বিচার চাই না, একটি কথাই আমাদের দাঁড় করিয়েছে কঠিন বাস্তবতায়
'বিচার চাই না। শুধু মেয়ের লাশ আমাকে পৌঁছে দিলেই হলো। কার শাস্তি চাইব? বিচার নাই, বিচার কার কাছে চাইব?'
ঢাকার শাহজাহানপুরে গুলিতে নিহত কলেজছাত্রী প্রীতির বাবার কথা এগুলো। গত ২৪ মার্চ রাতে দুর্বৃত্তের করা গুলির ভুল নিশানা হন প্রীতি। যার পিতার এমন বাক্য আমাদের এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। অবশ্য গুলির মূল নিশানা যাকে করা হয়েছিল সেও নিহত হয়েছেন। সে ব্যাপারে কথা না হয় নাই বললাম, অনেককিছুই বলতে লিখিত ও অলিখিত মানা বলে।
আজ যখন লিখছি তখন মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হচ্ছে। একটি স্বাধীন দেশের ৫০ বছর পার হওয়ার পর একজন বাবা যখন মেয়ের লাশের অপেক্ষায় মর্গের সামনে থেকে এমন কথা বলেন, 'বিচার নাই, কার কাছে চাইব', যা প্রথম আলো খবরের শিরোনাম করেছে। তখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে শোকের ছায়া পড়ে। সবকিছু অর্থহীন হয়ে ওঠে।
আমার ছেলেও নিহত হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মী ফাগুন রেজা। সেও খুনের শিকার। তিন বছর হয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি না, তাকে কেন খুন করা হলো। যেমন জানেন না গুলিতে নিহত প্রীতির বাবা। আমরা আসলে কিছুই জানি না। জানতে দেয়া হয় না। না জানাটা দোষের নয়, কিন্তু জানতে না দেয়াটা অপরাধ।
প্রীতি ছিলো ভুল নিশানার শিকার আগেই বলেছি। মূল নিশানা ছিলেন শাসক দলের নেতা টিপু। নিহত টিপুও শাসক দলের যুব সংগঠনের আরেক নেতা হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। অবশ্য তিনি সেই মামলা থেকে অব্যাহতিও পেয়েছিলেন। স্বাধীনতা দিবসে খবরের কাগজে আরেকটি খুনের খবর রয়েছে। যশোরে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে খুন হয়েছে শাসক দলের এক কর্মী। খবর বলছে, নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে এই খুন। ঢাকার শাহজাহানপুরের ঘটনাও অনেকে এভাবেই ব্যাখ্যা করছেন। এটা শুধু শাসক দলের সমস্যা নয়, সব রাজনৈতিক দলেই এমনটা ঘটে, ঘটে এসেছে। কিন্তু এই ঘটনা তখনই নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়ায় যখন ভুল নিশানায় সাধারণ মানুষ খুন হন। রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা দলের প্রতিনিধি আর সাধারণ মানুষ দেশের প্রতিনিধি। অন্তত গণতন্ত্রের সংজ্ঞা তাই বলে। ভোটের ব্যাখ্যাতেও সে কথাই প্রতিফলিত হয়। সুতরাং রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যু রাজনৈতিক, দলীয় সমস্যা। কিন্তু সাধারণ মানুষের মৃত্যু দেশজ, দেশের সমস্যা। আর দেশ যখন সমস্যায় পড়ে তখন রাজনীতির মৃত্যু ঘটে। ভুল রাজনীতির কারণে রাষ্ট্রব্যবস্থাও ব্যর্থ হয়।