ফিরে দেখা
১. কানাডার অন্টারিওতে এক মুসলিম পরিবারের চার সদস্যকে এক লোক গাড়িচাপা দিয়ে মেরেছে। আমরা অনুমান করতে পারি লোকটির মুসলিমবিদ্বেষ ছিল প্রচন্ড। প্রায়ই শুনি মুসলিমদের ওপর হামলা হচ্ছে। মনে আছে টুইন টাওয়ারে জঙ্গি হামলার পর পাগড়ি-পরা শিখদের মুসলমান ভেবে গুলি করে হত্যা করত আমেরিকানরা? মসজিদের ইমামকেও তো নিউইয়র্কের খোলা রাস্তায় হত্যা করেছে এক লোক। কিছুদিন মসজিদে গিয়ে চেচনিয়ার দুই ভাই বোস্টন ম্যারাথনে প্রেসার কুকার বোমা রেখে এসেছিল মনে আছে? মসজিদগুলোয় কী হয় জানার জন্য সরকার পক্ষ থেকে এখন গোয়েন্দা নিযুক্ত করা হয়েছে। মুসলিমবিদ্বেষ আগুনের মতো পশ্চিমা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। নিউজিল্যান্ডে মসজিদের ভিতর ঢুকে এক লোক কত মুসলমানকে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেললো। সভ্য এবং উন্নত দেশে সরকার থেকে অভিবাসী মুসলমানদের ওপর আঘাত আসে না, কিন্তু সাধারণ মানুষ থেকে আসে। ওরা কেন এত ঘৃণা করে মুসলমানদের? এই প্রশ্নটির উত্তর বের করার দায়িত্ব মুসলমানদের। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় তো হিন্দুদের মন্দির, বৌদ্ধদের প্যাগোডা, এমনকি ইহুদিদের সিনেগগও আছে। কই, সেগুলোয় তো হামলা চালানো হয় না। বর্ণবাদী আক্রমণ হলে বাদামি রঙের সব অভিবাসীর ওপর আক্রমণ হতো, কিন্তু তা তো হয় না। বেছে বেছে শুধু মুসলমানদের ওপর হচ্ছে আক্রমণ। হিন্দুদের মন্দিরে তো আড়ি পাতা হয় না, বৌদ্ধদের প্যাগোডায় হয় না। শুধু মসজিদকেই কেন অন্য চোখে দেখে পশ্চিমা জগতের মানুষ, কেন মুসলমানদেরই বেছে বেছে ঘৃণা করে? কেন বোমা ফেলতে যায় ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তানের ওপর? ভাবতে হবে বৈকি। ভাবতে হবে এই ঘৃণা মুসলমানরা কবে থেকে অর্জন করছে। ইউরোপের অনেক দেশে, এমনকি শ্রীলঙ্কাতেও বোরকা নিষিদ্ধ হয়েছে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কোনও ধর্মীয় পোশাক তো নিষিদ্ধ করা হয়নি! মিয়ানমার থেকে বিশাল এক মুসলমান জনগোষ্ঠীকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেসব দেশ রাজনৈতিক শরণার্থীদের সাদরে গ্রহণ করে, সেসব উদার দেশও রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে আশ্রয় দেয়নি, তার চেয়ে বরং বাংলাদেশকেই টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেছে যেন শরণার্থীদের দেখভাল করে। বিমানে ওঠার সময় কড়া নজর থাকে ইসলামী পোশাক পরা মুসলমান যুবকদের ওপর। হরে কৃষ্ণ নামাবালি গায়ে দিয়ে কট্টর হিন্দুরাও ওঠে বিমানে, কালো হ্যাট পরে কট্টর ইহুদিরাও ওঠে, কই ওদের দেখে তো আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয় না। কেন নির্দিষ্ট এক ধর্মের লোকদের দেখলে হয় মানুষ ভয়ে লুকোয় নয় হিংস্র হয়ে ওঠে। এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর যেদিন মুসলমানরা খুঁজে পাবে, সেদিন তারা আশা করছি, মানুষের ঘৃণা থেকে নিজেদের মুক্ত করার চেষ্টা করবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জঙ্গি
- মুসলমান
- সন্ত্রাসবাদ
- মুসলিমবিদ্বেষ