মার্কিন চাপের কাছে মাথা নত করা যাবে না
রীতিমতো একটা বিভ্রান্তির মধ্যে আছি। বাংলাদেশে আমার যেসব বন্ধু প্রচণ্ড মার্কিনবিরোধী ছিলেন, এখন দেখছি তারা সবাই একটা মার্কিন ধমকেই শেখ হাসিনার মাথা নত করা উচিত বলে ভাবছেন। আমি মনে করি, তার মাথা নত করা উচিত হবে না। হাসিনা সরকারের শাসনে দেশের বেশিরভাগ মানুষ যে খুশি নয়, তা আমি জানি, বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। শেখ হাসিনার দেশপ্রেমে আমি অবিশ্বাস করি না। কিন্তু তিনি এখন একেবারেই একা। তার চারপাশে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশই লুটেরা কোম্পানির সদস্য। তাই শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ চালাতে চান, সেভাবে চালাতে পারছেন না। আমিও দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছি। কিন্তু সরকার নয়, বাংলাদেশের মূল ভিত্তির ওপর যখন আঘাত আসে, তখন তাকে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকে না।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকা দাঁড়িয়েছে। এটা যে হবে, এ সম্পর্কে আমি আগেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলাম। শেখ হাসিনা গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে হিলারি ক্লিনটনের নির্দেশ মানতে না চাওয়ায় হিলারি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। হিলারি তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামা হাসিনাবিরোধী কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে না চাওয়ায় হিলারি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বড় একটা কিছু করে উঠতে পারেননি। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের ব্যাপারে খুব একটা নজর দেননি। ডেমোক্রেটিক পার্টি আবার ক্ষমতায় আসায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে হিলারি ক্লিনটনের সমর্থকরা আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মানবতার ধুয়া তুলে এখন তারা হাসিনা সরকারকে জব্দ করার জন্য মাঠে নেমেছে। এরা হলো হাসিনা সরকারের এক নম্বর শত্রু। এদের সঙ্গে ড. ইউনূস এখনো আছে।
দ্বিতীয় শত্রু বিএনপি-জামায়াত এবং সুশীল সমাজের একটি অংশ। এতদিন তারা সরকারবিরোধী কঠোর সমালোচনা চালিয়েও সফল হতে পারেনি। এখন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সহযোগিতা পাওয়ায় তারাও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকেও অঢেল টাকা আসছে। ওই টাকায় বাংলাদেশের কিছু সুশীলকে যেমন কেনা গেছে, তেমনি কেনা গেছে বিদেশের কিছু সুশীলকেও। তাদের দ্বারা বই লেখানো হচ্ছে, নতুন নতুন টেলিভিশন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, সারা পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন ভাষায় হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে। এটা যদি কেবল হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা হতো, তাহলে আমার কিছু বলার থাকত না। কিন্তু এ আঘাত শুধু হাসিনা সরকারের ওপর নয়, এ আঘাত এসেছে অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী ভিত্তির ওপর। বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে হাসিনা সরকারের পতন হলে ক্ষমতায় আসবে বিএনপি-জামায়াত। দেশে কী বিভীষিকা সৃষ্টি হবে, তা কল্পনা করাও যায় না। তাই কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ মার্কিন ও বিএনপি-জামায়াতের প্রচারণার সাফল্য কামনা করতে পারে না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- নতি স্বীকার
- মাথা নত
- মার্কিন চাপ