গাড়ি চুরি করে পালানোর সময় গ্রেপ্তার ‘ছাত্রলীগ নেতা’ তুহিন
একটি নয়, দু’টি নয়- ১৫টি মামলার আসামি সিলেটের ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি তুহিন। ছিনতাই, মাদক, অস্ত্রসহ সব ধারাই তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। নগরীর ৭ নং ওয়ার্ড এলাকায় তার দাপট বেশি। অভ্যন্তরীণভাবে আওয়ামী লীগে গ্রুপ বদল করেছে কয়েকবার। যখন যার কাছে সুবিধা হয়েছে তার কাছেই ছিল। সর্বশেষ সে ছাত্রলীগের দর্শন দেউরী গ্রুপের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই তুহিন এবার গ্রেপ্তার হয়েছে গাড়ি চুরির মামলায়। চুরি করা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে তুহিন গ্রেপ্তারের পর এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
সিলেটের এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ জানিয়েছে, এয়ারপোর্ট থানার ওসি শাহাদাৎ হোসাইন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- শুক্রবার ভোরে তুহিন ও তার সহযোগী রাহেল আহমদ এয়ারপোর্ট থানার বনকলাপাড়া ৫২ নং বাসার আছিয়া বেগম নামে এক মহিলার প্রাইভেটকার চুরি করে। প্রাইভেটকার নিয়ে যাওয়ার ওই মহিলা থানায় কল দেন। খবর পেয়ে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের একটি দল চুরি হওয়া প্রাইভেটকারের কিছু নেয় এবং জালালাবাদ থানা পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করে। পরে আখালিয়া মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে জালালাবাদ থানা পুলিশ তাদের আটক করে এয়ারপোর্ট থানায় নেয়া হয়। সকালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। গাড়ি চুরির মামলায় দুপুরের পর তাদেরকে সিলেটের আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ওসি শাহাদাৎ জানিয়েছেন, তুহিনের বিরুদ্ধে নানা ঘটনার ১৫টি মামলা রয়েছে। সে এলাকায় একজন চিহ্নিত অপরাধী হিসেবে পরিচিত। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুছা জানিয়েছেন- তুহিন ও তার সহযোগী এক মহিলার গাড়ি চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পথে মাউন্ট এডোরা হসপিটাল এর সামনে জালালাবাদ থানা পুলিশ এর চেকপোস্টে তাদের আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশসহ স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেট নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে এই তুহিন। সে এলাকার সব মানুষের কাছে পরিচিত। এ নামেই তাকে চিনেন সবাই। ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার কারণে তার সঙ্গে ছাত্রলীগের বড় গ্রুপটি সম্পৃক্ত। এই গ্রুপের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে দর্শন দেউরী গ্রুপ। ছাত্রলীগের পদবি ব্যবহার করে সে ধীরে ধীরে অপরাধের গডফাদার বনে যায়। এলাকায় ইয়াবার সবচেয়ে বড় হাটের নিয়ন্ত্রক সে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইয়াবা বিক্রি করে। নগরীর বনকলাপাড়ায় তার আস্তানায়। আম্বরখানা থেকে মদিনা মার্কেট এলাকা পর্যন্ত তার রয়েছে ছিনতাই নেটওয়ার্ক। মোটরসাইকেল নিয়ে তারা ছিনতাই করে বেড়ায়। এ কারণে বেশ কয়েকজন যুবক জড়িত। মোটরসাইকেল চোর চক্রের একটি চক্র রয়েছে তুহিনের নেতৃত্বে। প্রায় সময় মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগ ওঠে ওই এলাকায়। কয়েকদিন আগে এ নিয়ে একটি ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছিল এলাকায়। স্থানীয় কাউন্সিলর আফতাব উদ্দিন গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
এদিকে তুহিন গ্রেপ্তারের পর এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। তুহিন গ্রুপের কর্মীরা হঠাৎ করে নীরব হয়ে পড়েছে। পুলিশ জানায়, তুহিনের অপরাধ নেটওয়ার্কে সঙ্গে যারাই সম্পৃক্ত থাকবে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। তুহিনের পিতা আলম মিয়া। বাড়ি নগরীর লন্ডনী রোডের ১২৭ অগ্রণী আবাসিক এলাকায়। কিন্তু তুহিনের আস্তানা বনকলাপাড়া এলাকায়। সন্ধ্যা নামলেই সেখানের পরিবেশ বদলে যায়। মাদকসেবী আর অপরাধীদের আনাগোনা বাড়ে এলাকায়। এ নিয়ে বেশক’বার প্রতিবাদ করলেও তুহিনের হুমকির মুখে পরবর্তীতে তারা চুপসে যান।
এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ফাঁড়ি ও থানা পুলিশের অনেক পুলিশ সদস্য তার আস্তানায় যেতেন এবং নিয়মিত আড্ডাও দিতেন। ফলে দাপট নিয়েই এলাকা রাজত্ব গড়েছে তুহিন।