একজন মাহবুবুল হক শাকিল ও রাতের এপিটাফের গল্প
“আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি, বাবাকে আপনি। আমাদের মা গরিব প্রজার মতো দাঁড়াত বাবার সামনে, কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ করে উঠতে পারত না। আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাত যে মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনোদিন মনেই হয়নি। আমাদের মা আমাদের থেকে বড় ছিল, কিন্তু ছিল আমাদের সমান। আমাদের মা ছিল আমাদের শ্রেণির, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের।” ‘সামদাদো’র মোহনীয় আলোয় মিড ভলিউমে ধ্বনিত হচ্ছে হুমায়ুন আজাদের কবিতা।
আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মুস্তাফার জলদগম্ভীর কণ্ঠে আচ্ছন্ন আমরা সবাই। শাকিল বুঁদ হয়ে শুনছে। তন্ময় হয়ে কণ্ঠ মেলাচ্ছে কবিতার সাথে। “আমাদের মা ছিল অশ্রুবিন্দু দিনরাত টলমল করত, আমাদের মা ছিল বনফুলের পাপড়ি, সারাদিন ঝরে ঝরে পড়ত, আমাদের মা ছিল ধানক্ষেত, সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকত।” শাকিল কণ্ঠ মেলাচ্ছে, আর আমি অবাক হয়ে দেখছি ওকে। ওর কবিতা ও গল্পের পাঠ ওরই কণ্ঠে শুনেছি আগে। গান শোনার অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
কিন্তু ভাব-যতি-স্বরপ্রয়োগের ব্যাকরণ মেনে আবৃত্তি এই প্রথম। মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম ওর ঋজু, গম্ভীর, সাবলীল উচ্চারণ। কবিতাকে কতখানি আত্মস্থ করলে ওরকম ধ্যানীর মতো নিমগ্ন হওয়া যায়! ভাবছিলাম। আর মাথায় খেলা করছিল নতুন ভাবনা, ওর এই ভালোবাসাকে কীভাবে মূর্ত করে তোলা যায় সৃষ্টিশীল কোনো কাজের মধ্য দিয়ে। শাকিল কবিতা লেখে। আধুনিক কবিতার এক নিপুণ কারিগরের নাম মাহবুবুল হক শাকিল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- স্মৃতিচারণা
- মাহবুবুল হক শাকিল