জাল সনদে পদোন্নতি পেতে রুয়েটে সন্ত্রাস এক কর্মকর্তার

ঢাকা টাইমস প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২০, ১০:০৬

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উপসহকারী প্রোগ্রামার পদে জাল সনদে পদোন্নতি নিতে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে। সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এই কর্মকর্তা রুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রশাসনকে তটস্থ করে তুলেছেন। ভয়ভীতি দেখানো থেকে শুরু করে একজন সহকারী প্রকৌশলীর ওপর হামলা এবং রুয়েট শিক্ষকদের কোয়ার্টারে ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম আলিফ নামের ওয়ি কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে মতিহার থানায়।

আলিফের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, তিনি স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে একটি সশস্ত্র গ্রুপ পরিচালনা করেন। রুয়েটে আধিপত্য বিস্তার করতেই সশস্ত্র গ্রুপটি কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পদোন্নতি পেতে কিছুদিন ধরেই প্রশাসনের ওপর অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে আসছেন আলিফ। কিন্তু তার শিক্ষা সনদগুলো জাল হওয়ায় এবং তাতে গুরুতর অসঙ্গতি ধরা পড়ায় তাকে পদোন্নতি দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলিফ নিজের সশস্ত্র গ্রুপ নিয়ে রুয়েটকে অস্থিতিশীল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। অভিযোগে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ১০ জুন রুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে আলিফের নেতৃত্বে সশস্ত্র গ্রুপটি।

গুলিবর্ষণ করে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে ভীতির সৃষ্টি করা হয়। এর আগের দিন ৯ জুন রুয়েট প্রশাসন সহিংসতা ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে নেতৃত্বদানের অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। প্রতিশোধ নিতে আলিফ শিক্ষকদের আবাসিক ভবনে তাণ্ডব চালান। তারও আগে গত ৬ জুন আলিফ তার বাহিনী নিয়ে রুয়েটের সহকারী প্রকৌশলী তাপস সরকারের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. সেলিম হোসেন বাদী হয়ে আলিফ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় এজাহার দায়ের করেন। তবে পুলিশ এখনো আলিফ কিংবা তার সহযোগীদের কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলিফ ২০১২ সালের ৭ মার্চ রুয়েটে ‘ডাটা প্রসেসর’ নামে তৃতীয় শ্রেণির একটি পদে যোগ দেন। ২০০১ সালে ভোকেশানালে মাধ্যমিক এবং ২০১০ সালে এইচএসসিতে চার বছর মেয়াদি কম্পিউটার ডিপ্লোমা সনদে চাকরি নেন। তার কর্ম অভিজ্ঞতার সনদ অনুযায়ী, ২০০৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আলিফ ঢাকার দুটি ও রাজবাড়ীতে একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত চাকরি করেন। রুয়েট প্রশাসন সম্প্রতি তার কাছে জানতে চান- ঢাকায় চাকরি করার পরও বগুড়া ইসলামী ব্যাংক ইনস্টিটিউট থেকে চার বছর মেয়াদি নিয়মিত কোর্সে কীভাবে অধ্যায়ন করে সনদ নিয়েছেন তিনি। এর উত্তর আলিফ দিতে পারেননি। অন্যদিকে আলিফের বিএসসি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ এবং প্রশংসাপত্রেও ধরা পড়েছে ব্যাপক অসংগতি ও জালিয়াতির তথ্য।

আলিফ ২০১৩ সালে দারুল ইহসান নামের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সনদ জমা দেন রুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে। রুয়েট প্রশাসন তদন্ত করে দেখতে পান ২০১১ সালে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে চার বছরের নিয়মিত ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করেছেন আলিফ। কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান করে তার এই সনদটিও জাল এবং নিজেরই তৈরি করা বলে নিশ্চিত হন। রুয়েট প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আলিফের প্রশংসাপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ইংরেজিতে দারুল হাসান উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু দারুল হাসান নয়- দারুল ইহসান নামের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছিল যা সনদ বাণিজ্যের অভিযোগে উচ্চ আদালতের নির্দেশে এখন কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ রেখেছে। আলিফের প্রশংসাপত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের স্থলে উল্লেখ রয়েছে ফ্যাকালটি অব ন্যাচারাল সায়েন্স, যা ডিগ্রির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

এছাড়া সনদপত্রে উল্লেখ আছে, বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। আবার একই ডিগ্রির প্রশংসাপত্রে উল্লেখ রয়েছে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। মূলসনদ এবং প্রশংসাপত্রের তথ্যের বিস্তর গরমিল ধরা পড়ার পর থেকেই সেটি ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে ওঠেন আলিফ। রুয়েট প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, চাকরিরত কেউ উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে তাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। তাকে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছুটিও নিতে হয়। কিন্তু আলিফ উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার জন্য কোনো অনুমতি ও ছুটি নেননি। এ কারণে রুয়েটের তৎকালীন অতিরিক্ত পরিচালক ফয়সাল আরেফিন এসব সনদ আলিফের ব্যক্তিগত ফাইলে নথিভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর আলিফ ক্ষিপ্ত হয়ে ফয়সাল আরেফিনের দপ্তরে ব্যাপক ভাঙচুর চালান এবং তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। এরপরও ২০১৫ সালে রুয়েটের তৎকালীন কম্পট্রোলার নাজিম উদ্দিন আহমেদ আলিফের বিতর্কিত এসব সনদ নথিভুক্ত করার সুপারিশ করেন।

তৎকালীন রুয়েট প্রশাসন ২০১৫ সালের ১০ মে দ্রুততার সঙ্গে উপসহকারী প্রোগ্রামার পদ খালি না থাকলেও সহকারী প্রোগ্রামার পদের বিপরীতে তার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি (স্মারক নং-৪৪২৬) প্রকাশ করে। আলিফ ওই বছরেরই ৩০ মে উপসহকারী প্রোগ্রামার পদে আবেদন করেন। মাত্র এক মাসের মধ্যে তৎকালীন প্রশাসন আলিফের নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করে। ৩০ জুন উপসহকারী প্রোগ্রামার পদে তিনি যোগ দেন। এ ছাড়া একই দিনে নিয়ম বহির্ভূতভাবে আলিফ কম্পিউটার অপারেটর পদেও যোগদান করেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও