শাঁখের করাতে’ হাওরের ধান
নেত্রকোনা মদনের তলার হাওরে ১০ কাঠা জমি আছে আলতা মিয়াদের। ছিল কয়েক বিঘা। যৌথ পরিবারগুলো খণ্ডবিখণ্ড হওয়ায় জমিগুলোও খণ্ডবিখণ্ড হয়েছে। বছর বছর পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় এসব জমিন। জমিনের সঙ্গে পেটবোঝাই ধান। ধান হারিয়ে, গান হারিয়ে মানুষ ছুটেছে শহরে। দিনমজুরি, রিকশা কি গার্মেন্টসে। ‘হেমন্তে পাও আর বর্ষা নাও’ হাওরে ফসলের মৌসুম মূলত একটাই। বোরো মৌসুম। শেষ চৈত্র থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি চলে বোরো মৌসুমের ফসল সংগ্রহ। হাওরজুড়ে বৈশাখ মাস হলো জনসমাগম আর কর্মমুখর সময়। তৈরি হয় বিশাল খলা, আর সেখানেই চলে ধান ঝাড়াইমাড়াই কি বেচাবিক্রি। ধানশ্রমিকদের অস্থায়ী ঘর তৈরি হয় এখানে, জমে নানা পণ্যের পসরা। আবার এই চৈত্র-বৈশাখই হাওরের জন্য কাল। কারণ, তখনই পাহাড়ি ঢলে একের পর এক ডুবতে থাকে সব। মধ্য চৈত্র থেকে মধ্য বৈশাখ ফসল তোলার জন্য মুখিয়ে থাকে হাওর। কিন্তু কয়েক বছর ধরে হাওরে তৈরি হয়েছে বোরো মৌসুমে নিদারুণ শ্রমিক–সংকট। আলতা মিয়াদের মতো কম জমির কৃষকেরাও আজ দিশেহারা। করোনা সংকটের কারণে লকডাউনে উত্তরবঙ্গ কি দক্ষিণাঞ্চল থেকে শ্রমিকেরা আসতে পারছেন না। এ ছাড়া বহিরাগত শ্রমিকদের নিয়ে কৃষি পরিবারগুলোয় আছে নানামুখী সংক্রমণের আতঙ্ক। ফসল কাটতে দেরি হওয়া মানেই পাহাড়ি ঢলে চোখের সামনে সব তলিয়ে যাওয়া। এক দিকে করোনা আরকে দিকে পাহাড়ি ঢলের শঙ্কা। হাওরভাটি আজ এক নিদারুণ ‘শাঁখের করাতে’ বন্দী। লকডাউনের কৃষিমজুর হাওরাঞ্চল দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ শস্যভান্ডার। ২০২০ সালের বোরো মৌসুমে দেশে ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে, যার প্রায় ২৩ ভাগই হাওরে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সাতটি হাওর জেলায় ৯ লাখ ৩৬ হাজার ১০১ হেক্টর জমিনে চলতি বোরো মৌসুমে ধান আবাদ করা হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবেই বোরো মৌসুমে হাওরে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসেন শ্রমিকেরা।