লর্ড ক্লাইভের মূর্তি নিয়ে নিজ শহরেই বিতর্ক: জাতীয় বীর নাকি সম্পদ লুন্ঠনকারী নিপীড়ক?
ইংল্যান্ডের ছোট্ট এক শহর শ্রুসবেরি। স্যাক্সন যুগে স্থাপিত শহরটির কেন্দ্রে এখনো চোখে পড়বে টিউডর যুগের কাঠের ঘরবাড়ি। শহরটি যারা ঘুরে দেখতে যান, তাদের কাছে অবশ্য দ্রষ্টব্য হিসেবে তুলে ধরা হয় শহরের দুই বিখ্যাত ব্যক্তির দুটি মূর্তি।
এর একজন বিশ্ববিখ্যাত ন্যাচারালিস্ট, বিবর্তনবাদের জনক, চার্লস ডারউইন। শহরের পাবলিক লাইব্রেরির বাইরে শোভা পাচ্ছে তার মূর্তি।
শ্রুসবেরি শহর কেন্দ্রের খোলা চত্বরে উঁচু বেদিতে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় মূর্তিটি, ব্রোঞ্জের তৈরি। গত কদিন ধরে এই শহরের মানুষ তীব্রভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এটি অপসারণের দাবি নিয়ে।
মূর্তিটি রবার্ট ক্লাইভের। ব্রিটেনে তার পরিচয় লর্ড ক্লাইভ অব ইন্ডিয়া নামে। তার স্মরণে কোন প্রকাশ্য স্থানে এটিই একমাত্র মূর্তি নয়।
ব্রিটিশ সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্র যে হোয়াইটহল, সেখানে ডাউনিং স্ট্রিটের পেছনে আর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের সামনে সগৌরবে দাঁড়িয়ে রবার্ট ক্লাইভের আরেকটি মূর্তি। দাবি উঠেছে এই মূর্তিটিও সেখান থেকে সরানোর।
যারা এই দাবি জানাচ্ছেন, তাদের মধ্যে সাধারণ মানুষ যেমন আছেন, তেমনি আছেন ব্রিটেনের অনেক নামকরা লেখক-ইতিহাসবিদ।
এদের একজন উইলিয়াম ডালরিম্পল। ‘হোয়াইট মুঘলস’ এবং ‘দ্য এনার্কি: দ্য রিলেন্টলেস রাইজ অব দ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ তার লেখা বিখ্যাত দুটি বই।
উইলিয়াম ডালরিম্পল গার্ডিয়ানে লেখা এক কলামে বেশ জোরালো ভাষায় তার যুক্তি তুলে ধরেছেন কেন তিনি রবার্ট ক্লাইভের মূর্তি অপসারণের পক্ষে।
ব্রিটিশ সরকারের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে কীভাবে ক্লাইভের মতো লোকের মূর্তি এখনো আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি লিখেছেন, “ক্লাইভ এমন কোন ব্যক্তি নন, যাকে আমাদের এই যুগে সন্মান জানানো উচিৎ। যখন এডওয়ার্ড কোলস্টোনের (ব্রিস্টলের দাস ব্যবসায়ী) মূর্তি পর্যন্ত উপড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে, তখন সময় এসেছে এই মূর্তিটিও যাদুঘরে পাঠিয়ে দেয়ার। ব্রিটেনের যে অন্ধকার অতীত ইতিহাস, ভবিষ্যত প্রজন্মকে তা জানাতে কাজে লাগবে এটি।”
তিনি আরও লিখেছেন, “কেবল এই কাজ করার মাধ্যমেই আমরা শেষ পর্যন্ত আমাদের অতীত কৃতকর্মের মুখোমুখি হতে পারবো এবং যতকিছুর জন্য আমাদের ক্ষমা চাওয়া দরকার, সেই ক্ষমা চাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবো। এবং তারপরই এই সাম্রাজ্যবাদী অতীতের ভারী বোঝা থেকে মুক্ত হয়ে আমরা সামনে আগাতে পারবো।”
মূর্তি সরানোর দাবি যেভাবে শুরু
যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে এক নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর ব্রিটেন জুড়েও বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। লকডাউনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে প্রতি সপ্তাহান্তেই বড় বড় বিক্ষোভ হচ্ছে ছোট বড় সব শহরে।
এই আন্দোলনের টার্গেট হয়েছে বর্ণবাদ, ঔপনিবেশিক শাসন আর দাস ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল এমন ব্যক্তিদের মূর্তি। ব্রিস্টলে বিক্ষুব্ধ জনতা এডওয়ার্ড (দাস ব্যবসায়ী) কোলস্টোনের মূর্তি উপড়ে সেটি ফেলে দিয়েছে নদীতে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্র বিক্ষোভ চলছে সেসিল রোডসের মূর্তি সরানোর দাবিতে, যিনি আফ্রিকায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে ভূমিকা রাখেন।
এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতাতেই রবার্ট ক্লাইভের মূর্তি অপসারণের দাবি উঠেছে। এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি আবেদনপত্র খোলা হয়েছে চেঞ্জ-ডট-অর্গ ওয়েবসাইটে। প্রতিটি আবেদনপত্রেই রবার্ট ক্লাইভকে একজন বর্ণবাদী, লুটেরা এবং দুর্বৃত্ত বলে বর্ণনা করে বলা হয়েছে, তার মতো মানুষকে মূর্তি বানিয়ে স্মরণ করার কোন কারণ নেই।
ক্লাইভের জন্ম যে শ্রপশায়ার কাউন্টিতে, সেখানে তীব্র বিবাদ চলছে শ্রুসবেরি শহরের চত্ত্বর থেকে মূর্তি সরানোর দাবি নিয়ে। মূর্তি সরানোর দাবিতে দুটি আবেদনের একটিতে আট হাজারের বেশি মানুষ এর মধ্যে সই করেছেন।
‘বর্ণবাদী ক্লাইভের মূর্তি সরিয়ে ফেল’ দাবি জানিয়ে একটি আবেদন করেন ডেভিড প্যাট্রন। তিনি বলছেন, শহর চত্বরের কেন্দ্রে স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ক্লাইভের মূর্তি, কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে দুশো বছর ধরে অপশাসনের কেন্দ্রে ছিল এই ব্যক্তি, যার কারণে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে নির্মম অত্যাচার চলেছে।”
তিনি আরও লিখেছেন, “কাদের প্রতীককে আমরা সন্মান জানাবো সময় এসেছে নতুন করে ভাববার। আমাদের শ্রুসবেরির মানুষ কী নিয়ে গর্ব করবো, সেটা নিয়ে ভাববার। যদি আমরা জোসেফ স্ট্যালিন বা চেঙ্গিস খানের মূর্তি মেনে নিতে না পারি, তাহলে ক্লাইভের মূর্তি কীভাবে মেনে নিচ্ছি?”
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
We use cookies to ensure you get the best experience on our website.