‘সে কথা মনে পড়লে এখনও গা শিউরে ওঠে’
'১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরুর আগের সময়ে পল্টনের বাসায় ছিলাম। পুরানা পল্টন লাইনে আমাদের বাড়ি। বয়স তখন ১৮। আমি, বাচ্চু [নাসির উদ্দীন ইউসুফ] একসঙ্গেই ছিলাম। পাশাপাশি বাড়ি আমাদের। ২৫ মার্চ রাতে হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পাই। তখন বাড়িঘর কম ছিল এদিকে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের দিক থেকেই গুলির শব্দ আসছে। আমরা দেখার জন্য এগিয়ে যাই। জানতে পারি, পাকিস্তান আর্মি অ্যাটাক করেছে। তারপর আরও গুলি চলে। চারপাশে শুধু গুলি আর গুলি। সারারাত গুলির শব্দ। কাছ থেকে না শুনলে কেউ বুঝতে পারবে না, কী ভয়াবহ ছিল সেই শব্দ! এর পর চিৎকার ভেসে আসে। নির্ঘুম রাত কাটে আমাদের।' স্মৃতির ঝাঁপি খুলে ১৯৭১ সালের ঘটনা এভাবেই বলে গেলেন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ও নন্দিত অভিনয়শিল্পী রাইসুল ইসলাম আসাদ। সম্প্রতি পল্টনের বাসায় কথা হয় শিল্পীর সঙ্গে। বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ এবং জীবনের নানা বাঁক বদলের গল্প। লিখেছেন সমু সাহারাজধানীর পুরানা পল্টনে রাইসুল ইসলাম আসাদের পৈতৃক নিবাস। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। ছোটবেলায় দুরন্তপনা, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোতেই খুঁজে পেতেন আনন্দ। এই শহরের আলো-বাতাস অঙ্গে মেখেছেন পরম ভালোবাসায়। নাসির উদ্দীন ইউসুফের সঙ্গে কেটেছে শৈশবের বড় একটা অংশ। দু'জনের বাড়ি পাশাপাশি। তাদের বন্ধুত্বও ঠিক তেমনই। শৈশব পেরিয়ে তারুণ্য, মুক্তিযুদ্ধ এমনকি শিল্পসঙ্গী হিসেবে এখনও তারা একই তরীর যাত্রী। ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করা রাইসুল ইসলাম আসাদ জীবনকে সরল রৈখিকভাবে দেখতেই পছন্দ করেন। তাবে তার জীবনরেখার ছন্দে বাদ সাধে ১৯৭১ সাল। সামনে আসে ২৫ মার্চের বিভীষিকাময় রাত। আজও তিনি ভুলতে পারেননি সে রাতের ভয়াবহতা।