অশনি সংকেত সাত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে
দুর্নীতির দায়ে ডুবতে বসেছে ৭টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিতরণ করা ঋণের সর্বনিু ৪২ থেকে সর্বোচ্চ ৯৬ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। এছাড়া আরও ৯টি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি বন্ধ না হলে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাই সবকিছুর আগে কঠোরহস্তে প্রভাবশালীদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে এ খাত বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিষ্ঠান সাতটি হচ্ছে-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিডেট, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং উত্তরা ফাইন্যান্স লি.।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নিশ্চয় প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক যোগসাজশে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তা না হলে এমন করুণ পরিস্থিতি হতো না। এছাড়া পরিচালক এবং শীর্ষ ব্যবস্থাপনারও দায় আছে। সার্বিকভাবে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি যুগান্তরকে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে হরিলুট হয়েছে সেগুলো ছাড়া নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে খেলাপি ঋণ ৭ শতাংশে নেমে আসবে। এটা ভালো প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় ধরনের কষ্টের। এতদিন দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো খেলাপি ঋণও লুকিয়ে রেখেছিল। এখন সব বের হচ্ছে। সে কারণে খেলাপি ঋণ ১৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তিনি বলেন-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে আস্থা ফেরানো সম্ভব হবে না। একইসঙ্গে দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) ঋণস্থিতি ছিল ১৬৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় পুরো টাকাই খেলাপি (৯৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ) হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের লুটপাট এবং অর্থ আত্মসাৎ করার প্রমাণ মিলেছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এছাড়া ডিসেম্বর পর্যন্ত ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ঋণস্থিতি ছিল ৯৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৮৭১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৯০ শতাংশ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। একইভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ঋণ ছিল ১৯২৮ কোটি টাকা।