গাজীপুরে চিকিৎসার জন্য একটি শয্যাও প্রস্তুত নয়
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পরেই রয়েছে গাজীপুর। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এই জেলায় শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা ২৭৯। মারা গেছেন দুজন। প্রতিদিনই এখানে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্ত এখন পর্যন্ত এই জেলায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোনো হাসপাতালে একটি শয্যাও প্রস্তুত হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য এখানকার একটি হাসপাতালকে নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সেটার প্রস্তুতি শেষ হয়নি। এ ছাড়া রোগী রাখা বা আইসোলেশনের (বিচ্ছিন্ন রাখা) জন্য একটি রিসোর্টসহ তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই প্রস্তুতিপর্বের মধ্যেই সংক্রমণ বেড়ে চলেছে গাজীপুরে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে যেসব রোগী শনাক্ত হয়েছেন, তার মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির হার (২০ শতাংশ) গাজীপুরে সবচেয়ে বেশি। গাজীপুর সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, গাজীপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সংক্রমণ পাওয়া গেছে ১০৬ জনের মধ্যে। এ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ২৭৯ জন। তাঁদের মধ্যে সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় আছেন ৫৭ জন। বাকিদের মধ্যে ৩১ জন কালীগঞ্জের, ৯ জন কালিয়াকৈরের, ৮ জন কাপাসিয়ার ও ১ জন শ্রীপুরের। জানা গেছে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ১০ জন চিকিৎসক এবং ২৫ জন নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীও রয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। শনাক্ত হওয়া রোগীদের বেশির ভাগকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে বলা হচ্ছে। যাঁদের অবস্থা বেশি খারাপ, তাঁদের ঢাকায় করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু ঢাকায় রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওই সব হাসপাতালে শয্যা খালি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগী ২৭৯ জন। প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের প্রস্তুতি এখনো শেষ হয়নি গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন মো. খাইরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য গাজীপুরে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। কয়েক দিনের মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। সংক্রমণ যদি বাড়তে থাকে তবে মেঘডুবিতে ২০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, শ্রীপুরের বরমী মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, পুবাইল এলাকার একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও গ্রিনটেক রিসোর্টে করোনা রোগীদের চিকিৎসাকেন্দ্র করা হবে। নানা রকম শিল্পকারখানার কারণে বিভিন্ন জেলার মানুষের বসবাস গাজীপুরে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, তখন এই জেলার জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ২১ লাখ। তবে স্থানীয় প্রশাসনের হিসাবে এখন জনসংখ্যা ৪০ লাখের বেশি হবে। জনসংখ্যার অনুপাতে এখানে এমনিতে চিকিৎসা ব্যবস্থা খুব অপ্রতুল।