ব্রিটেনে ডেক্সামেথাসোন দিয়ে করোনার চিকিৎসা শুরু
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান বলেছেন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রিকভারি ট্রায়ালের রিপোর্ট দেখে আশা জাগছে যে করোনা মোকাবিলায় জীবনদায়ী ওষুধ হতে পারে ডেক্সামিথাসোন। এরপরই বৃহস্পতিবার এই স্টেরয়েড ড্রাগকেই কোভিড চিকিৎসায় সার্বিকভাবে ব্যবহারে অনুমতি দিল ব্রিটেন সরকার। দেশের সব হাসপাতালেই করোনা রোগীদের ট্রিটমেন্টে ডেক্সামিথাসোন থেরাপি করতে পারবে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)। ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, এই ওষুধের গুণাগুন বহুবার পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয়েছে। সঙ্কটাপন্ন করোনা রোগী যাদের ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন, তাদের উপরেই প্রয়োগ করা হবে এই ওষুধ। ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসচিব ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, ডেক্সামিথাসোন ওষুধ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এর কার্যকারীতা আগেই প্রমাণিত। রোগীদের জন্যও এই ওষুধ নিরাপদ।
সার্বিকভাবে এর প্রয়োগ হলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচানো যাবে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, 'ব্রিটেনের গবেষকদের জন্য আমরা গর্বিত। বিশ্বে প্রথমবার করোনার রিকভারি ট্রায়ালে এত বড় সাফল্য পেল অক্সফোর্ড। এই প্রথম কোনও ওষুধ সঙ্কটাপন্ন কোভিড রোগীদের মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনল'। ১৯৭৭ সাল থেকে ডেক্সামিথাসোনকে ইমার্জেন্সি মেডিসিনের তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, জুভেনাইল আর্থাইটিস থেকে অ্যালার্জি, সোরিয়াসিস ও যেকোনো ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসায় এই কর্টিকোস্টেরয়েডের থেরাপি করেন চিকিৎসকরা। ক্যানসারের চিকিৎসাতেও ব্যবহার করা হয় এই ওষুধ। শরীরে প্লেটলেট বা অনুচক্রিকার সংখ্যা কমে গেলে যাকে বলে 'ইডিওপ্যাথিক থ্রম্বোসাইটোপেনিক পারপারা', সেই অবস্থাতে ৪০ মিলিগ্রাম ডোজে ডেক্সামিথাসোনের থেরাপি চলে।
ডেক্সামিথাসোনের ট্রায়ালের দায়িত্বে থাকা অক্সফোর্ডের মেডিসিন বিভাগের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ পিটার হার্বে জানিয়েছেন, এই ওষুধ দামেও সস্তা এবং পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। প্রতিদিন ৬ মিলিগ্রাম ডোজে এই ওষুধের থেরাপি চলছে। তাতেই ভাল দেখা গেছে। আপাতত সঙ্কটাপন্ন কোভিড রোগীদের উপরেই এই ওষুধ প্রয়োগ করা হবে। তেমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে। অধ্যাপক মার্টিন ল্যানড্রে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, কেউ যেন এই ওষুধ বাজার থেকে কিনে ঘরে মজুত করে না রাখেন।
যাদের করোনাভাইরাসের হালকা উপসর্গ দেখা দেবে, অর্থাৎ যাদের শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে চিকিৎসকের সাহায্যের প্রয়োজন হবে না, তাদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসোন কাজ করবে না। মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য ওষুধ নিয়ে ট্রায়াল চালানো হচ্ছিল। যেসব ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছিল তার মধ্যে ছিল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনও।এই ওষুধটির ওপর পরীক্ষা পরে বাতিল করে দেয়া হয়, কারণ এই ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় হার্টের সমস্যা এবং অন্য প্রাণনাশক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। আরেকটি ওষুধ রেমডেসিভির, যেটি অ্যান্টি-ভাইরাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় সেটি সেরে ওঠার সময় কিছুটা তরান্বিত করতে পারে বলে দেখা যাবার পর করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এই ওষুধের ব্যবহার ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ঢাকা টাইমস/১৮জুন/একে