আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাঁচ বছর কাটিয়ে দিলেন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান লাউ ডগার মতো লিকলিকে শরীর। কথা বলেন গড়নের তুলনায়ও কম। মানে স্বল্পভাষী। রোলস রয়েসের মতো মসৃণ রান আপ। নজর কেড়ে নেওয়া বোলিং অ্যাকশন। ভালো জায়গায় বল ফেলার স দু-রকম অফ কাটার মিশিয়ে হয়ে উঠেছিলেন বিষাক্ত।
ছোবল মারলে 'মৃত্যু' প্রায় অনিবার্য! মোস্তাফিজুর রহমানের কথা বলছিলাম। জাতীয় দলে অভিষেকে ৫ উইকেট নিয়ে সোনায় মোড়ানো অভিষেক তাঁর। হীরের দ্যূতি বেরোল পরের ম্যাচেই ৬ উইকেট নিয়ে। তাতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ভারতকে সিরিজে হারায় ১৯ বছর বয়সী মোস্তাফিজের হাত ধরে। রাতারাতি তারকা বনে গেলেন সাতক্ষীরার ছেলেটি।
স্বপ্নের মতো শুরু বলতে যা বোঝায় সেটাই পেয়েছিলেন বাঁহাতি এ পেসার। তখন থেকেই বাড়তে থাকে প্রত্যাশা।এক সময় কি তা বোঝা হয়ে দাঁড়াল? মোস্তাফিজের স্বপ্নের মতো শুরু-ই কি পরে তাঁর চাপে পড়ার কারণ? অন্তত এটুকু বলা যায়, তাঁর শুরুর দিকের পারফরম্যান্সকেই মানদণ্ড হিসেবে ধরে নেওয়া হতো। এ দিয়ে বিচার করা হতো মোস্তাফিজকে। ম্যাচে তিনি হয়ে যান প্রধান প্রতিপক্ষ। আর তাই গত বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ২০ উইকেট নিয়ে চতুর্থ সেরা উইকেট শিকারি বোলার হয়েও মোস্তাফিজকে শুনতে হয়ে সমালোচনা।
অথচ কোন বাংলাদেশি বোলার এর আগে কোনো বিশ্বকাপে শীর্ষ বোলারদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পাননি। সাদা বলের ক্রিকেটে মোস্তাফিজ এখন বিশ্বের সেরা বোলারদের একজন। ওয়ানডেতে ৫৭ ইনিংসে ইতিমধ্যেই ১০৯ উইকেটের মালিক। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৪১ ইনিংসে নিয়েছেন ৫৮ উইকেট। সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতে নামের পাশে ১৪০ উইকেট। মোস্তাফিজের বয়স মাত্র ২৪। তাঁর সামনে পড়ে আছে পুরো ক্যারিয়ার। গত পাঁচ বছরে মোস্তাফিজের বোলিংয়ে বেশ বড় পরিবর্তন এসেছে। শুরুর দিকে গতি ছিল ১৩০ কিলোমিটারের আশপাশে। এক বছরের মাথায় মোস্তাফিজ ১৪০ কিলোমিটারের বল করা শুরু করেন। গতি বাড়ায় কাটারও হয় আরও বিষাক্ত।২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও আইপিএলে মোস্তাফিজের সিংহভাগ সাফল্য আসে কাটারে। কিন্তু ২০১৬ সালের আগস্টে কাঁধের অস্ত্রোপচারের পর তাঁর গতি ও কাটারের ধার কমে আসে। সুইং তো আগে থেকেই ছিল না। উইকেট নেওয়ার জন্য মোস্তাফিজকে নতুন উপায় বের করতে হতো। তখন নিজের বোলিংয়ে বাউন্সার যোগ করেন এই বাঁহাতি। বাঁহাতি অ্যাঙ্গেল, গতিময় বাউন্সার ও স্লোয়ার বাউন্সার দিয়ে ২০১৮-১৯ সালে প্রচুর উইকেট নেন মোস্তাফিজ। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সিরিজ জেতার নজির খুব কম। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ।
সিরিজ জেতায় মুখ্য ভূমিকা ছিল তাঁর। ২০১৮ সালে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের সেরা তিন পেসারদের মধ্যে ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে ছিলেন চতুর্থ সেরা ওয়ানডে পেসার। এখন পর্যন্ত তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা সময় বলতে ২০১৮-১৯ মৌসুমকে বেছে নিতে হবে।
গত দুই বছর তাঁর বেশিরভাগ উইকেটই এসেছে 'ডেথ ওভার'-এ। ২০১৮ এশিয়া কাপ ছাড়া কোন সিরিজে ধারাবাহিকভাবে নতুন বলে উইকেট পাননি তিনি। মূল কারণ মোস্তাফিজের সুইং নেই। সুইং না থাকায় নতুন বলে বোলিং করেননি বললেই চলে। বাঁহাতি পেসার হিসেবে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের ভেতরে সুইং করাতে পারলেই মোস্তাফিজ পরিণত হবেন পরিপূর্ণ বোলার - এই তথ্যের ভিত্তিতে গত কয়েক বছর কড়া সমালোচনা হয় তাঁর। সাদা বলের ক্রিকেটে বল সুইং করেই মোটে কয়েক ওভার।
নতুন বলে সুবিধাটা নিতে না পারলে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের থামানো কঠিন। ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার বড় কারণ ছিল নতুন বলের সুইং শুন্যতা। সুইং না থাকায় টেস্ট দলেও নিয়মিত নন মোস্তাফিজ। সম্প্রতি প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো টেস্টের ফেরার জন্য মোস্তাফিজকে সুইং শেখার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করছেন মোস্তাফিজ। ১০ ভাগ বল সুইং করে ভেতরে আনতে পারলেই ব্যাটসম্যানদের মনে দোটানা সৃষ্টি করতে পারবেন মোস্তাফিজ। লেংথ থেকে বেরিয়ে যাওয়া বলগুলো তখন হবে আরও কার্যকরী। সৃষ্টি হবে উইকেট নেওয়ার নতুন সুযোগ।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
We use cookies to ensure you get the best experience on our website.