কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবিটি সংগৃহীত।

বৃষ্টি নামানোর প্রচলিত কিছু মিথ

শিবলী আহমেদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৪ মে ২০১৭, ১৯:১৮
আপডেট: ২৪ মে ২০১৭, ১৯:১৮

(প্রিয়.কম) একটানা তাপদাহে মাঠ ঘাট চৌচির! শহর কিংবা গ্রাম- সর্বত্রই গরমের প্রাদুর্ভাব। এরকম আপদ কোনো নতুন বিষয় নয়। বরং প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ গরম খরা ও অনাবৃষ্টিজনিত সমস্যায় পতিত হতো। কিন্তু প্রকৃতিকে তুষ্ট করতে মানুষ যুগে যুগে তৈরি করেছে কিছু মিথ। হতে পারে ‘মিথ’ মানেই ‘মিথ্যা’। কিন্তু কাকতালীয় ঘটনাকে অস্বীকার করার জো নেই। দু একটি মিথ মিলে যদি- দুয়ে দুয়ে চার হয়ে যায়, ব্যস! কে আর পায়! সেটিই হয়ে ওঠে কুসংস্কার আচ্ছন্ন সংস্কৃতি। মানুষ বিশ্বাস করে আনন্দ পায়, তা সেই বিশ্বাসের পেছনে কোনো ভিত্তি থাকুক কিংবা নাই-ই থাকুক। বৃষ্টি নামানোর জন্যেও মানুষ বহুযুগ ধরে শরণাপন্ন হয়েছে মিথের দ্বারে। তেমনই কিছু মিথ সম্পর্কে জেনে নিন।

কুয়োর ছবিটি সংগৃহীত।

কুয়োতে কুমারী উৎসর্গ: প্রাচীনকালে বৃষ্টি নামানোর জন্য একটি সুন্দরী কুমারী মেয়েকে উৎসর্গ করার প্রথা ছিল। নানা অর্ঘ্যসহ উৎসর্গ করা হতো একটি কুমারী মেয়েকে! সমাজের লোকজন দলবল বেঁধে ঢোল বাদ্য বাজিয়ে মেয়েটিকে সারা গ্রাম ঘোরাত। এরপর মেয়েটিকে ফেলে দিত কুয়ার মধ্যে! বেচারি।

জোড়া ব্যাঙ। ছবি: সংগৃহীত।

ব্যাঙের বিয়ে বা বদনার বিয়ে: কুয়া পদ্ধতি ছাড়াও বিয়ে পদ্ধতিতে বৃষ্টি নামানোর প্রচেষ্টা করেছে মানুষ। বিয়ে বলতে মানুষের সঙ্গে মানুষের নয়, বরং ব্যাঙের সঙ্গে ব্যাঙের কিংবা বদনার সঙ্গে বদনার বিয়ে দিয়ে বৃষ্টি নামানোর প্রচেষ্টা চলত মানুষের মধ্যে। সেটা এখনও চলে দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে।

কাদা মাখামাখির প্রতীকী ছবিটি সংগৃহীত।

কাদা মাখানো: বিয়ে পদ্ধতি তো গেল। এরচেয়ে মজার পদ্ধতি হচ্ছে ‘কাদা পদ্ধতি’। এই পদ্ধতিতে মেয়েরা কলসি কাঁখে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘোরে। অতঃপর মাটিতে পানি ঢেলে কাদা তৈরি করে, সেই কাদা একে অপরকে আচ্ছা করে মাখিয়ে দেয়।

প্রতীকী ছবিটি সংগৃহীত।

হুদমা গান: এখানেই শেষ নয়। আদিবাসী মেয়েরা বৃষ্টি নামানোর জান্য রাতের বেলা দলবেঁধে রীতিমত বিবস্ত্র হয়ে ‘হুদমা’ গান গায়। হুদমা হচ্ছে মেঘের দেবতা। কৃষক রমণীরা রাত্রিবেলা নগ্ন হয়ে কৃষিক্ষেতে নাচ-গান করে এবং জমিতে পানি ঢেলে কৃত্রিম চাষের অভিনয় করে।

মেঘরানীর প্রতীকী ছবিটি সংগৃহীত।

মেঘরানী উৎসব: বাংলাদেশের ফরিদপুরে বৃষ্টি নামানোর জন্য উদ্ভাবিত হয়েছিল মেঘরানী উৎসব। কিশোর কিশোরীরা দল গান গেয়ে গেয়ে গ্রাম ঘুরে ঘুরে মানুষের বাড়ি থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে সেসব রান্না করে সবাই মিলে খায়। উক্ত দলের মধ্যে একজনকে ‘মেঘরানী’ সাজতে হয়। যে কেউ কিন্তু মেঘরানী হতে পারবে না। তাকে হতে হবে বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যাসন্তান। মেঘরানী বলে কথা!

কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রতীকী ছবিটি সংগৃহীত।

চীনের অভিনব পদ্ধতি: এছাড়াও চীন বৃষ্টি নামাতে অভিনব এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে বেশ কয়েক বছর আগেই। গতবছর ভারতও নাকি তাদের পদাংক অনুসরণ করেছিল। অভিনব পদ্ধতিটি হচ্ছে- আকাশে রকেট পাঠিয়ে মেঘের মধ্যে সিলভার আয়োডাইজড লবণ ছিটিয়ে দিলে সেই মেঘ পানিতে পরিপূর্ণ হয় এবং বৃষ্টি নামে। চীন এই পদ্ধতিতে সফলতা অর্জন করেছে।

বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা। ছবি: সংগৃহীত।

ব্রত পালন: বৃষ্টি নামাতে ‘পুণ্যিপুকুর ব্রত’ ও ‘বসুধারা ব্রত’ নামক দুটি ব্রত প্রচলিত রয়েছে। বৃষ্টি আনতে এই দুটি ব্রত পালন করতে হয়।

এগুলো ছাড়া বৃষ্টি নামাতে চাইলে যেসব গান গাইতে হয়, সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু গান হচ্ছে:

১) ও মেঘ সাজোলো,

কালা কইতম দিমু গো,

চিনা ক্ষেতে চিনচিনানি,

ধান ক্ষেতে আডু পানি,

হ্যাদেলো বুন মেঘারানী,

মেঘারানীর ভাঙ্গা ঘর,

বেইল পরে আড়াই কর,

একটা সুপারি একটা পান,

এতের কুলা বেতের বান,

ঝবঝবাইয়া বিষ্টি নাম।’

২) আল্লাহ মেঘ দে পানি দে

ছায়া দেরে তুই

আল্লাহ মেঘ দে।

আসমান হইলো টুডা টুডা

জমিন হইলো ফাডা

মেঘ রাজা ঘুমাইয়া রইছে

মেঘ দিব তোর কেডা

আল্লাহ মেঘ দে।

৩) আমের পাতা দিয়ে

ছাইছিলাম ঘর, তাতে মানে না

পানির ভর।

দেয়া তুমি নামবে,

অলকে ঢলকে নাম।

(সমস্ত তথ্য ও ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

সম্পাদনা: শামীমা সীমা/ ফারজানা রিংকী