কতটা এগিয়েছে দেশ
আজ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস। দেখতে দেখতে ৫০-৫১ বছর কেটে গেল। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই পাঁচ দশকের বেশি সময়ে আমাদের অর্জন কী, অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে আছে কি কোনো বর্জনীয় দিক? বিশাল আলোচনার বিষয়।
কোথায় শুরু হবে, কোথায় শেষ হবে সেটাই বিবেচ্য। সামনে আমাদের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট। ‘ব্যবসাবান্ধব’ ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট শেষ হতে আর মাত্র মাস তিনেক বাকি।
অতএব, বাজেট দিয়েই শুরু করা যাক। স্বাধীনতার পর অর্থমন্ত্রী হলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তখন বাজেট করা ছিল এক সুকঠিন বিষয়। অর্থমন্ত্রীকে কাগজপত্র নিয়ে আমলাসহ যেতে হতো ‘প্যারিস কনসোর্টিয়াম’ সভায়। সেই ছবি কাগজে ছাপা হয়েছে বছরের পর বছর। সভা সাহায্যদাতাদের সঙ্গে। তাদের অঙ্গীকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করতে হতো আমাদের বাজেট। বাজেট ছিল সাহায্য-সহযোগিতানির্ভর।
এসব নিয়ে সাহায্যদাতাদের কত প্রশ্ন! দেখা যাচ্ছে, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেটের ৭০-৮০ শতাংশই ছিল বিদেশি সাহায্যনির্ভর। ওই বছরের একটি খবরানুযায়ী বিদেশি সহায়তা এসেছিল মোটামুটি ৫৫ কোটি ডলার। খাদ্য সহায়তা লাগত। ঋণ ছিল, গ্র্যান্টসও ছিল। আর এখন খাদ্য সহায়তা বলতে গেলে নেই। বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরতা বিপুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।
এ কারণে শিরদাঁড়া উঁচু করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে অগ্রাহ্য করে সারে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সাহায্য ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে। এখন অর্থমন্ত্রীকে প্রতি এপ্রিল মাসে সাহায্যদাতাদের সভায় যেতে হয় না, জবাবদিহিতা করতে হয় না। বাজেটের আকার বেড়ে হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার উপরে। অথচ ১৯৭২-৭৩ সালে বাজেটের পরিমাণ ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা।
ছোট্ট অর্থনীতির বিপরীতে এখন আমাদের জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৩৬ লাখ কোটি টাকায়। স্বাধীনতার পর এ সময় পর্যন্ত আমাদের রাজস্ব আয় বেড়েছে ১৫০০ গুণেরও বেশি। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে আমাদের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৭০ কোটি টাকার মতো। খাদ্যে ঘাটতি ছিল। এখন গম কিছুটা আমদানি করতে হলেও চালে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাল ও সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয়। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় এবং গোল আলু উৎপাদনে সপ্তম।
বৈদেশিক সাহায্যনির্ভরতা হ্রাস, বাজেটের আকার বৃদ্ধি, খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ইত্যাদি সূচক ছাড়াও আরও অনেক সূচক আছে, যার দ্বারা ৫০-৫১ বছরে অর্জিত আমাদের অর্থনৈতিক শক্তি বোঝা যায়। এর মধ্যে আছে মাথাপিছু আয়, রপ্তানি আয়, আমদানি ব্যয়, কলকারখানার সংখ্যা, দারিদ্র্যবিমোচন, পোশাক রপ্তানি, রেমিট্যান্স আয়, গড় আয়ু, খাদ্যশস্য উৎপাদন, টাকার ক্রয়ক্ষমতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, প্রাথমিক শিক্ষা, পয়ঃব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা। বলাবাহুল্য, এসব ক্ষেত্রের প্রায় সবকটিতেই আমাদের সাফল্য অসামান্য।