করোনা প্রতিরোধে লকডাউন সফল করতে ১২ পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে লকডাউন বা অবরোধব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হলে ১২টি মূলনীতি মানতে হবে। প্রতিটি নীতি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কাজের উল্লেখ করে তাঁরা বলেছেন, স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করলে সফলতা আসবে। শহর এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়নের কৌশলপত্রে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেছেন।
করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আট বিশেষজ্ঞের তৈরি করা কৌশলপত্রের সূত্র ধরে গত দু-তিন দিন লকডাউন নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে কোনো এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ বলে চিহ্নিত করার প্রস্তাব করেছেন। সব ধরনের এলাকার জন্য সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে। আবার এলাকাগুলোর জন্য তাঁরা ১২টি কাজের সুপারিশ করেছেন। এর মধ্যে আছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণ, ঝুঁকিবিষয়ক যোগাযোগ, রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা, শনাক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে (সঙ্গনিরোধ) নেওয়া, কনট্যাক্ট ট্রেসিং (আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা লোক খুঁজে বের করা), খাদ্য ও সামাজিক সহায়তা, ১০০ শতাংশ নাগরিকের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা, সবাইকে হাত ধোয়ায় উদ্বুদ্ধ করা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, সঠিক চিকিৎসা ও মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনা, সার্বক্ষণিক নজরদারি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা।
সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে আট বিশেষজ্ঞের পক্ষ থেকে চার পৃষ্ঠার এই কৌশলপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদকে দেওয়া হয়। তারপর কৌশলপত্র যায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে। কৌশলপত্র নিয়ে একাধিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সভাও হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা জরুরি।
তবে কৌশলপত্রের বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মত পাওয়া গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা পূর্ব রাজাবাজার থেকে কাজ শুরু করব। লকডাউনের জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা করেছি।’ তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো পাইনি।’
লকডাউন সফল করতে কৌশলপত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ ভূমিকার উল্লেখ আছে। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, লকডাউনের ব্যাপারে তাঁরা গতকাল বিকেল পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাননি।
মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে সরকার রাজধানীর টোলারবাগে লকডাউন করেছিল। ওই সময় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) নেতৃত্বে থাকলেও স্থানীয় সাংসদ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, মসজিদের ইমাম, স্থানীয় বাড়ি ও ফ্লাট মালিক সমিতি লকডাউন সফল করতে ভূমিকা রেখেছিল। সমাজের প্রায় সব স্তরের মানুষের সম্পৃক্ততার ফলে মাদারীপুরের শিবচর এলাকাতেও লকডাউন সফল হয়েছিল।