রহস্যজনক অপতৎপরতায় মেতেছেন ববি হাজ্জাজ
ফের রহস্যজনক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের পুত্র ববি হাজ্জাজ। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে বিব্রত করার ‘মিশন’ নিয়ে তিনি অপপ্রচার চালাচ্ছেন। বাবার বিরুদ্ধে চলমান মামলাকে প্রভাবিত করতেই তার এমন অপতৎপরতা বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং এমপি-নেতাদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে করেছেন ববি হাজ্জাজ। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট ইউটিউব প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার পাশাপাশি তিনি অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এর আগেও তিনি একই কাজ করেছেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দেশকে অস্থিতিশীল করতেই রহস্যজনক মিশন বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।
সম্প্রতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়েছেন ববি। ৯ জুন ওই পেইজের এক পোস্টে সাম্প্রতিক একটি ঘটনার সঙ্গে সরকারকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে জড়িয়ে তিনি লেখেন, ‘সরকারি দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের যোগসাজশ ছাড়া এই দেশে এত বড় আকারে দুর্নীতি সম্ভব না, আর এরা তো সরাসরি সংসদেই পা দিয়ে রেখেছে। নৌকার মাঝিরাই যখন নৌকা ডুবায়!!!’
ধারণা করা হচ্ছে, এই পোস্টে ‘সরকারি দলের উচ্চ পর্যায়’ বলতে তিনি খোদ প্রধানমন্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
এছাড়া বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করেও ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দিয়েছেন দুর্নীতি, তথ্য গোপন এবং মানি লণ্ডারিংয়ের মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত মুসা বিন শমসেরের ছেলে ববি হাজ্জাজ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ববি লেখেন, ‘আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রীর জীবনী সম্বন্ধে আমার তেমন একটা ধারণা নাই। আমি আসলেই জানি না উনি কি সৎ না অসৎ উপায়ে উনার ব্যবসা শুরু করেছিলেন।’
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী যখন জনগণের মনে সাহস জোগাতে উৎসাহমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, তখন স্বীয় স্বার্থে তাদের সমালোচনায় মত্ত ববি হাজ্জাজ। মার্চ মাসের ২৪ তারিখের এক পোস্টে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং নৌ-পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন বলে সরাসরি অভিযোগ আনেন তিনি। তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তার নিজের কর্মে সততা ফিরিয়ে আনতে বলেন। তবে এসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি ববি হাজ্জাজ।
১ এপ্রিল ফেসবুকে ইউটিউবের একটি ভিডিও শেয়ার করেন ববি হাজ্জাজ। সেখানে তথ্যমন্ত্রী এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ব্যঙ্গ করে ‘অজ্ঞ’ আখ্যায়িত করা হয়।
অভিযোগ আছে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বিতর্কিত হওয়া ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে চলমান মামলাকে প্রভাবিত করতেই এসব পোস্ট করছেন পুত্র ববি হাজ্জাজ। দুর্নীতি, মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং অর্থ পাচার তথা মানি লন্ডারিংয়ের মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে মুসার বিরুদ্ধে।
এছাড়া অভিযোগ আছে, মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। এসব অভিযোগ থেকে সবার নজর অন্যত্র সরিয়ে নিতেই সরকারকে ‘বিব্রত’ করার মিশন নিয়ে ‘প্রোপাগান্ডা’ ছড়িয়ে যাচ্ছেন মুসা পুত্র ববি।
সরকার যখন দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করোনা মোকাবেলায় ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়েই সরকারকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আক্রমণের নীল নকশা আঁকেন ববি হাজ্জাজ।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ববি হাজ্জাজের কাছে স্পষ্ট কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমি দেশ বা সরকারবিরোধী কোনো স্ট্যাটাস দেইনি। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষিকার বিষয়ে বলেছি, তার বিরুদ্ধে পুলিশি অ্যাকশন না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই ব্যবস্থা নিতে পারতেন।’
অর্থমন্ত্রীর সততা নিয়ে নিজের মন্তব্য বিষয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, এক জায়গায় লিখেছি।’ এরপর তিনি প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করেন।
এদিকে ফেসবুক-ইউটিউবে আপত্তিকর এবং উস্কানিমূলক কনটেন্ট ছড়ানো দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, সাইবার স্পেসে আমরা সবসময় নজরদারি রাখছি। সাইবার জগতে বিভ্রান্তি, প্রোপাগান্ডা বা হেইট স্পিচ ছড়ালে, যেই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।