চট্টগ্রামে দু’বছরে এইডস রোগী বেড়েছে আড়াই গুণ
চট্টগ্রামে প্রাণঘাতী এইডস আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। গত দুই বছরে বেড়েছে আড়াই গুণ। এরমধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। যাদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে স্ত্রী ও সন্তানরাও। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অ্যান্টি রেট্রো ভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারের হিসেব মতে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নতুন করে এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৭১ জন। এর মধ্যে ৪৪ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও নয়জন শিশু। মারা গেছেন ১০ জন। তাদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ, চারজন নারী ও একজন শিশু। নতুনদের নিয়ে এ বছর চট্টগ্রামে মোট এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ৪২১ জন। এদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩২৬ জন। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪৫ জন। ওই বছর সারা দেশে নতুন করে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৭৯ জন। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্তের পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছয় হাজার ৪৫৫ জন এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে মারা গেছেন এক হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে ২০১৮ সালেই মৃত্যু হয়েছে ১৪৮ জনের। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এন্টি রিক্ট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টারের আউটডোর মেডিকেল অফিসার সঞ্জয় প্রসাদ দাশ বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রোগীর মধ্যে বড় অংশই হচ্ছে প্রবাসী। যারা প্রবাসে অবস্থানের সময় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরছেন। রোগের বিষয়টি গোপন করে স্ত্রীর সাথে শারীরিক মিলনে তারাও এই রোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এমনকি তাদের সন্তানরাও আক্রান্ত হচ্ছে এই রোগে। ঝুঁকিপূর্ণ যৌন সমপর্ক বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান না থাকা এবং বিদেশে যাওয়ার আগে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং না হওয়ায় এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এইডস নিয়ে কাজ করা চমেক হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক এ কিউ এম সিরাজুল ইসলামও প্রবাসীদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তের হার বেশি পাওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, শুধু হাসপাতালে নয়, ব্যক্তিগতভাবে এইডসের চিকিৎসা নেয়া রোগীদের মধ্যেও প্রবাসীর সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাওয়া কর্মীরা দীর্ঘদিন তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। তারা বিদেশে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণে জড়িয়ে পড়ে। সেক্স্যুয়াল প্রটেকশন বা এইচআইভি ভাইরাস সমপর্কিত ধারণা তাদের মধ্যে না থাকায় এ ধরনের কর্মকান্ডে যুক্ত হয়ে নিজের অজান্তেই এ ভাইরাসের জীবাণু বহন করে।চট্টগ্রাম মেডিকেলের প্রিভেনশন অব মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন (পিএমটিসিটি) প্রোগ্রামের আওতায় গর্ভবতী মায়েদের এইচআইভি ভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা করা হয়। সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং সিটি করপোরেশন পরিচালিত মেমন মাতৃসদন হাসপাতালেও এ কর্মসূচি চালু হয়েছে। মা থেকে শিশুতে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ কার্যক্রম সম্পর্কে পিএমটিসিটি চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপক আলী হোসেন বলেন, পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি আক্রান্ত রোগী যেমন শনাক্ত করা যাচ্ছে, তেমনি সচেতনতাও বাড়ছে। এইডস নিয়ে সচেতনতা আরো বাড়াতে বিশেষ করে মা থেকে সন্তানদের মধ্যে সংক্রমণ রোধের জন্য চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও এ কার্যক্রম চালু করা জরুরি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ভাইরাস সমপর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। আক্রান্ত রোগীরাও আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন এবং এ রোগের প্রতিষেধক নিচ্ছেন। তার দেওয়া তথ্যমতে, এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কম ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত সাধারণ জনগণের মধ্যে সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক শূন্য এক ভাগের নিচে। তবে ঝুঁকিপূর্ণের মধ্যে শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, সমকামী ও হিজড়াদের মধ্যে এ সংক্রমণের হার তিন দশমিক ৯ শতাংশ।এদিকে বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালসহ বিভিন্ন সংস্থা রোববার সকাল থেকে সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করেছে।