আগ্রাসী তিস্তায় ভিটেবাড়িসহ সব হারানোর শঙ্কা
উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এতে চরাঞ্চলে বিভিন্ন মৌসুমি ফসল তলিয়ে যেতে শুরু করায় বিপাকে পড়েছেন নদ-নদী অববাহিকার কৃষকরা। পানি বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিস্তায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও প্রতিকার মিলছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
পাউবো জানিয়েছে, জেলার নদ-নদীর পানি বাড়লেও এখনও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলেও শুক্রবার সকালে তা কাউনিয়া পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।
জেলার রাজারহাট উপজেলায় তিস্তা চিরচেনা রুদ্র রূপে আবির্ভাব হয়েছে। গত বছরে থেমে যাওয়া ভাঙনস্থলে আবারও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে এ নদী। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত এক সপ্তাহে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের রামহরি মৌজা, ২নং ওয়ার্ডের চতুরা মৌজাসহ তৈয়ব খাঁ, মানাবাড়ি ও তিস্তার মধ্যচরে চাষ করা ধান, পেঁয়াজ ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এই ইউপির চতুরা মৌজায় পাউবোর তীর রক্ষা প্রকল্পের শত শত জিও ব্যাগ দেবে গিয়ে ভাঙন ঝুঁকিতে ফেলেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি।
তিস্তার ভাঙনে গত এক সপ্তাহে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের গতিয়াশাম সরিষাবাড়ী ও ৮ নং ওয়ার্ডের খিতাব খাঁ বড় দরগা এলাকায় কয়েক একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। ভাঙনের ঝুঁকিতে দাঁড়িয়ে আছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের বসতঘর ও শত শত হেক্টর আবাদি জমি।
স্থানীয়রা জানান, তিস্তার পানি বাড়ায় স্থানীয় কৃষকদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ-রসুনসহ মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি বাড়তে থাকায় শুরু হয়েছে ভাঙন। নদী থেকে মাত্র ১০ গজ দূরত্বে বিলীনের অপেক্ষায় ঘড়িয়ালডাঙা ইউপির গতিয়াশাম কমিউনিটি ক্লিনিক এবং মাত্র ৫০/৬০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে আছে নামাভরট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষায় পাউবোর ফেলা জিও ব্যাগ দেবে যাওয়ায় যেকোনও সময় প্রতিষ্ঠান দুটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা জেগেছে। এছাড়া আশপাশের এলাকায় আরও বেশ কিছু স্থানে পাউবোর ফেলা জিও ব্যাগ দেবে গিয়ে ভাঙন ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।