ছবি সংগৃহীত

যতদিন বাঁচবো ততদিন তরুণ হিসেবেই বাঁচবো: সুজিত মোস্তফা

মিঠু হালদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:২৬
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:২৬

সুজিত মোস্তফা/ ছবি: সংগৃহীত

(প্রিয়.কম) নজরুল সঙ্গীতশিল্পী এবং নজরুল গবেষক সুজিত মোস্তফা। ১৯৬২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, জন্মদিন পালন, নজরুল সঙ্গীত, ক্যারিয়ার ও অন্যান্য প্রসঙ্গে প্রিয়.কমের সঙ্গে আজ দুপুরে কথা বলেছেন তিনি।

প্রিয়.কম: জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

সুজিত মোস্তফা: আপনাকে এবং প্রিয়.কমকে ধন্যবাদ।

প্রিয়.কম: বিশেষ দিনটি উপলক্ষে আজ আপনি কি করছেন?

সুজিত মোস্তফা: সত্যি বলতে কি আমার কোন পরিকল্পনা নেই। আমাদের যে ‘নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পরিষদ’ আছে, সেখানে প্রতি মঙ্গলবার একটা সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান হয়; আর সেখানে গতকাল আরেকটু জমকালো একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আমার জন্মদিনটি পালন করা হয়েছে। ইন্দিরা রোডের আমাদের সে স্টুডিওতে কেক কাটা, ডিনার, গান-বাজনা অনেক কিছু উপহার পাওয়া ছাড়াও বেশ এলাহি কাণ্ড ঘটেছে। সেখান থেকে আমি বাসায় ফিরেছি পৌনে দশটায়। এরপরে আমি চলে গিয়েছি এসএ টিভিতে। এছাড়া ফেসবুকে হাজার হাজার মানুষের শুভেচ্ছা পেয়েছি। আর তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে জানাতে আমারও দিন শেষে হয়ে যাচ্ছে।

প্রিয়.কম: আপনার বয়স তো কম হলো না, এই নিয়ে ভাবলে ঠিক কি মনে হয়?

সুজিত মোস্তফা: প্রত্যেক সময়ের আলাদা স্বাদ আছে। সেটা শৈশব, কৈশোর, যৌবন কিংবা বৃদ্ধ। আরও বয়স বাড়বে, নতুন একটা স্বাদের মধ্যে যাবো। যৌবন আর তারুণ্যের সময়ে শরীরের মধ্যে যে সক্ষমতা বিরাজ করে। সবকিছু করে ফেলা, অধিকার করা, জয় করা। শারীরিক একটা প্রণোদনা কাজ করে। ওইদিক থেকে বিচার করলে এখন যৌবন, যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়। এখন যদি চিন্তা করেন-বলবো অতো আনন্দে নেই। তবে তারুণ্য বিষয়টা হচ্ছে মানুষের মনে। আমি যতদিন বাঁচবো ততদিন তরুণ হিসেবেই বাঁচবো।

প্রিয়.কম: আচ্ছা, সংগীত নিয়ে আপনার যে স্বপ্ন ছিল; সে লক্ষ্যে কতটুকু পৌঁছতে পেরেছেন?

সুজিত মোস্তফা: দেখুন ভাবনাটার দুটি দিক রয়েছে। যে লোকটা ভাড়ায় রিকশা চালায় সেও ভাবে একদিন রিকশার মালিক হবে। আমারও স্বপ্ন অনেক বড় ছিল। আমি অনেক ভালো গান গাইবো। আমাকে অনেক মানুষ চিনবে, শুনবে, আমি অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত হবো। সে রকমটা হয়ে উঠে নি। আর স্বপ্নের কাছে পৌঁছুতে পারে খুব কম মানুষ। আর স্বপ্ন আছে বলেই মানুষের বেঁচে থাকা। আবার কেউ কেউ তার সে স্বপ্নকে ছাড়িয়েও যায়। আমি যে আমার স্বপ্নের খুব কাছে যেতে পেরেছি তা বলব না।

এখন আমি আমার একটা স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছি, আমি তো নজরুল শিল্পী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। আমার কাজ হলো নজরুলের গান ও চেতনা সারা দেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। এখন এই স্বপ্নযাত্রা চলছে। সারাদেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে নজরুলের গান ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে কাজ করছি। আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাদের খুঁজে বের করি। প্রশিক্ষণ দেই। আমার যতটুকু যোগাযোগ আছে ততটুকু দিয়েই তুলে আনার চেষ্টা করি। আর নজরুল চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমার বেশ কিছু কার্যক্রম আছে।

তবে অর্থটা সেভাবে পাই নি। আমার ধারণা, সেটি পেলে আমি সেভাবে কাজ করতে পারব। সাংস্কৃতিকভাবে আমরা আরও সমৃদ্ধ হতে পারব। আর এখন পড়াশোনার বিষয়টা এমন হয়ে গিয়েছে- না তারা সৃজনশীল বিষয়গুলো শিখছে, না তারা সাংস্কৃতিকভাবে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করছে। এই জায়গাটা পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করছি। জানি না আসলে সফল হবো কি না।

প্রিয়.কম: আমাদের দেশের সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে নজরুল সংগীতকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়ার বিষয়টা ঠিক কতটা পোক্ত হয়েছে?

সুজিত মোস্তফা: শুধু নজরুলসঙ্গীত নয়। দুটো বিষয়ে আমাদের মনোযোগ থাকা দরকার; তারমধ্যে একটি হলো কপিরাইট ইস্যু। কপিরাইট ফোরাম যে রয়েছে তার সিইও আমি। কিন্তু সেটি তো ঠিকভাবে কাজ করছে না। কারণ আমরা কাজ করতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছি। অন্যান্য গানের পাশপাশি নজরুলসঙ্গীতের যে শিল্পীরা যদি সমানভাবে জনপ্রিয়তা পায়; তাহলে তারা তাদের রয়্যালিটি দিয়ে ভালো একটি জায়গায় যেতে পারবে। হয়তো একজনশিল্পী কিছুদিনের জন্য জনপ্রিয়তা পান।

এরপর আর সেরকম কোন খবর থাকে না। বাস্তবতা হলো এখন নজরুলের গানের চাহিদা অনেক কম। যদি সঠিকভাবে সৃষ্টি করা যায়; তাহলে নজরুলের গানকে কেন্দ্র করে শিল্পীরা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। কিন্তু এ ক্ষেত্র তৈরি করতে গেলে আমাদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আরও বরাদ্দ বাড়াতে হবে। আর গত বছর আমাদের সংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাজেটের পরিমাণ ছিল পয়েন্ট ওয়ান পারসেন্টেরও কম। আর সংস্কৃতি বান্ধব একটা সরকারের সময়ে আমরা খুব ছোট একটা বাজেট নিয়ে কথা বলছি।

সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য টাকা দিতে গেলে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা কেন জানি পিছু পা হয়ে যান। গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করেন না। আর একটা জাতি তখনই ঠিকভাবে সামনে এগুবে, যখন সংস্কৃতির সঙ্গে জ্ঞানের মেলবন্ধন ঘটবে। বিষয়টা হলো দৃশ্যত চেষ্টা আছে কিন্তু আসল কাজের কোন খবর নেই। আমাদের দেশে সবকিছুরই আইন রয়েছে। কিন্তু প্রয়োগের দুর্বলতা রয়েছে।

প্রিয়.কম: বর্তমান প্রজন্মের নজরুল শিল্পীদের নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

সুজিত মোস্তফা: নজরুলের গান এক সময় জনপ্রিয় ছিল। সত্যিকথা বলতে এখন এ গানের কোন জনপ্রিয়তা নেই। জনপ্রিয় করার জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া দরকার, আমরা যারা গান করি-আমাদের ভাবনাগুলো আরও বর্ধিত হওয়া দরকার। আর বিষয় হলো ক্ষমতা আছে অন্য মানুষদের হাতে যারা বিষয়গুলো অতোটা বুঝেন না। অর্থ আর ক্ষমতা থাকা এমন একটা ব্যাপার কিছু হোক বা না হোক? তারা মনে করেন তারাই সবকিছু। যদি তারা বৈষয়িক স্বার্থটা দেখতেন তাহলে ঠিকই তারা আমাদের ডাকতেন, আমাদের ভাবনাগুলো শুনতেন। আমার ধারণা তারা যদি আরও আগে থেকে সে বিষয়গুলোতে নজর দিতেন তাহলে নজরুল সঙ্গীত আরও বেশি জনপ্রিয় হতো।

প্রিয়.কম: সামনের দিনগুলোর জন্য কোনো লক্ষ্য ঠিক করেছেন?

সুজিত মোস্তফা: আমি একটা স্কুল প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমার একটা চুক্তি হয়েছে। আমি নজরুলের ১২টা গান অনেকগুলো যন্ত্র ব্যববহার করে তৈরি করব। যারা গাইবেন তারা অত বিখ্যাত শিল্পী নন। কিন্তু তারা ভালো গান করেন। এই গানগুলোর উপর বাচ্চারা পরীক্ষা দেবেন। বিষয়টা হলো গান শোনার পরীক্ষা। আর কেন তারা এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে?

কারণ এতে ভালো পুরস্কার আছে। আর ভালো করার উপায় একটাই যে গানগুলো ভালো করে শুনবে। অ্যানালগ আর ডিজিটাল টেকনলোজির সম্মিলন বিষয়টা করা হবে। এটা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত। যে প্রথম হবে সে পাবে ১৫ লাখ টাকা, দ্বিতীয় ১০ লাখ। তৃতীয় ৫ লাখ টাকা।

এরকম সাড়ে ৬২ লাখ টাকার পুরস্কার আছে। বিষয়টা হলো-পুরস্কার মূল কথা নয়। যারা গানগুলো ভালো করে শুনবে, তাদের মধ্যে নজরুলের গানের বিষয়টা এমনিতেই ঢুকে যাবে। কারণ সারাদেশে যতগুলো স্কুল আছে তার সব বাচ্চারা অন্তত পক্ষে ১২টি গানের সঙ্গে পরিচিতি হবে। আমি এই প্রজেক্টটা নিয়ে কাজ করছি। কাজটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

প্রিয়.কম: প্রিয়.কমকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

সুজিত মোস্তফা: প্রিয়.কমকেও ধন্যবাদ।

সম্পাদনা: গোরা / শামীমা সীমা