চীনে লকডাউনের প্রভাব দেশের পোশাক খাতে
চীন থেকে স্যাম্পল এবং ডকুমেন্টস আসার ধীরগতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাংলাদেশের গার্মেন্ট মালিকরা। আগে যে স্যাম্পল বা ডকুমেন্ট চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে কারখানায় এসে পৌঁছাত তা পেতে এখন ১৫ থেকে ২০ দিনের বেশি সময় লাগছে। ফলে কারখানার উৎপাদনে সমস্যার পাশাপাশি সময়মতো পণ্য পাঠাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চীনে নতুন করে করোনা সংক্রমণে লকডাউন দেওয়ার পাশাপাশি এইচএস কোড জটিলতায় এ সমস্যা বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
গার্মেন্ট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাব কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ক্রয়াদেশ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। কাজের এই বাড়তি চাপ মূলত সঠিক সময়ে অর্ডার শিপমেন্ট নিয়ে। কিন্তু যথাসময়ে শিপমেন্ট নিয়েও নতুন করে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। গার্মেন্টশিল্পে কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি চীনের ওপর নির্ভরশীল। তৈরি পোশাকপণ্য তৈরির ক্ষেত্রে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আসে চীন থেকে। সেখানে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে তার প্রভাব পড়ে এখানকার গার্মেন্টশিল্পে। বিশেষ করে চীন থেকে স্যাম্পল ও ডকুমেন্ট আসতে সময় লাগছে বেশি। কারখানায় তৈরি পোশাকে কোন কাপড়, সুতা এবং অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার হবে তার স্যাম্পল যেমন চীন থেকে আনতে হয়, তেমনি পণ্য আমদানির ডকুমেন্টস আসে চীন থেকেই।
জানতে চাইলে কালুরঘাট শিল্প এলাকার মোস্তফা গার্মেন্ট লিমিটেডের এমডি তাইমুর রহমান বলেন, ‘আগে চীন থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে যেকোনো ডকুমেন্ট চলে আসত। ইদানীং সেই স্যাম্পল পেতে ১০-১২ দিন লেগে যাচ্ছে। এমনও হয়েছে আমার একটা বোতাম আসতে ১৫ দিন লেগে গেছে। সমস্যাটা হলো, এই সামান্য বোতামের সঙ্গে পুরো একটি উৎপাদনপ্রক্রিয়া জড়িত। এটার সঙ্গে স্যাম্পল মেকিং জড়িত। সেই স্যাম্পল ইউএস বায়ারের কাছে পাঠাতে হবে, তাঁর অনুমোদন জড়িত। তাঁর অনুমোদন পেলে আমি বাল্ক উৎপাদনে যাব, সেটাও এখানে জড়িত। সর্বোপরি পুরো শিপমেন্ট জড়িত এখানে। ’
আগে চীনসহ তার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অন্তত পাঁচটি বিমান আসত গার্মেন্টের স্যাম্পল ও ডকুমেন্ট নিয়ে। কিন্তু চীনে নতুন করে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে লকডাউন। এতে ফ্লাইট আসার পরিমাণ একেবারে কমে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে দেশের গার্মেন্টশিল্প।
এ নিয়ে শঙ্কার কথা বলতে গিয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘কভিডের পর থেকে চীনসহ বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ অনেক সংকুচিত হয়ে গেছে। চীন থেকে হংকং হয়ে আগে পাঁচ-সাতটি ফ্লাইট আসত। এখন সারা দিনে একটি ফ্লাইট আসে। সে কারণে চীন থেকে বিমানের কার্গোতে স্যাম্পল আসা কমে গেছে। এ ছাড়া চীনে সম্প্রতি আবার লকডাউন শুরু হয়েছে। এসব কারণে আমরা আগের মতো সহজে স্যাম্পল পাই না। এ কারণে প্রডাক্ট ডেভেলপ করতে যেমন সময় লাগে, তেমনি স্যাম্পল যদি অনুমোদন না পায় সে ক্ষেত্রে আমরা উৎপাদনে যেতে পারি না। ’