ছবি সংগৃহীত

প্রিয় জানা-অজানা: ঝর্ণার উৎপত্তি হয় কোথা থেকে

খন্দকার ইশতিয়াক মাহমুদ
লেখক
প্রকাশিত: ০৪ মে ২০১৭, ০৯:৫৩
আপডেট: ০৪ মে ২০১৭, ০৯:৫৩

আমেরিকার ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে হট ওয়াটার স্প্রিং। ছবি: সংগৃহীত।
 
(প্রিয়.কম): এই বর্ষায় সবাই মহা উৎসাহে ঘুরতে যাচ্ছে একটার পর একটা ঝর্ণায়। ঢাকা থেকে এক দিনের দূরত্বে আছে মীরসরাই রেঞ্জ এর ঝর্ণা গুলো। এছাড়া সিলেটে আছে অনেক গুলো ঝর্ণা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এলাকায় আছে আরও কত সব ঝর্ণা।
 
এসব ঝর্ণা আসলে আসে কোথা থেকে? কিভাবে তৈরি হয় এগুলো? কেনই বা বর্ষায় সবাই ঝর্ণাগুলোতে যেতে এত উৎসাহী হয়ে ওঠে?
 
হঠাৎ বর্ষণে ঝর্ণাগুলোয় দেখা যায় পানির বন্যা। ছবি: সংগৃহীত।
 
মাটির অভ্যন্তরে বিভিন্ন ভাবে জমা থাকে পানি। কখনও সেটা মাটির বিভিন্ন স্তর ভেদ করে উঠে আসে উপরে, আর জন্ম হয় ঝর্ণার। আবার কখনও পাহাড়গুলো বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখে নিজের শরীরে, আর আস্তে আস্তে সেটা বের করে দিতে থাকে, ঝর্ণার জন্ম হয় এভাবেও। আবার সরাসরি বৃষ্টিতেও পাহাড়ের শরীর বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে, সেটাও ঝর্ণায় রূপ নেয়, তবে সেটা হয় সাময়িক। এক দুদিন পরে সেটার পানির প্রবাহ আবার কমে যায়।
 
ঝর্ণার ইংরেজি হল স্প্রিং, এই শব্দটি এসেছে জার্মান স্প্রিঙ্গার শব্দ থেকে, যার মানে হল, মাটির অভ্যন্তর থেকে বের হয়ে আসা।
 
বিভিন্ন ভাবে বিজ্ঞানীরা ঝর্ণার প্রকারভেদ করেছেন। আসুন আমরা সংক্ষেপে সেগুলো জেনে নিই।
 
গ্রাভিটি স্প্রিং: নাম শুনেই ধারনা করতে পেরেছেন, এখানে পানি জমে থাকার বিষয় আছে। বিভিন্ন সময় পাহাড়ে বা উঁচু জায়গায় যে বৃষ্টি হয়, সেগুলোর যেটুকু পানি মাটি চুষে নিতে পারে, আস্তে আস্তে করে গিয়ে জমা হতে থাকে মাটির এমন এক স্তরে, যেটা ভেদ করে পানি আর নিচে যেতে পারে না। এভাবে পানি জমা হতে হতে এক সময় সেই পানি সমান্তরালভাবে প্রবাহিত হতে থাকে এবং কোন এক নিচু এলাকা দিয়ে বের হয়ে সৃষ্টি করে ঝর্ণার।
 
মাটির ফোঁকড় দিয়ে বের হয়ে আসে মাটির গভীরে জমে থাকা পানি। ছবি: সংগৃহীত।
 
আর্টেশিয়ান স্প্রিং: এটাও মাটিতে জমে থাকা পানি, তবে এই পানি মাটির অনেক গভীরে জমে থাকে এবং বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক চাপে সেটা মাটির কোন ফাটল দিয়ে বের হয়ে আসে আর জন্ম দেয় ঝর্ণার।
 
সীপেজ স্প্রিং: মাটির নিচে বিশাল আকারে জমে থাকা পানি বিভিন্ন কারণে মাটির হালকা স্তর ভেদ করে আস্তে আস্তে উঠে আসে। বিশেষ করে নিচু জমিতে এটা বেশি হয়। এভাবে এক সময় সেই এলাকায় তৈরি হয় লেক বা বড় পুকুর মত। পানির পরিমাণ বেশি হলে এক সময় সেই লেক বা পুকুর এর পানি ভূমিতে প্রবাহিত হয়ে তৈরি করে ঝিরি বা খাল।
 
এছাড়াও আছে টিউবুলার স্প্রিং ও ফিশার স্প্রিং। আমরা দেখতে পেলাম মোটামুটি সব ঝর্ণাকে মূল দু ভাগে ভাগ করা যায়, এক হল বৃষ্টির পানি জমে জমে এক সময় বের হয়ে আসা, আর এক হল মাটির গভীরে জমে থাকা পানি বিভিন্ন কারণে বের হয়ে আসা। পৃথিবীর বেশিরভাগ ঝর্ণাই মাটির গভীরে জমে থাকা পানি বিভিন্ন কারণে তৈরি হওয়া চাপে বের হয়ে আসা পানিতে তৈরি হওয়া ঝর্ণা। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় উষ্ণ ঝর্ণা। আগ্নেয় এলাকায় মাটির নিচের পানি আগ্নেয়গিরি প্রভাবে গরম হয়ে উপরে চলে আসে। পৃথিবীতে বেশ কিছু উষ্ণ ঝর্ণা আছে, কয়েকটাতে তো পানি রীতিমত ফুটতে দেখা যায়।
 
সম্পাদনা: ড. জিনিয়া রহমান।
আপনাদের মতামত জানাতে ই-মেইল করতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।