ছবি সংগৃহীত

প্রথম চুরি করেছিলাম দুই টাকা : ধ্রুব এষ

সাদিয়া ইসলাম
লেখক
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ০৬:৫৪
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ০৬:৫৪

নিজের ছবি আর একাকীত্ব- এই নিয়েই বেশিরভাগ সময় কাটে তার। ছবি: সংগৃহীত

(প্রিয়.কম) বাংলাদেশের প্রচ্ছদশিল্পীদের নাম বলতে গেলে যাদের কথা প্রথমেই চলে আসে এই মানুষটি তাদেরই একজন। ছোটবেলায় তিনি পরিবার থেকে পেয়েছেন প্রচণ্ড উৎসাহ। একেকটা অগোছালো ছবি এঁকে সবাইকে ছুটে গিয়ে দেখিয়ে বেড়ানো, এই ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। তখন অবশ্য কেউ তাকে তেমন একটা পাত্তা দিত না। আর এখন ব্যাপারটা পুরোই উল্টো। দেশের বিখ্যাত সব লেখক আর প্রকাশনীগুলো তার আঁকা ছবি ছাড়া চলেই না। জ্বি, বলছিলাম নিরলস আর প্রতিভাবান আঁকিয়ে ধ্রুব এষের কথা। নানা পেশা পার হয়ে গ্রাফিক্সে থিতু হওয়া এই মানুষটিকে খুঁজে পাওয়া যায় না কোথাও। নিজের ছবি আর একাকীত্ব- এই নিয়েই বেশিরভাগ সময় কাটে তার। ছবির সাথে কথা বলা এই মানুষটি ব্যস্ততার কিছু মুহূর্ত দিয়েছিলেন প্রিয়.কম কে।

প্রিয়.কম : ছোটবেলার ধ্রুব এষ কেমন ছিলেন? তিনিও কী বড়বেলার ধ্রুবের মতোই এত চুপচাপ ছিলেন?

ধ্রুব এষ: কথা সত্যি। অনেক বেশি চুপচাপ ছিলাম। একদমই দস্যি ছিলাম না। গাছে চড়তাম না, দুষ্টুমি করতাম না। বন্ধু ছিল বেশ কয়েকজন। তাদের সঙ্গেই ঘুরতাম। খুব বেশি কথা বলতাম না। নিজের মতো করেই থাকতে চেষ্টা করতাম। অনেকটা যাকে বলে নির্ভেজাল ভালো মানুষ।

প্রিয়.কম : তাহলে কী ছোটবেলার কোনো মজার অভিজ্ঞতাই নেই?

ধ্রুব এষ : না! তা থাকবে না কেন। (বলতে গিয়ে বেশ হাসি হাসি মুখ করে পুরনো একটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে যান শিল্পী।) ছোটবেলাতে এমন একটি মজার ঘটনা ঘটেছিল যাকে এক কথায় বলা যায় ‘প্রথম চুরির ঘটনা’।

প্রথম চুরি করেছিলাম দুই টাকা, তাও আবার বাবার পকেট থেকে। তখন আমি ক্লাস টু’তে পড়ি। তখন দুই টাকা মানে অনেক টাকা। সেই টাকা নিয়ে বাড়ির পাশের সুলতান ভাইয়ের দোকানে গিয়েছিলাম। ভাই আমার হাতে এত টাকা দেখে একটু অবাক হয়েছিলেন। হাতে চা আর বিস্কুট ধরিয়ে দিয়ে বললেন, তুই বস আমি একটু আসছি। এর অনেকক্ষণ পর আমি যখন বাড়ি ফিরলাম তখনই বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। সুলতান ভাই তখন আমাদের বাড়ির ভিতরে। মিটমিট করে হাসছে। ধরা পড়ে গেলাম। তখন আমার এক পিসতুতো ভাই ছিল। সে আমাকে একটা শাস্তি দিল। আমাকে নিয়ে গোটা গ্রাম ঘোরালো। এ-বাড়ি ও-বাড়ির যে-ই জানতে চায় কী হয়েছে, তাকেই বলল, চুরি করে ধরা পড়েছে। অপমান ঠিক লেগেছিল কিনা মনে নেই। তবে ঘটনাটা বেশ মনে আছে আমার। আসলে আমি তো শান্তই ছিলাম। কিন্তু আমার বন্ধুরা যে দুষ্টুমিগুলো করত সেগুলোর সঙ্গে সঙ্গে থাকতাম আর কি। মাছ ধরার সময়ও ওরা ধরত আর আমি পাড়ে দাঁড়িয়ে সেগুলোকে দেখতাম। নিজে সেভাবে চুরি করতাম না। 

প্রিয়.কম : পড়াশোনায় কেমন ছিলেন? সেখানেও কী প্রথম সারিতেই ছিলেন?

ধ্রুব এষ : আমার স্মৃতিশক্তি ভালো ছিল। পড়াশোনায় সেটা আমি খরচ করতে চাইনি। তাই খুব একটা ভালো ছাত্র ছিলাম না। আবার একেবারে খারাপও ছিলাম না। 

তবে লেখাপড়ায় মন না থাকলেও পাঠ্যবইয়ের বাইরে থাকা বইয়ের জগৎ নিয়ে প্রচণ্ড কৌতূহল ছিল আমার। অভ্যাস ছিল প্রচুর বই পড়ার, যেটা রয়ে গেছে আজও। তবে নিজের বই পড়ার এই আগ্রহের কারণ আমার মা।

প্রিয়.কম : প্রচ্ছদশিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে কোনো বিশেষ ব্যক্তিত্ব ছিল কী?

ধ্রুব এষ : ঐ যে আমার মা। আমার মায়ের মতো পড়ুয়া আর কাউকে দেখিনি আমি আজ পর্যন্ত। সকালে বই, দুপুরে খাওয়ার পরে বই, রাতে খাওয়ার পরে বই, সারাক্ষণ বইয়ে নাক ডুবিয়ে রাখত মা। অনেক বই ছিল তার। সেই বই পড়তাম আমিও। আর পড়তে পড়তেই একটা সময় প্রচ্ছদ আঁকব বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।

সেসময় থেকেই জানতাম যে, আমি প্রচ্ছদ আঁকব। কেবল আমি না, সবাই জানত যে আমি প্রচ্ছদশিল্পী হব। তবে আমাদের বাড়িটা ছিল মফস্বলে, সিলেটের সুনামগঞ্জের ভাঁটি অঞ্চলে। সেখানে এমন কিছু করার খুব বেশি সুযোগ ছিল না। তাই ঢাকায় পড়তে আসি।

প্রিয়.কম : সফল প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব’র জীবনে কী কোনো শূন্যতা আছে?

ধ্রুব এষ : না। শূন্যতা তেমন একটা নেই। তবে মাঝে মাঝে মনে হয় আমার একটা বোন থাকলে হয়ত ভালো হত। বড় বা ছোট, একটা বোন যদি থাকত আমার, অনেক সমস্যাই আর জীবনে আসত না।

প্রিয়.কম : এখন কী নিয়ে ব্যস্ত?

ধ্রুব এষ: সামনে বইমেলা, সেটা নিয়েই এখন বেশিরভাগ সময় কাটছে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে যাওয়ার মতো অবস্থা। 

প্রিয়.কম : অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনার ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। ভালো থাকবেন। 

সম্পাদনা : ফারজানা রিংকী/ গোরা