গরম বাতাস, নিঃস্ব হাওয়া, শূন্য থালা
চৈত্র যেন নিষ্ঠুরকাল। চৈত্র থেকে বৈশাখ হাওরের মানুষ দম বন্ধ করে থাকে। যেন কোনো আপদ-বিপদ হামলে না পড়ে হাওরে। কারণ এ সময়েই হাওরাঞ্চলে বোরো মৌসুমের ধান ঘরে তোলা হয়। আর বছর বছর এ সময়েই আসে পাহাড়ি ঢল কি শিলাবৃষ্টি। চুরমার হয়ে যায় দেশের ছয় ভাগের এক ভাগ অঞ্চলের স্বপ্নসাধ। 'বর্ষায় নাও আর হেমন্তে পাও'- এই ছিল হাওরের জীবনবিজ্ঞান। আফাল কি আফরমারার মতো আপদের সঙ্গে সখ্য ছিল হাওরবাসীর। কিন্তু দিনে দিনে বেড়েছে পাহাড়ি ঢল, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত, কোল্ড ইনজুরি আর নিত্যনতুন বালাইয়ের উপদ্রব। করোনাকালে স্থবির হয়ে থাকা দুনিয়ায় জান বাজি রেখে হাওরের কৃষক থেকেছে নির্ঘুম। এবার পাহাড়ি ঢল নয়, লকডাউনের ঠিক আগের দিন হাওরাঞ্চল ঝলসে গেছে এক 'আজব' তীব্র গরম বাতাসে। 'আজব' এ কারণেই যে, হাওরের প্রবীণজনের ভাষ্য- তারা কখনোই এমন আপদ দেখেননি। গরম বাতাসে ধানের জমিন নষ্ট হওয়ার কোনো স্মৃতি তাদের নেই। কয়েক ঘণ্টার তীব্র গরম হাওয়া ও ঝড়ে ধানগাছের শীষ নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও ধান চিটা হয়েছে। কোথাও পরাগায়ন হতে পারেনি। কোথাও ধানের শীষের রং কালো আবার কোথাও সাদা হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে ধানের। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলেই ক্ষতিটা বেশি হয়েছে। সুনামগঞ্জের শাল্লাতেও ক্ষতি হয়েছে বোরো জমিনের। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নানামুখী উৎপাদনভিত্তিক প্রণোদনা এবং নানা মেয়াদের কর্মসূচি গ্রহণ করা হোক। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঝুঁকি ও দুর্যোগ সামাল দিতে এখন থেকেই সামগ্রিক তৎপরতা জরুরি।