আমাদের বাজেটের বড় দুর্বলতা আয় কম, ব্যয় বেশি
এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখের কাগজের বড় শিরোনাম : ‘আগামী বাজেটের আকার ৬৭৭৮৬৪ কোটি টাকা : ভর্তুকি ও মূল্যস্ফীতিই চ্যালেঞ্জ’। খবরটি যুগান্তরের।
ভেতরের খবরে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। যেমন ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রাক্কলিত অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ভর্তুকি ৭২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা এবং মোট বিনিয়োগ ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। আর পরিচালন ব্যয় হবে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত যে তথ্য ও পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে খরচ সংক্রান্ত এবং বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কিত। অথচ বাজেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে রাজস্ব আয়।
কিন্তু আমাদের দেশে এক রীতি চালু হয়েছে, যার দ্বারা ব্যয়কেই প্রাধান্য দিয়ে খরচ করা হয়। ব্যয় বা খরচ আগে, আয় পরে। এ এক ভিন্ন রীতি! সাধারণত গৃহস্থের ক্ষেত্রে ‘আয় বুঝে ব্যয়’ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার দেখা যাচ্ছে খরচকে প্রাধান্য দেয় বেশি। মিডিয়াও তা-ই। এর জন্যই খবরের শিরোনাম হয় খরচের টাকা দিয়ে, আয়ের দিক দিয়ে নয়। অথচ আয়ের দিক দিয়ে বললে পরিস্থিতিটা হয় ভিন্ন।
২০২২-২৩ অর্থবছরের যে প্রাক্কলন, তাতে দেখা যায় মোট আয় মাত্র ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংগ্রহ করবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। ১৮ হাজার কোটি টাকা আসবে ‘নন-এনবিআর’ উৎস থেকে। অতএব কী দাঁড়াল? শেষ হিসাবে দাঁড়াল এই যে, আমাদের খরচ বেশি, আয় কম। কত কম? কম বা ঘাটতি ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।
এই ঘাটতির ব্যাপারটি নতুন নয়। বহু পুরোনো। যদি ব্যক্তি হতো তাহলে ঘাটতি থেকে এক সময় দেউলিয়া হতে হতো। কিন্তু ঘাটতিটা রাষ্ট্রের, সরকারের। এটা সব দেশেই হয়। কেউ কিছু মনে করে না। তবে কথা আছে-ঘাটতির একটা সীমা থাকতে হবে। সাধারণভাবে সর্বোচ্চ ৪-৫ শতাংশ ঘাটতিকে সহনশীল মনে করা হয়। এর বেশি হলেই প্রশ্ন ওঠে। যেমন আগামী বছরের জন্য ঘাটতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। অর্থাৎ জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ পরিমাণ হবে আমাদের ঘাটতি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ঘাটতি বাড়তেও পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বাজেট
- মূল্যস্ফীতি
- মূল্যস্ফীতির হার