নিমিষেই ঝরে যায় তরতাজা ১০ প্রাণ
আজ ৩ এপ্রিল। দখিগঞ্জ বধ্যভূমি দিবস। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর ৯ দিনের মাথায় রংপুরে ঘটেছিল এক অকল্পনীয় হত্যাযজ্ঞ। আজকের এই দিনে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভ্যানে করে রংপুর-মাহিগঞ্জ সড়কের দখিগঞ্জ শ্মশানে আসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সঙ্গে নিয়ে এসেছিল ১১ জন স্বাধীনতাকামী মানুষকে। চোখ ও হাত বেঁধে তাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করেছিল হায়েনার দল।
তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল আশপাশের মানুষ। কারও কারও কানে বুট-বুলেট আর গুলির বিকট শব্দ পৌঁছালেও সাহস করে বের হয়নি কেউ। ঠিক যেন ২৫ মার্চের কালো রাতের মতোই। সেদিন পূর্ব আকাশে রক্তের ললাট জমাট বেঁধেছিল। রংপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় জররেজসহ মুক্তিকামী ১১ বাঙালির রক্তে রক্তাক্ত হয়েছিল দখিগঞ্জ শ্মশান।
ঘাতকদের গুলিতে একে একে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ন্যাপের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়াই এ মাহফুজ আলী জররেজ, দুর্গাদাস অধিকারী, ক্ষীতিশ হালদার, এহসানুল হক দুলাল, রফিকুল ইসলাম রফিক, শান্তি চাকী, গোপাল চন্দ্র, তোফাজ্জল হোসেন মহরম, উত্তম কুমার অধিকারী গোপাল ও পাগলা দরবেশ।
গুলিবিদ্ধ একজন আরেকজনের ওপর ঢলে পড়েন। নিমিষেই ঝরে যায় তরতাজা প্রাণ। সেদিন মধ্যরাতের এই নির্মমতা মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর রংপুরে প্রথম গণহত্যার ঘটনা। হায়েনার দলের এই হত্যাযজ্ঞে গুলিবিদ্ধ মানুষের স্তূপ থেকে প্রাণে বেঁচে যান একজন। তিনি ছিলেন তাজহাটের দীনেশ চন্দ্র ভৌমিক (মন্টু ডাক্তার)। তার পায়ে গুলি লাগে। মারা গেছেন ভেবে হানাদাররা চলে গেলে লাশের স্তূপ থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন মন্টু ডাক্তার।