছিল আমাদের সম্মানে আনুষ্ঠানিক ভোজ। ” সেই লক্ষ্যে ২৮ এপ্রিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের বিমানে চড়ে ঢাবির হকি দল ভারতে রওনা হয়। সদ্যঃস্বাধীন দেশ থেকে এটাই কোনো ক্রীড়া দলের প্রথম বিদেশযাত্রা।