কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

হতাশায় লাখো চাকরি প্রত্যাশী

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৬ মে ২০২১, ০০:০০

গত বছর ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স সম্পন্ন করেন নাটোরের রাকিব হাসান। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রাকিবের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে একটি ভালো চাকরির ব্যবস্থা করে পরিবারের হাল ধরা। সন্তানকে নিয়ে একই স্বপ্ন বুনেছিলেন মা-বাবাও। কিন্তু করোনা মহামারি সব স্বপ্ন যেন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। যে সময় রাকিবের চাকরির প্রস্তুতি নেয়ার কথা, তখন সংকটে পড়ে বাধ্য হয়ে তাকে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ চালাতেন রাকিব। করোনার প্রকোপ শুরু হলে টিউশনি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহরে টিকতে না পেরে গ্রামে গিয়ে এখন কৃষিকাজ করছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যামিস্ট্রির ছাত্র হাসিদুল ইসলাম। ৩য় বর্ষে ওঠার পর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তিনি ৩য় বর্ষের ছাত্র। অথচ বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল অল্পদিনের মধ্যেই সন্তান পড়ালেখা শেষ করে ভালো চাকরি করে পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা দূর করবে। কিন্তু করোনায় সবকিছু থমকে আছে। কবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে? কবে একটি চাকরির ব্যবস্থা হবে? সেই চিন্তায় ঘুম আসে না তাদের। শুধু রাকিব কিংবা হাসিদুল নন, করোনাকালে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় এমন লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।রাজশাহীতে হাসিদুল টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ জোগাতেন। কিন্তু করোনার কারণে টিউশনিও বন্ধ। এ অবস্থায় আর্থিক সংকটে পড়েন তিনি। পরে রাকিবের মতো হাসিদুলও গ্রামে এসে কৃষিকাজ শুরু করেন। অন্যদিকে তাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটিও অনিশ্চিত ধরে নিয়েছেন তার বাবা মা। হাসিদুল বলেন, মা-বাবা ভাবেন যে, সব মনে হয় শেষই হয়ে গেল। আমাদের পড়ালেখা শেখাতে তাদের কষ্ট ও শ্রম সবই বোধ হয় বৃথা। মনে হয় আমাদের নিয়ে তারা আশা ছেড়েই দিয়েছেন। এ অবস্থায় আমরাও হতাশার মধ্যে আছি। কবে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে কবে চাকরি-বাকরি করবো, পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করবো? সেই চিন্তায় আমাদের চোখে ঘুম নেই।  রাকিব হাসান বলেন, যখন অনার্স শেষ হলো এর কিছুদিন পরেই করোনার প্রকোপ শুরু হয়। সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। টিউশনি করাতাম সেটাও বন্ধ। এ অবস্থায় বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে বাবার কাজে সহযোগিতা করি। পড়ালেখাও করি কিন্তু মনে হয় যেন পড়ালেখা করে আর কি করবো। চাকরির পরীক্ষা তো হচ্ছে না, প্রস্তুতি নিয়ে কী হবে। তবুও বাড়ির কাজের পাশাপাশি কিছুটা চাকরির প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করছি। কবে পরিস্থিতি ভালো হবে, কবে চাকরির পরীক্ষা হবে তার তো কোনো ঠিক নেই। মা বাবাও স্বপ্ন দেখেন যে ছেলে একটা ভালো চাকরি করবে। কিন্তু তারাও এখন দুশ্চিন্তায় থাকেন।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৪৬ ব্যাচের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী বলেন, করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ। কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে তার কোনো তথ্য আমরা জানি না। ঢাকায় টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ চালাতাম। সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে এসে দিনমজুরের কাজ করেছি। আমাদের এলাকায় সারা বছরই বিভিন্ন কৃষিকাজ চলে। তাই আর্থিক টানাপড়নের মধ্যে শিক্ষিত হয়েও কৃষিকাজ করতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি বলেন, পরিবার থেকে তো অনেক নিয়েছি। এখন তাদেরকে আমার কিছু দেয়ার কথা ছিল। এ বছর আমার অনার্স শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ এখনো ৩য় বর্ষেই পড়ে আছি। আমার মতো এমন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর একই সমস্যা। অনলাইনে ক্লাস চলে কিন্তু কোনো পরীক্ষা তো হয় না। তাহলে এই ক্লাস দিয়ে কি হবে? দেশে লকডাউনের মধ্যেও সবকিছু চলছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে দিন দিন আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। এমনিতেই অভাবের সংসারে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা। এভাবে পড়ালেখা বন্ধ থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন বলেন, এক বছর হলো ৩য় বর্ষেই পড়ে আছি। অনলাইনে ক্লাস হয়। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে পরীক্ষা নেয়ার কথা। কিন্তু কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে আর কবে পরীক্ষা হবে তাতো বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। আমাদের অভিভাবকরাও হতাশায় ভুগছেন। কারণ ঢাকায় থাকতে টিউশনি করে খরচ চালাতাম। কিন্তু এখন বাসায় বসে বসে খেতে হচ্ছে। কোনো কাজ নেই। আগে এলাকায় টিউশনি ছিল। এখন আমার মতো প্রচুর ছাত্র এলাকায় রয়েছে। এতো টিউশনি তো গ্রামে নেই। তাই কেউ কেউ বাধ্য হয়ে কৃষিকাজও করছেন। বেলাল আরো বলেন, এভাবে এক দুই বছর যদি বসে থাকতে হয় তাহলে আমাদের জন্য এটা বড় লস। কারণ চাকরির বয়স যা নির্ধারিত, তাইতো থাকবে। কবে শেষ করবো কবে চাকরির প্রস্তুতি নেবো তা নিয়ে আমাদের মধ্যে হতাশা কাজ করে।চাকরিপ্রার্থীদের বয়সে ছাড় দিতে যাচ্ছে সরকার: ওদিকে লকডাউনে চাকরির পরীক্ষা নিতে না পারায় গত বছরের মতো এ বছরও চাকরিপ্রার্থীদের বয়সে ছাড় দিতে যাচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শিগগিরই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে বয়সে ছাড় দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশনা দেবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, করোনায় বিধিনিষেধের কারণে চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে চেষ্টা করবো। বয়সটা যাতে ছাড় দেয়া হয় সেই পদক্ষেপ আমরা নেবো। তিনি বলেন, যে সময়টা তাদের লস হয়েছে, যখন যে সময় বিজ্ঞপ্তি হওয়ার কথা ছিল, আগের সময় ধরেই পরবর্তীকালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। গত বছর করোনা মহামারিতে সাধারণ ছুটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চাকরি প্রার্থীদের বয়সের ক্ষেত্রে ছাড় দেয় সরকার। ওই বছর ২৫শে মার্চ যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছিল তাদের পরবর্তী ৫ মাস পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু এ বছর কতদিন ছাড় দেয়া হবে তা নির্দিষ্ট করেননি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত