শুধু টাকার জোরেই...

প্রথম আলো প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২০, ০৮:৩৯

শুধু টাকার জোরে সস্ত্রীক সাংসদ হয়েছেন কুয়েতে মানব পাচারে অভিযুক্ত মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম (পাপুল)। ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়ে প্রথমে নিজে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের (রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সদরের আংশিক) সাংসদ হন। পরে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও একইভাবে সংরক্ষিত আসনে সাংসদ বানান। এখন কুয়েতে আটক হওয়ার পর জানা যাচ্ছে, এই টাকার উৎস ভিসাবাণিজ্য ও মানব পাচার।

ইতিমধ্যে কুয়েত কর্তৃপক্ষ সে দেশের ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশি এই সাংসদের ১৩৮ কোটি টাকা জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। সে দেশ থেকে অন্য দেশেও তিনি অর্থ পাচার করেছেন বলে কর্তৃপক্ষের বরাতে কুয়েতি গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। তবে বিদেশে থাকা এসব অর্থসম্পদের কথা শহিদ ইসলাম ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় উল্লেখ করেননি।


এলাকায় খোঁজখবর করে জানা গেছে, এলাকার মানুষের কাছে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে শহিদ ইসলামের আকস্মিক প্রার্থী হওয়া এবং নির্বাচিত হওয়া ছিল পিলে চমকানোর মতো। যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচনের আগেই অনেকটা জয় নিশ্চিত করে ফেলেন। গত নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরিক এরশাদের জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দেয়। জাপার মনোনয়ন পান আগের বারের সাংসদ মোহাম্মদ নোমান। কিন্তু মনোনয়ন পাওয়ার পর নোমান নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান।


তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দর–কষাকষির একটা পর্যায়ে এইচ এম এরশাদ দলের মহাসচিব পদ থেকে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দায়িত্ব দেন মসিউর রহমানকে (রাঙ্গা)। দায়িত্ব ছাড়ার আগে রুহুল আমিন হাওলাদার লক্ষ্মীপুর-২ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে নোমানের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছিলেন। এরপর এমন কী ঘটেছিল যে দলীয় প্রার্থী নোমানকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে হয়েছিল? এ প্রশ্নের জবাবে মসিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘একদিন পাপুলকে (শহিদ ইসলাম) সঙ্গে নিয়ে নোমান এসে বলল, ভাই আমি নির্বাচন করব না। আমি জিততে পারব না, এটা পাপুলকে দিয়ে দেন। প্রার্থী যদি নির্বাচন করতে না চায়, তাহলে কী করার আছে?’

তবে জাপার উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, মহাসচিব পদে পরিবর্তনের পর আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বেইলি রোডের বাসায় একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জাপার প্রতিনিধির কাছে লক্ষ্মীপুর–২ আসন শহিদ ইসলামকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন এইচ টি ইমাম। এ কারণে জাপা আসনটি ধরে রাখেনি; আওয়ামী লীগও প্রার্থী দেয়নি। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনাকমিটি থেকে চিঠি দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদ ইসলামের পক্ষে কাজ করার জন্য দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের পক্ষে চিঠিটি পাঠান নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী সেলিম মাহমুদ। চিঠিতে বলা হয়, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান জোটের বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদ ইসলামের সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। যদিও বাস্তবে নোমান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। এ কারণে ব্যালটে প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ও দলীয় প্রতীক লাঙ্গল ছিল। তিনি মূলত ওই সময়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের আট দিন আগে ওই চিঠিটি পাঠানো হয় লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে। তাতে আরও বলা হয়, ‘আপনাদের জানা আছে যে শহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত নেতা ও সক্রিয় মাঠপর্যায়ের কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বৃহত্তর স্বার্থে এই আসনের বিজয় দলের পক্ষে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে শহিদ ইসলামকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে নির্বাচন কমিশনকৃত তাঁর প্রতীকে বিজয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি।’

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বললেন, ‘শহিদ ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী আমাদের লক্ষ্মীপুর জেলা, উপজেলা ও কোনো ইউনিয়ন কমিটির সদস্য পদেও নেই। তিনি মাঠপর্যায়ে দলীয় কোনো কাজও কখনো করেননি।’

তাহলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চিঠিতে কীভাবে শহিদ ইসলামকে দলের একজন নিবেদিত নেতা ও সক্রিয় মাঠপর্যায়ের কর্মী বলা হলো—এ প্রশ্নের জবাবে নূর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘হ্যাঁ, ওইভাবে একটা লেখা দেখেছি। ওইটা তো চিঠি যাঁরা ইস্যু করেছেন, তাঁরা বলতে পারবেন। ঊর্ধ্বতন ইউনিট যখন একটা কিছু দেয়, সে বিষয়ে আমাদের তো বলারও কিছু থাকে না।’

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ভোটের সময় লক্ষ্মীপুরে অনেকটা প্রকাশ্য আলোচনা ছিল যে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে নোমানকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেন শহিদ। এ প্রক্রিয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা এবং আসনটির সাবেক দলীয় এক সাংসদ যুক্ত ছিলেন। নির্বাচনে প্রার্থী সরানো, ভোটের মাঠ নিয়ন্ত্রণ করা থেকে জয়ী হওয়া পর্যন্ত শহিদকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কয়েকজনকে সন্তুষ্ট করতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা ​দিয়ে।

লক্ষ্মীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি নির্বাচনের সময় শহিদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁর জানামতে, শহিদ ও তাঁর স্ত্রীর পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অর্ধশত কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। ওই নেতা জানান, মূলত শহিদ ও নোমানের মধ্যে সমঝোতার সমন্বয় করেন যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ আলী (খোকন)। তিনি ঢাকায় এ–সংক্রান্ত একাধিক বৈঠকেও ছিলেন। মোহাম্মদ আলী নির্বাচনী আসনের রায়পুর অংশের সমন্বয়ক ছিলেন।

তবে মোহাম্মদ আলী সমন্বয়ের কথা প্রথম আলোর কাছে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন লোক ছাড়া কি সমন্বয় হয়? যেখানে আওয়ামী লীগের অফিস থেকে চিঠি দিয়েছে, সেখানে আমি কে? আমি সমন্বয় করিনি, এটা এইচ টি ইমাম সাহেব করেছেন। তিনি আমাকে ওনার বাসায় ডেকে নেন। গিয়ে দেখি পাপুল (শহিদ ইসলাম) ও নোমান বসা। তাঁদের কথাবার্তায় বোঝা গেল, তাঁদের মধ্যে আগেই একধরনের সমঝোতা হয়েছে।’

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্য জানতে তাঁর দুটি মুঠোফোনে অনেকবার কল করেন এই প্রতিবেদক। পরে এসএমএস (খুদে বার্তা) পাঠানো হয়। এরপর গত সোমবার (২২ জুন) পাল্টা এসএমএস করে জানতে চান, তিনি এই প্রতিবেদককে চেনেন কি না; কেন কথা বলতে চাচ্ছি। এরপর তাঁকে এসএমএস করে গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র সাংসদ শহিদ ইসলামের আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া, জাপার কাছে তাঁর জন্য আসনটি চাওয়া, শহিদের ঘাটে ঘাটে অনেক টাকা খরচের বিষয়টি জানানো হয়। এরপর এইচ টি ইমাম এসএমএসে জবাব দেন, ‘ওই লোকটি (শহিদ) সম্পর্কে অনেক আলোচনা ও গুজব আছে। আমি জানি না কোনটা গ্রহণ করব।’

২০১৮ সালে হঠাৎ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শহিদ ইসলামের সাংসদ নির্বাচিত হওয়া ছিল এলাকার মানুষের জন্য বিরাট বিস্ময়।

লক্ষ্মীপুরের যে আসনটিতে শহিদ ইসলাম সাংসদ হয়েছেন, সেটা আগে থেকে বিএনপির ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় নবাগত শহিদ ইসলাম ২ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৪ ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়া পান ২৮ হাজার ৬৫ ভোট। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে গা ঢাকা দেন জাপার প্রার্থী নোমান। তখন এলাকায় প্রকাশ্যে আলোচনা ছিল, ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে নোমানকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেন শহিদ। যদিও নোমান দাবি করেন, জোটের মনোনয়ন পাওয়ার পর যখন তিনি দেখতে পেলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাঁকে সহযোগিতা করছে না, তখন তিনি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

রায়পুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খোকন অবশ্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমপি হওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন শহিদ ইসলাম। এমপি হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আমাদের আর বনিবনা হচ্ছে না।’

স্ত্রীকেও যেভাবে সাংসদ বানান

নিজে স্বতন্ত্র সাংসদ হওয়ার পর একইভাবে সংরক্ষিত নারী আসন থেকে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে সাংসদ বানান। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত ৫০টি আসন দলীয় নির্বাচিত সাংসদ অনুপাতে বণ্টন হয়। সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ৪৩ জন, জাতীয় পার্টির ৪ জন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১ জন সাংসদ পান। একাদশ সংসদে শহিদ ইসলামসহ চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন। তখন স্ত্রীকে সাংসদ বানাতে শহিদ অন্য তিন স্বতন্ত্র সাংসদের সঙ্গে সমঝোতা করেন। এর জন্য স্বতন্ত্র সাংসদদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সন্তুষ্ট করতে হয় বলে শহিদ ইসলামের ঘনিষ্ঠ লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগের একজন নেতা প্রথম আলোকে জানান।

অবশ্য ‘সন্তুষ্ট করার মতো কিছু হয়নি’ বলে দাবি করেন বগুড়া-৭ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সাংসদ রেজাউল করিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিক্সন চৌধুরী (স্বতন্ত্র সাংসদ) এসে বললেন, আমরা স্বতন্ত্র সদস্যরা একজন মহিলা সদস্য পাব। আপনি এটাতে স্বাক্ষর করেন। আমি নতুন সংসদে এসেছি, এ সম্পর্কে কিছু বুঝি না। আমি বললাম চিফ হুইপের সঙ্গে কথা বলে আসি। তিনিও বললেন স্বাক্ষর করে দিতে, আমি দিয়ে দিলাম।’

মজিবর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী)ফরিদপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ।

শহিদ ইসলামের স্ত্রীকে সংরক্ষিত আসনের সাংসদ করার বিষয়ে রেজাউল করিমের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নিক্সন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা চিফ হুইপেরও কাজ না, আমারও কাজ না। উনি স্বাক্ষর করেছেন, ওনার মতো। আর্থিক লেনদেন থাকলে সেটা তদন্ত করে দেখেন। আর লেনদেনের কথা বলতে গেলে তো যারা নিউজ করে, তাদের ব্যাপারেও তো লেনদেনের কথা আছে।’

তাহলে শহিদ ইসলামের স্ত্রী আপনার সমর্থন পেলেন কীভাবে—এ প্রশ্নের জবাবে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘ওনার বউ তো (সেলিনা ইসলাম) রাজনৈতিক নেত্রী। কুমিল্লার কোনো একটা আওয়ামী লীগের সঙ্গে উনি জড়িত।তাই তাঁকে সমর্থন করেছি। আরেকজন যে আছেন, তিনি তো জামায়াত-বিএনপি ঘরানার। তাঁকে তো আমরা সমর্থন দিতে পারি না। আসলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পাপুল (শহিদ ইসলাম) সাহেবের কী সম্পর্ক, সেটা একটু খুঁটায়ে দেখেন, আমাদের জিজ্ঞেস করে লাভ কী?’

নিক্সন চৌধুরীর বড় ভাই নূর-ই আলম চৌধুরী জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ। সেলিনা ইসলামের প্রার্থিতা সমর্থন করে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে স্বাক্ষর দিতে বলার বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ হুইপ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আমার কোনো বিষয় ছিল না। তা ছাড়া ওনাদের আমি চিনতামও না কোনো দিন।’

শহিদ ইসলাম মানব পাচার ও মুদ্রা পাচারে অভিযুক্ত হয়ে বিদেশে আটক হয়ে জাতীয় সংসদের মর্যাদাহানি করেছেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে চিফ হুইপ বলেন, ‘এটা তদন্তের আগে বলব কী করে, চার্জশিটের পরে বোঝা যাবে। এখন পর্যন্ত বিষয়টি মাত্র অভিযোগ। তদন্ত চলছে, আমরা একটু দেখি রিপোর্ট কী আসে।’

দেশ–বিদেশে যত সম্পদ

২০১৮ সালে শহিদ ইসলামের নির্বাচনী হলফনামায় দেখা যায়, ওই সময়েই তিনি ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম সোনাদানাসহ প্রায় শত কোটি টাকার অর্থসম্পদের মালিক। এর মধ্যে কেবল ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত থেকেই শহিদের বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ১৭৪ টাকা। আর স্ত্রী সেলিনা ব্যাংকের আমানত থেকে বছরে সুদ পান ১ কোটি ৪৫ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৬ টাকা। হলফনামায় শহিদ উল্লেখ করেছেন, তাঁর নামে ৩৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা আর স্ত্রীর নামে ৫২ কোটি ৯৮ লাখ টাকার অর্থসম্পদ আছে। এর বাইরে মেয়ে ওয়াফা ইসলামের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে, যার মূল্য ১ কোটি ২৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

সাংসদ দম্পতির ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, প্রদর্শিত এই অর্থসম্পদের বাইরেও শহিদ ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলামের বিপুল অর্থসম্পদ আছে দেশ-বিদেশে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরই মধ্যে শহিদের স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য সাংসদ শহিদের স্ত্রী সাংসদ সেলিনা ইসলামসহ পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। দুদকের নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে সেলিনা ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

শহিদ ইসলামকে ৬ জুন কুয়েতের সিআইডির (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট) আটক করে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেশটির পাবলিক প্রসিকিউশন শহিদ ও তাঁর প্রতিষ্ঠান কুয়েতিয়ামারাফিয়ার ব্যাংক হিসাবে থাকা ৫০ লাখ দিনারের (১৩৮ কোটি টাকা) জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। এ খবর ২০ জুন কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস ও ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস–এ বের হয়েছে। এর আগে সে দেশের তদন্ত কর্মকর্তাদের বরাতে কুয়েতের সংবাদপত্রে খবর বের হয়েছে যে শহিদ ইসলাম ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করেছেন, এমন তথ্যও তাঁরা পাচ্ছেন।

কিন্তু বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় শহিদ ইসলাম দেশে ও বিদেশে তাঁর ব্যবসা আছে বলে উল্লেখ করলেও তাতে বিদেশে অর্থসম্পদের কোনো হিসাব দেননি।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলফনামায় দেশে ও বিদেশে সম্পদের কোনো বিভাজন নেই। সুতরাং সব সম্পদই অন্তর্ভুক্ত হবে। এখানে সাংসদ সুস্পষ্টভাবে তথ্য গোপন করেছেন।’

বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, সাংসদ শহিদ ইসলাম জাতীয় সংসদের মর্যাদাহানি করেছেন। এর বিরুদ্ধে সংবিধানের ৭৮ ধারা (সংসদ ও সংসদ সদস্যদের বিশেষ অধিকার) অনুযায়ী সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও