দেড় যুগেও চালু হয়নি নিজস্ব ভবন

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

নিজস্ব ভবন নির্মাণের দেড় যুগ চলছে। কিন্তু এখনো ওই ভবনে চালু হচ্ছে না দাপ্তরিক কার্যক্রম। এ নিয়ে ওই ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ ও অন্তহীন দুর্ভোগ। কিন্তু তারপরও কিছুতেই হয়নি সুরাহা। কারণ ইউনিয়ন অফিসের স্থান নিয়ে চলে আইনি লড়াই। তাই ভবনটি নির্মাণের পর থেকেই অযত্ন-অবহেলায় পরিত্যক্ত। এমন দৃশ্য কুলাউড়া সদর ইউনিয়ন ভবনের। জানা গেল নির্মাণের ১৮ বছর থেকেই ভবনটি এভাবেই পরিত্যক্ত। নির্মাণের পর হয়নি উদ্বোধন। ভবনটিতে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু না হওয়াতে অস্থায়ীভাবে ইউনিয়নের কার্যক্রম চলছে কুলাউড়া পৌর শহরের জেলা পরিষদের জায়গায় একটি জরাজীর্ণ ভবনে। শহরের এই অফিস থেকে ওই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকার দূরত্ব প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার। এই দূরত্বের কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহরে গিয়ে নাগরিক সেবা পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উপকারভোগীরা। জানা যায় ২০০০ সালের ১৫ই জুন প্রায় ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই ইউনিয়নের জনতাবাজারে একটি দ্বিতল ভবন নির্মিত হয়। ওই সময়ে ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বর্তমান সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। এই ভবনে হলরুমসহ চেয়ারম্যানের কক্ষ, সচিবের কক্ষ, ইউপি সদস্যদের (মেম্বার) কক্ষ, আনসার-ভিডিপি ও গ্রাম পুলিশদের কক্ষ, ওয়াশরুমসহ রয়েছে প্রয়োজনীয় কক্ষ। কিন্তু ভবন নির্মাণের পর থেকে এখনো তা পরিত্যক্ত। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভবনটিতে যেমন পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন কেউ কেউ। তেমনি ওখানে ফার্নিচারও তৈরি করছেন স্থানীয় কাঠমিস্ত্রিরা। সরেজমিন দেখা যায়, পরিত্যক্ত ভবনটির সামনের পিলারের সঙ্গে গরু-ছাগল বাঁধা। ভবনের নিচতলায় চলছে ফার্নিচার তৈরির কাজ। বেশির ভাগ কক্ষের দরজা-জানালা নেই। কক্ষগুলো ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব। ছাদ ও দেয়ালের বিভিন্ন অংশ নষ্ট। ওই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই। শহরে গিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে আমাদের ১০০-১৫০ টাকা খরচ হয়। ওই ভবনটিতে কার্যক্রম শুরু হলে আমাদের অনেক উপকার হতো। জানা যায়, ১৯৯৬ সালে কুলাউড়া পৌরসভা গঠনের পর কুলাউড়া ইউনিয়ন আলাদা হয়ে যাওয়ায় সদর ইউনিয়নের শংকরপুরে ইউনিয়ন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ইউনিয়ন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্তকে সে সময় প্রতাবী, গুতগুতি, লক্ষ্মীপুর, শংকরপুর, মীরের গ্রাম, বালিশ্রী, মিনার মহল, নাজিরের চক গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের সমর্থন থাকলেও গাজীপুর, শ্রীপুর, বনগাঁও, করের গ্রাম, হাসনপুর, বড়কাপন, বাগাজুড়া, হরিপুর, দাসের মহল গ্রামের বাসিন্দাদের সমর্থন না থাকার কারণে এই স্থানে ইউনিয়ন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। পরে ২০০০ সালের ২৩শে এপ্রিল তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিয়াজুল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইউনিয়ন ভবনের জায়গা নির্ধারণের জন্য কুলাউড়া বিটিআরআই’এ ৫২ শতক জায়গা পরিদর্শন করেন। এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ওই স্থানে ইউনিয়ন ভবন নির্মাণের জন্য। সে মোতাবেক একই বছরের ২৬শে এপ্রিল দলিলপত্রও প্রস্তুত করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কিন্তু এখানে ইউনিয়ন ভবন নির্মাণ হলে কুলাউড়া ইউনিয়নের আরেকটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর পক্ষে এখানে এসে প্রতিনিয়ত সেবা গ্রহণ করা সম্ভব নয় বিধায় এখানেও শেষতক ইউনিয়ন ভবন নির্মিত হয়নি। এমতাবস্থায় এই ইউনিয়নের সর্বস্তরের বাসিন্দা তাদের এই সমস্যার কথা তৎকালীন ও বর্তমান এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের কাছে তুলে ধরলে তিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে নির্দেশ দেন তিনদিনের মধ্যে ইউনিয়ন ভবনের স্থান নির্ধারণ করে দেয়ার। সুলতান মনসুরের নির্দেশের ৩ দিনের মাথায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনিয়নের মধ্যবর্তীস্থান জনতা বাজারে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ভবন নির্মাণের জন্য সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবার পর আবারো দেখা দেয় জটিলতা। ওই স্থানে ভবন নির্মাণ স্থগিত করে বিটিআরআই’এ প্রস্তাবিত স্থানে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ করার জন্য শাহ সুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সোহাগ মিয়া ও সাবেক শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে ২৪ জন বাদী হয়ে কুলাউড়া ইউনিয়ন পরিষদের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-স্বত্ব ৭৭/২০০০। আইনি মোকাবিলায় মামলার রায় চলে আসে কুলাউড়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে। এরপর বাদীপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট করেন। ফের উচ্চ আদালতে আপিল করলে আবারো মামলার রায় চলে আসে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে। এসব আইনি প্রক্রিয়ার বেড়াজালে ইউনিয়নের প্রশাসনিক ভবনের কার্যক্রম এখনো রয়েছে স্থগিত। এদিকে ভবন নির্মাণের পর গত ১৮ বছর থেকে দু’জন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেছেন। ভবন নির্মাণের সময় দায়িত্বে ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শাহজাহান। পরে তিনি আরো দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমানে সাবেক চেয়ারম্যানের স্ত্রী নার্গিস আক্তার বুবলী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ ইসতিয়াক হাসান বলেন মামলার রায়ের কপি পেলে নতুন করে টেন্ডার আহবান করা হবে। এই ইউনিয়ন ভবন নতুন করে মেরামত ও অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে ৪০-৪৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন ইউনিয়ন নিয়ে একটি মহলের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে আইনি মোকাবিলা করেছি। অবশেষে আমরা জয়ী হয়েছি। দীর্ঘদিন মামলা জটিলতা থাকায় ইউনিয়নের নতুন ভবনে কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। আশা করছি খুব শিগগিরই ওই ভবনেই কার্যক্রম চালু হবে। ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলী বলেন, আমি নতুন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমার স্বামী দীর্ঘদিন থেকে ইউনিয়ন নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে আইনি মোকাবিলা করেছিলেন। অবশেষে আইনী লড়াইয়ে উচ্চ আদালত থেকে মামলার রায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে আসে। এলজিইডির মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করে ইউনিয়নের অবশিষ্ট কাজ শেষ করে নতুন করে কার্যক্রম শুরু হবে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান বলেন, পৌর শহরের ভিতরে কোন অবস্থাতেই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলতে পারে না। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন স্থানান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। জেলা পরিষদের জায়গায় একটি আধুনিক মার্কেট নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। মার্কেট কাজ শুরু হলে ইউনিয়ন সেখান থেকে স্থানান্তর করতে হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও