করোনা ভাইরাস টিকা: ঘাটতি মেটাতে জোর চেষ্টা বাংলাদেশের
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিবিসিকে বলেছেন, ভারতে কোভিড ভ্যাকসিন রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা সত্বেও সেখান থেকে টিকা আনার জন্য জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। এ জন্য ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত দিল্লিতে গেছেন।
এদিকে, সরকারি সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ডোজ টিকার জন্য প্রয়োজনীয় ডোজের চেয়ে ১২ লাখ ডোজ ঘাটতি রয়েছে। সরবরাহে অনিশ্চয়তার কারণে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া অব্যাহত রাখা হলেও এর হার কমে এসেছে।
চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসার কথা ছিল।
কিন্তু গত দুই মাসে কোন চালান আসেনি। কবে নাগাদ টিকার চালান আসতে পারে, তা কেউ বলতে পারছে না।
প্রায় ৭৬ লাখ ভ্যাকসিন দেওয়া শেষ
দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে বুধবার (২১ এপ্রিল) পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৭ লাখ ৬১ হাজার ৯০২ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৮ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৭ জন। অর্থাৎ দুই ডোজ মিলিয়ে ৭৫ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৯ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২১ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতর টিকাদান বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
তিন মাসের মধ্যে টিকা রফতানির ‘নিশ্চয়তা’ নেই: সিরাম সিইও
ভারতে আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে চলছে আক্রান্ত-মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙার ভয়ঙ্কর খেলা। এমন পরিস্থিতিতে গত মাসের শেষদিকে বিদেশে করোনার টিকা রফতানি স্থগিত করে ভারতীয় সরকার। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। তবে তাতে থোড়াই কেয়ার ভারতের। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনেওয়ালা।
বুধবার (২১ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, টিকা রফতানির কোনও নিশ্চয়তা নেই এবং এই মুহূর্তে আমরাও মনে করছি, এমন সংক্রমণের সময়ে আগামী দুই মাসের মধ্যে আমাদের রফতানির দিকে তাকানো উচিত হবে না।
করোনার ভ্যাকসিন না পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশ পড়েছে বড় সংকটে
করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশ থেকে এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিন না পাওয়ার প্রেক্ষাপটে করোনার ভ্যাকসিন না পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশ পড়েছে বড় সংকটে। এই অবস্থায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক উদ্যোগেও তেমন কোন ফললাভ হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন আড়াই লাখের মতো ডোজ করোনা ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তার বিপরীতে বাংলাদেশে মজুদ বা স্টক আছে ত্রিশ লাখ ডোজেরও কম। এই অবস্থায় বিদ্যমান মজুদে সর্বোচ্চ ১০/১২ দিন দেশে করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সম্ভব। এই স্বল্প সময়ে ভ্যাকসিন আনাসহ আনুসঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা কতটুকু সম্ভব তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। ঢাকায় স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এই মুহূর্তে আরো ৩ কোটি ডোজ এবং দীর্ঘ মেয়াদে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৪ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন বাংলাদেশের প্রয়োজন। ভারতের সেরাম ইন্সস্টিটিউটের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বাকি ২ কোটি ৩০ লাখ ডোজ আস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন পাওয়ার চেষ্টা চললেও ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে তা আদৌ পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
করোনা ভ্যাকসিন: নিতে হবে তৃতীয় ডোজ
করোনার ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা ফাইজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলবার্ট বুরলো বলেছেন, তাদের কোম্পানির তৈরি করা ভ্যাকসিনের ডোজ নেয়ার ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে তৃতীয় ডোজ নেয়া লাগতে পারে।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) এনডিটিভির খবরে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
বাংলাদেশকে আড়াই কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দিতে চায় রাশিয়া
বাংলাদেশকে আড়াই কোটি ডোজ ‘স্পুতনিক ভি’ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেনার অথবা স্থানীয়ভাবে তৈরিতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার ভ্যাকসিন সহায়তা প্রস্তাবের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রাশিয়া সরকার বাংলাদেশকে আড়াই কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনা অথবা একই পরিমাণ ভ্যাকসিন স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তারা ভ্যাকসিনগুলো সরবরাহ করতে চায়।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ ছাড়া রাশিয়া সরকার আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে কয়েক ধাপে আরও সাড়ে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনারও প্রস্তাব দিয়েছে।’