প্রধানমন্ত্রীর সহায়তার তালিকায় স্বজন-বিত্তশালীদের নাম

কালের কণ্ঠ প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২০, ১৯:১০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্রদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর এককালীন ২৫০০ টাকা প্রদানের তালিকায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠেছে। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন সরকার মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন। ওই আবেদনের কপি স্থানীয় সাংসদ ও জেলা প্রশাসককেও পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দুপুরে কালের কণ্ঠকে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান।



প্রাপ্ত ওই আবেদনে অভিযোগ করা হয়, বীরগাঁও ইউনিয়ন সচিবের কাছ থেকে নেওয়া দরিদ্রদের নামের ওই তালিকাটিতে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির সুস্পষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে। তালিকায় ওই ইউনিয়নে ৫০৯ জনের নামের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০ জনের নামের তালিকা করার কথা থাকলেও, বীরগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির আহমেদ স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তার নিজ ওয়ার্ডেই ১০৮ জনের নামের তালিকা তৈরি করেন। যার মধ্যে তার নিজ গ্রাম তিলোকিয়া থেকেই ৫৭ জনের নাম অন্তভূর্ক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দরিদ্রদের নামের এ তালিকায় সরকারি স্কুলের শিক্ষক,স্বাস্থ্যকর্মী, আনছার, চৌকিদার, বড় মুদি ব্যবসায়ী, স্বচ্ছল প্রবাসী পরিবারসহ অনেক বিত্তবানের নামও রয়েছে।

তালিকায় চেয়ারম্যানের ড্রাইভার সেন্টু ও তার নিজের আত্মীয় স্বজনসহ চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ বিত্তশালী হেলাল মিয়া, ফায়েজা বেগমের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

এ ছাড়া এ তালিকায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার, চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত তাহের মিয়ার নিজের পরিবারের ৮ জনের নাম রয়েছে। যার মধ্যে তাহের মেম্বারের স্ত্রী, সস্ত্রীক তার আপন দুই বড় ভাই, চাচাতো ভাই ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাসরত তার মেয়ের নামও অন্তভূর্ক্ত রয়েছে বলে আবেদনে অভিযোগ করা হয়।

এদিকে তালিকায় সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ফরিদা বেগমের মেয়ে ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার কালন মিয়ার মেয়ের নামও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ঢোকানো হয়েছে।

বিতর্কিত ওই তালিকাটিতে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পেশায় সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী মৌসুমী আক্তারকে দিনমজুর এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির নেতা আমীর হোসেনকে দরিদ্র দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি তালিকায় ওই জাতীয় পার্টির নেতার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের ১২টি নামও রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

এ ছাড়া তালিকায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দিনমজুর হিসেবে সরকারি গ্রাম পুলিশ ফোরকানুল হক ও মাহাবুর রহমানের নাম রয়েছে। একই ওয়ার্ডে জলিল মিয়া ও রুফুজা বেগমের নাম দুইবার অন্তভূর্ক্ত হয়েছে।

অন্যদিকে কলেজ পড়ুয়া মারজানা খানমের নামের পাশে অন্য গ্রামে বসবাসকারী তানিয়া বেগমের ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে। তালিকাটিতে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে পাশের উপজেলা আশুগঞ্জের সোনারামপুর গ্রামের রায়হান বেগমের নামও উঠেছে। একই সাথে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিক ধনী ও সম্পদশালী মানুষের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

তালিকায় অনিয়মের মাধ্যমে দরিদ্রদের বাদ দিয়ে বিত্তশালীদের এসব নাম অন্তর্ভূক্তিতে চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ স্থানীয় একাধিক বিএনপি নেতার যোগসাজশ রয়েছে বলেও সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে আবেদনকারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হোসেন সরকার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত দরিদ্রদের কোটি কোটি টাকা কিভাবে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে লুটপাট হবে, তারই একটি জলন্ত দৃষ্টান্ত হলো বীরগাঁও ইউনিয়ন। তাই এর আশু প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছি।

এ বিষয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তাহের মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, তালিকা করার সময় আমি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। তবে আমার পরিবারের যাদের নাম এসেছে, তারা সবাই দরিদ্র। এরপরও যদি সমস্যা হয়, তাহলে এদের নামগুলো কেটে দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে একটি হত্যা মামলায় 'প্রধান আসামি' হিসেবে পলাতক থাকায় বীরগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান কবির আহমেদের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার এক নিকট আত্মীয় বলেন, হত্যা মামলায় যেমন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে, তেমনি এখানেও সম্পূর্ণ মনগড়া ও ভুয়া কথাবার্তা লিখে একটি অসত্য আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যারকে হেয় প্রতিপন্ন করাই এর মূল উদ্দেশ্য। তবে সুষ্ঠু তদন্ত হলে অভিযোগের সত্যতা মিলবে না।

নবীনগরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম আবেদনের প্রাপ্তি স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখতে পিআইওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও