আম্ফান কেড়ে নিল ১৮ প্রাণ

ইত্তেফাক প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২০, ০৮:৩১

বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই উপকূল জুড়ে আবার ব্যাপক তাণ্ডব চালাল সুপার সাইক্লোন আম্ফান। বুধবার সন্ধ্যায় প্রবল গতিতে সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। সারারাত ধরে চলে এর তাণ্ডব। এ সময় ৯ জেলায় গাছ ভেঙে, দেওয়াল চাপা পড়ে এবং পানিতে ডুবে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।


ঘূর্ণিঝড়ে লক্ষাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। হাজার হাজার গাছপালা ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। ভারী বর্ষণ ও তীব্র জোয়ারের পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পৌনে ২ লাখ হেক্টর জমির ফসল। ভেসে গেছে চিংড়িসহ অন্যান্য মাছের কমবেশি ৭০ হাজার ঘের।

ঝড়ের সময় উপকূলীয় বিশাল এলাকার বিদ্যুত্ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে অনেক স্থানে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র ঝড়ের মধ্যে লাখ লাখ মানুষের রাত কাটে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায়। ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরা জেলার। সেখানকার চার উপজেলার কমপক্ষে ২৩ স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

ইত্তেফাক রিপোর্টার জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে দেশের ১৩ জেলার মোট ৮৪টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙেছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এ তথ্য জানান। এ সময় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, আক্রান্ত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আছেন। তারা জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সহায়তায় বালুভর্তি জিও ব্যাগের মাধ্যমে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে প্রাথমিক হিসাবে ১৯ জেলায় ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। গতকাল সন্ধ্যায় এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

এছাড়া আম্ফানের প্রভাবে সারাদেশে ১ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল রাজধানীর সরকারি বাসভবন থেকে কৃষির ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনলাইন মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, আম, লিচু, কলা, সবজি, তিল এবং অল্প কিছু বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব নিরূপণের কাজ চলছে। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের আমন মৌসুমে বিনামূল্যে সার, বীজ ও নগদ সহায়তাসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, ফল ও পানচাষিদের মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষি ঋণের আওতায় আনা হবে।

যশোর অফিস জানায়, আম্ফানের তাণ্ডবে জেলায় ছয় জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন জেলার চৌগাছা উপজেলার পৌর এলাকার হুদো চৌগাছার ওয়াজেদ হোসেনের স্ত্রী চায়না বেগম (৪৫) ও মেয়ে রাবেয়া খাতুন (১৩), বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের বুদোপুর গ্রামের ছাত্তার মোল্লার স্ত্রী ডলি খাতুন (৪৫) এবং শার্শা উপজেলার গোগা ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের শাহাজাহানের স্ত্রী ময়না খাতুন (৪০), বাগআচড়া ইউনিয়নের জামতলা গ্রামের আব্দুল গফুর পলাশের ছেলে মুক্তার আলী (৬৫) এবং শার্শা ইউনিয়নের মালোপাড়া গ্রামের সুশীল বিশ্বাসের ছেলে গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ এসব হতাহতের ঘটনা ইত্তেফাককে নিশ্চিত করেছেন।

চৌগাছায় নিহত মা-মেয়ে ঝড়ের সময় ঘরে ছিলেন। রাত ১০টার দিকে ঘরের পাশের একটি গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়ে। এ সময় চাপা পড়ে মা ও মেয়ে নিহত হন। আর বাঘারপাড়ার নিহত গৃহবধূ নামাজ পড়ার পর কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। ঝড়ে একটি আমগাছের ডাল টিনের ঘরের চালার ওপর ভেঙে পড়লে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। শার্শায় নিহতদের মধ্যে মুক্তার আলী ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস নিজেদের ঘরের মধ্যেই গাছ ভেঙে পড়লে মারা যান। আর ময়না খাতুন স্বামীর সঙ্গে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাবার সময় গাছ পড়ে মারা যান। তবে স্বামী বেঁচে যান।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে যশোরের বিভিন্ন এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। পড়ে গেছে অসংখ্য কাঁচাঘর। উড়ে গেছে আধাপাকা বাড়ির টিনের চাল। যশোর-বেনাপোল সড়কে শতবর্ষী গাছসহ অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়ায় বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেলা শহরের সঙ্গে বেনাপোলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আরিফ জানিয়েছেন, ঝড়ে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে ফায়ার সার্ভিস কাজ শুরু করেছে।

পিরোজপুর অফিস জানায়, জেলায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। স্মরণাতীতকালের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু জলোচ্ছ্বাস হওয়ায় ভাণ্ডারিয়া বন্দর, মঠবাড়িয়ার তুষখালী বন্দর, স্বরূপকাঠির মিয়ারহাট বন্দর, নাজিরপুরের শ্রীরামকাঠি বন্দর, কাউখালী বন্দরের মতো লোকালয়ের অনেক স্থাপনা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে মত্স্য ঘের ও ফসলি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচাপাকা ২৫ কিলোমিটার রাস্তা। কাঁচাপাকা মিলিয়ে ২ হাজার ৩৪৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলার মঠবাড়িয়ায় দুই জন ও ইন্দুরকানীতে এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দেওয়াল চাপা পড়ে মঠবাড়িয়ায় দাউদখালী ইউনিয়নের গিলাবাদ গ্রামের মৃত মজিদ মোল্লার ছেলে শাহজাহান মোল্লা (৫৫) ও পানিতে পড়ে গিয়ে আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের ধুপতি গ্রামের মৃত মুজাহার আলীর স্ত্রী গোলেনূর বেগম (৭০) এবং জোয়ারের পানির স্রোত দেখে হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে ইন্দুরকানী উপজেলার উমেদপুর গ্রামে মৃত মতিউর রহমানের ছেলে শাহ আলম (৫৫) মারা গেছেন।

জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় দুই জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বৈদ্যনাথপুরের বালক শামীম (৯) গাছ চাপায় ও পোস্ট অফিসপাড়ার বৃদ্ধা মোমেনা খাতুন (৮৫) ঘর চাপা পড়ে মারা যান। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে চলা ঝড়ের তাণ্ডবে বহু কাঁচা-পাকা বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে গাছের আম ও লিচুর সিংহভাগ ঝরে পড়েছে।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, বুধবার গভীর রাতে সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ গুলিশ গ্রামে আম কুড়াতে গিয়ে ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে নীচে পড়ে জান্নাত বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানান, ঘরের ওপর গাছচাপা পড়ে নাদেরা বেগম (৫০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরো এক জন। বুধবার রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘর চাপা পড়ে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। ঝড়ে কলাগাছ, পাটখেত, পানের বরজসহ সবজি ব্যাপকভাবে নষ্ট হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঝড়ের সময় সিরাজগঞ্জ- কাজিপুর সড়কের চিলগাছা নামক স্থানে গাছে ডাল ভেঙে পড়ে দোলশাদ (৩৪) নামে এক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। সে কাজিপুর উপজেলার প্রজারপাড়া গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে। জেলায় ১ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমির সবজি বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ।

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী জানান, ঝড়ের সময় রাতে আম কুড়াতে গিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকা গৃহবধূ মনোয়ারা বেগমের (৪২) মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার হরিদাগাছি গ্রামের বারুইপাড়ার ইসহাক আলীর স্ত্রী।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, জেলার চারটি উপজেলার কমপক্ষে ২৩ টিরও বেশি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মত্স্য ঘের ও ফসলি জমি। বিধ্বস্ত হয়েছে সহস্রাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে অনেক রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমের। এদিকে শহরের কামাননগরে গাছ চাপা পড়ে করিমন নেছা নামের এক নারী মারা গেছেন।

সাতক্ষীরা জেলার প্রায় সব এলাকায় কমবেশি গাছপালা ভেঙে পড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় গাছ পড়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ পড়ায় এবং খুঁটি উপড়ে পড়ায় জেলায় বিদ্যুত্ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, জেলায় এক শিশুসহ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ কিলোমিটারের বেশি বেড়িবাঁধের। জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে জেলার প্রায় ৫ লাখ লোক দুর্যোগ কবলিত হয়েছে। বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে আংশিক ৮ হাজার ১২১টি ও সম্পূর্ণ ২ হাজার ৩৫৫টি। জেলায় ৪ হাজার ৫৫৩ হেক্টর জমির বোনা আউশ, বোরো ও শাক-সবজির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। জেলায় ৫ হাজার ৭৫৪টি পুকুর ও ৬২৩টি ঘের প্লাবিত হয়ে ৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

খুলনা অফিস জানায়, জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, সুপার সাইক্লোন আম্ফানে ৯ উপজেলায় ৮২ হাজার ৫৬০টি ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ। এছাড়া গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকা। এছাড়া ২১ হাজার ২৮৮টি চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের ভেসে গিয়ে ১৯৮ কোটি ১১ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪৪৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। তবে সুন্দরবনে বড়ো কোনো ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে বনবিভাগ।

বরিশাল অফিস জানায়, জেলায় ২৪ হাজার ৪৮০টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বিভাগের ৬ জেলায় ১৯ হাজার ২৪টি মাছের খামার, ঘের ও পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মোট পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে দ্রুততার সঙ্গে কাজ চলছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি বিধ্বস্তসহ গাছপালা, পানের বরজ ও কৃষির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। পানিবন্দি হয়েছেন ৩০টি গ্রামের শত শত মানুষ।

বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, জেলায় সাড়ে ৪ হাজারের অধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। জলোচ্ছ্বাসে শরণখোলা, মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ ও সদর উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৪৭টি ঘরবাড়ি। এছাড়া ৪ হাজার ৩৪৯টি কাঁচা ও আধাপাকা ঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে।

শরণখোলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, সাউথখালী ইউনিয়নের তেরাবাকা থেকে গাবতলা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ৮টি জায়গা ভেঙে বগী, গাবতলা ও শরণখোলা গ্রামের তিন শতাধিক বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে।

কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা জানান, বিষখালি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে শত শত একর জমির ফসল, জলাশয়ের মাছ ও পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলো হলো— সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাণীপুর, ভাগোলের পার, গ্রেদ লক্ষ্মীপুরা, লক্ষ্মীপুরা ও বিবিচিনি ইউনিয়নের রাণীপুর গ্রাম।

আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় ১ হাজার ৮৯৩টি কাঁচা ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ৭ হাজার ৫৭২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া অর্ধশতাধিক পানের বরজ, বাদাম, মিষ্টি আলু, মরিচ, শাক-সবজিসহ কোটি টাকা মূল্যের ফসল বিনষ্ট হয়েছে।

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ী, বুড়িগোয়ালিনী ও রমজাননগর ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। কয়েক হাজার মত্স্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে শত শত কাঁচা ঘরবাড়ি। ৫ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ২ হাজার মত্স্য ঘের প্লাবিত হয়ে কয়েকশ কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ৪০টি বৈদ্যুতিক পোল ভেঙে সমগ্র উপজেলা বিদ্যুত্হীন হয়ে পড়েছে। সুন্দরবনসংলগ্ন গোলাখালী গ্রাম সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ৪০টি পরিবার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শ্যামনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসডিই) মো. রাশেদুর রহমান বলেন, উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ নদীতে ভেঙে গেছে। দ্রুত ভাঙন রোধের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

হাতিয়া (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, দ্বীপ উপজেলায় ২ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া জোয়ারের পানিতে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার মাছের প্রজেক্ট ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, ঝোড়ো হাওয়া ও অতিবৃষ্টির ফলে ১০ হাজার ১০০ হেক্টর জমির বোরো পাকা ধান জমিতে হেলে পড়ে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় ৬ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, জেলায় সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে আম ও লিচুর। এছাড়ার জেলায় ছয় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, জেলায় ৬২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হযেছে। বৃহস্পতিবার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুব্রত কুমার সরকার এ তথ্য প্রদান করেন।

স্বরূপকাঠি (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় ঝড়ে গাছ পড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে অসংখ্য মাছের ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। অনেক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। শতাধিক পানের বরজসহ সবজি খেতের ক্ষতি হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুত্ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।

ফের কর্মচঞ্চল চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর

চট্টগ্রাম অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে। গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। বিপদ সংকেত কমিয়ে আনার পর গভীর সমুদ্রে থাকা জাহাজগুলোকে পুনরায় জেটিতে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এদিকে কর্ণফুলী নদীতে একটি লাইটারেজ জাহাজের ধাক্কায় বন্দরের বিশেষায়িত খননকারী জাহাজ ‘খনক’ ফুটো হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

মোংলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, ঝড়ের সময় মোংলার পশুর নদে একটি টুরিস্ট লঞ্চ ডুবে গেছে। প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি গ্রাম ও দুই সহস্রাধিক চিংড়ি ঘের সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া বন্দরের অপারেশন কাজ ৬০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুরু হয়েছে। বন্দর জেটি ও চ্যানেলে অবস্থানরত ১০টি বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে যথারীতি পণ্য ওঠানামার কাজ চালু করা হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও