
ছাগলকান্দা ঝর্ণা।
প্রিয় পাঠকের লেখাঃ ঘুরে এলাম বড় কমলদহ ট্রেইল!
আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৫৪
(প্রিয়.কম) অলস সময় যাচ্ছে। অফিসেও কাজ কম। মনটা চাচ্ছে বন্ধের দিনে কোথাও থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু বিষয়টা কারও সাথে আলাপ করা হয়নি। হঠাৎ স্বপন দাদার ফোন। সুমন, বাস্ত নাকি? অফিসে কাজ কেমন? একটা প্লান করতেছি, তুমি যাবা নাকি। মনে মনে ভাবছি, আমি তো এটাই চাচ্ছি। যা হোক জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাবেন এবং কয়দিনের প্লান? বললেন ১ দিনের জন্য সীতাকুণ্ড যাব। সাথে সাথে হ্যাঁ বলে দিলাম। গাড়ি ছাড়ার সময় রাত ১১.০০ টায় মিরপুর থেকে আর ১১.৪৫ টায় ফকিরাপুল থেকে। স্বপন দা বললেন ফকিরাপুল থেকে উঠতে, আমাকে নাকি দাদা আফতাব ভাইয়ের কাছে চমক হিসেবে রেখেছে এবং আমাকে বসানো হবে আফতাব ভাই এর পাশে। ফকিরাপুল পৌছলাম ১১.৩০ টায়। জানতে পারলাম বাস আসতে দেরি হবে। শুরু হল অপেক্ষা। যা হোক এর মধ্যে শুকনা খাবার, জল, স্যালাইন কিনে নিলাম। সময় রাত ১.০০ টা, বাস আসলো। আমরা সবাই উঠলাম। উঠতেই দেখি আফতাব ভাই গাড়ির সামনে বসে আছে। আমাকে দেখে সে তো অবাক। চমক হিসেবে সে আশা করেছিলো কোন এক মেয়ে তার সঙ্গী হবে। গাড়ি ছাড়ল, রাস্তায় একটু জ্যাম ছিল, এর পরও আমরা ৬.৩০ টায় সীতাকুণ্ডের বড় দারোগার হাট নেমে গেলাম।
আমাদের গাইড হিসেবে ছিলেন মাহবুব ভাই। ঘড়ির কাঁটা যখন ৮.০০ টা, আমরা তখন যাত্রা শুরু করলাম। আমাদের উদ্দেশ্য বড়কমলদহ ট্রেইল ঘুরে দেখা। সেখানে দেখব ছুরিকাঁটা ঝর্ণা, ছাগল কান্দা ও রূপসী ঝর্ণা এবং নাম না জানা অনেক গুলো ক্যাসকেড। আমরা বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যান হয়ে ঢুকলাম। আর একটি কথা, সবসময় টুরিস্টরা রূপসী ঝর্ণা দিয়ে এই ট্রেইলে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু আমরা শুরু করলাম পুরো উল্টো দিক থেকে।মাহবুব ভাই ওখানে এর আগে বেশ কয়েকবার গিয়েছেন তাই ওনার সকল রাস্তা জানা আছে। যা হোক আমরা বারইয়ারঢালার পাকা রাস্তা ধরে প্রায় ৩০ মিনিট হাঁটার পর ছোট একটা ঝর্ণা দেখতে পেলাম। যার নাম ঝরঝরি ঝর্ণা। ওটা ঝরঝরি ট্রেইল এর একটা শাখা। এই ঝর্ণাটি আমাদের যাওয়ার রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে গেছে। ৫ মিনিট হাঁটার পর পাকা রাস্তা থেকে কাঁচা রাস্তায় নেমে পড়লাম। একটু আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে, তাই রাস্তা কাদা পূর্ণ। তাছাড়া গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। ভয় হচ্ছিল যদি বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় তাহলে খুব খারাপ অবস্থা হবে। কারণ রাস্তাটা ছিল খুবই পিচ্ছিল ও কাদা মাখানো। কিন্তু বৃষ্টি জোরে নামলোনা সুতরাং আমরা ভাল ভাবেই রাস্তাটা নেমে গেলাম।
এর পর থেকে শুরু হল ঝিরিপথ। মনে মনে আনন্দ হচ্ছিলো কারণ ঝিরিপথে বেশ পানি পেয়েছি আমরা। আর একটা কথা যে ঝিরিপথ ধরে হাঁটলে শরীর ক্লান্ত হয়না। হাঁটতে হাঁটতে নাম না জানা বেশ কয়েকটা ক্যাসকেড পার হওয়ার পর আমাদের চোখের সামনে ধরা দিলো আমাদের প্রত্যাশিত ঝর্ণা যার নাম ছুরিকাঁটা ঝর্ণা। প্রায় ১ ঘণ্টা লেগেছে আমাদের এখানে আসতে। অসম্ভব সুন্দর ঐ ঝর্ণাটি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট উপর থেকে জলরাশি ঢেলে দিচ্ছে। মনে হচ্ছিলো পাহাড়ের পাথর ভেঙ্গে পড়ার মত। বেশ কিছুক্ষণ আনন্দ করার পর আমাদের চলার পথ ধরি। এটুকু আসতেই আমাদের কয়েকজন জোঁকের শিকারও হয়েছে। এখন শুরু হল আমাদের যাত্রা ঐ ঝিরিপথ ধরেই যে পথ ধরে আমরা যাবো ছাগলকান্দা ঝর্ণা দেখতে।
কিছুক্ষণ পর পর আমাদের স্বপনদা হেলে দুলে কাত চিত হয়ে শুয়ে পড়ে আর সবাইকে বলে ছবি তোল। কারণ সারা রাস্তাটাই ছবি তোলার মতো অসম্ভব সুন্দর। যতক্ষণ থাকবেন মনে হবে শুধু ছবি তুলি। যাই হোক আমরা পৌঁছে গেলাম ছাগলকান্দা ঝর্ণার পদতলে। ২০ ফুট এর মতো চওড়া একটা পাথরের গা বেয়ে একটা খুমের উপর ২০/২৫ ফুট নীচে ঝরঝরিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল। আমরা সবাই ব্যাগ ট্যাগ ফেলে দৌড়ে ঝর্ণাটির নিচে চলে যাই। আর কিছুক্ষণ ঝর্ণার জলে স্নান করে বেশ কিছু ছবি তুলে নিলাম। স্নান শেষে আমরা আবার ঐ ঝর্ণাটির উপরে উঠে গেলাম এবং বেশ কিছুদূর পর্যন্ত এগিয়ে গেলাম। ইচ্ছা ছিল উতপত্তিস্থল দেখা। কিন্তু আমাদের গাইড মাহবুব ভাই, ওনার পায়ে ব্যাথা হচ্ছিলো এবং আমাদের একজন মেম্বার ৯৮ কেজি ওজনের নিশান ভাইকে নিচে একা রেখে এসেছি। সব মিলিয়ে মাঝপথ থেকে আমাদের ফিরে আসতে হল। তবে আমরা প্রায় ৫/৬ টা ক্যাসকেড পার হয়ে গিয়েছিলাম। যাই হোক আমরা নিচে নেমে ভেজা কাপড়চোপড়গুলো চিপে আবার পরে নিলাম।
আবার শুরু হল হাঁটা। আমরা ঝিরিপথ ধরে হেঁটে চলেছি আর কিছুক্ষণ পর পর ক্যাসকেড পাচ্ছি যা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। পুরো রাস্তাটাই মনে হচ্ছে একটা পাথর যার গায়ে খোঁদাই করে করে ঝিরিপথটা তৈরি করা হয়েছে। দুপাশে ঘন জঙ্গল। হাঁটতে হাঁটতে এবার আমরা পৌঁছে গেলাম সুন্দরী ঝর্ণা রূপসীর অগ্রভাগে। সুবিশাল একটা পাথর এর গা বেয়ে বেয়ে জলরাশি নীচের দিকে বয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফুট ঝর্ণাটির দৈর্ঘ্য। ৩/৪ টা স্টেপ বেয়ে জলরাশি নীচের একটা খুমে পড়তেছে। যাকে দেখে মূগ্ধ না হয়ে পারবেন না। আমরা প্রত্যেকটি স্টেপে দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে যার যেমন মন চাইছে সময় কাটিয়েছি। প্রায় ১ ঘণ্টার মতো সময় আমরা এখানে ছিলাম। তখন সময় ১২ টার মতো বাজে। ক্ষুধাও লেগেছে। তাই এখান থেকে নেমে কাপড়চোপড় পালটিয়ে আবার ঝিরিপথ ধরে শহরের পথে হাঁটতে শুরু করি ঘরে ফেরার জন্য।
সম্পাদনাঃ ড. জিনিয়া রহমান
প্রিয় ট্রাভেল সম্পর্কে আমাদের লেখা পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে। যে কোনো তথ্য জানতে মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। ভ্রমণ বিষয়ক আপনার যেকোনো লেখা পাঠাতে ক্লিক করুন এই লিংকে-https://www.priyo.com/post
- ট্যাগ:
- ভ্রমণ