
চামড়ার বাজার শেষ
গতবারের মতো এবারও ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়ার দরে বিপর্যয় হয়েছে। কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে নামমাত্র দরে। অনেক জায়গায় বিক্রিই করা যায়নি। সরকার গত বছরের চেয়ে চামড়ার আরও কম দর নির্ধারণ করে দিলেও কোথাও এর অর্ধেক দামেও বেচাকেনা হয়নি। চামড়ার দরে বিপর্যয়ের কারণে গরিব, অসহায় মানুষ এবং মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানার ভাগ্যেও বিপর্যয় ঘটেছে। সরকারের নেওয়া উদ্যোগও কোনো কাজে আসেনি।
দেশের অনেক এলাকায় কোরবানিদাতারা বিক্রি করতে না পেরে চামড়া দান করে দিয়েছেন। চামড়া ফেলে দিয়েছেন অনেকে। সরাসরি ঢাকায় আনতে দীর্ঘ সময়ে চামড়া নষ্ট হয়েছে। ঈদের দিন প্রতিটি গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত লবণযুক্ত চামড়ার দরের সঙ্গে হিসাব করলে এই দর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাঁচ ভাগের এক ভাগ। আর ছাগলের চামড়ার কোনো দরই ছিল না। কোরবানিদাতারা বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন। বিনামূল্যে নেবে এমন লোকও পাওয়া যায়নি কিছু ক্ষেত্রে। গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে দর বিপর্যয় ও চামড়া নষ্ট হওয়া ঠেকাতে ঈদুল আজহার আগে চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা। এমনকি ট্যানারি মালিকদের অর্থের ঘাটতি মেটাতে বিশেষ ঋণ সুবিধাও অব্যাহত রাখতে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেস টু কেস ভিত্তিতে কাঁচা ও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর পরও চামড়ার দর পাওয়া যায়নি।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার সারাদেশে এক কোটি পশু কোরবানি হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন জানায়, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঢাকায় ২০ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে ৩০ শতাংশ কম চামড়া সংরক্ষণ হয়েছে। চামড়ার ন্যায্যমূল্য কেন পাওয়া গেল না, তার জন্য জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিল্প সচিব কে এম আলী আজম। তিনি বলেছেন, যদি কোথাও কোনো অপূর্ণতা থাকে, আমরা সেখান থেকে শিক্ষা নিতে চাই। গত রোববার সাভারে চামড়া শিল্পনগরীর সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করে এ মন্তব্য করেন তিনি।