
মোস্তাফা জব্বারের ছবিটি তার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত
মন্ত্রী হচ্ছেন মোস্তাফা জব্বার
আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:৩০
(প্রিয়.কম) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পাচ্ছেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি ছাড়াও একজন প্রতিমন্ত্রী ও কয়েকজন সংসদ সদস্য ২ জানুয়ারি মঙ্গলবার বঙ্গভবনে ডাক পেয়েছেন। এ দিন সন্ধ্যায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বণ্টন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পদটি শূন্য রয়েছে।এই মন্ত্রণালয়ে টেকনোক্রেট মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার।
এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগে পৃথক প্রতিমন্ত্রী রয়েছে। এর মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে তারানা হালিম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে জুনাইদ আহ্মেদ পলক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
একই দিন বঙ্গভবনে ডাকা হয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাংসদ একেএম শাহজাহান কামালকে। তাদের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পদ শূন্য থাকায় এর দায়িত্ব পেতে পারেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। অন্য দুজনকেও কোনো মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কাজী কেরামত আলী রাজবাড়ী-১ আসন থেকে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একেএম শাহজাহান কামাল লক্ষ্মীপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য বর্তমানে মুক্তিযুক্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, মন্ত্রিপরিষদে নতুন মন্ত্রী যোগ হওয়া ছাড়াও দুই একজন বিতর্কিতরা বাদ পড়তে পারেন। কারও কারও দফতর বদলও হতে পারে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে যাওয়া মোস্তাফা জব্বার জাতীয় সংসদের সদস্য না হওয়ায় বর্তমান সরকারের চতুর্থ টেকনোক্রেট মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। মন্ত্রিসভায় অন্য টেকনোক্রেট মন্ত্রী যারা রয়েছেন তারা হলেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে মতিউর রহমান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে নুরুল ইসলাম বিএসসি।
মোস্তাফা জব্বারের জন্ম ১৯৪৯ সালের ১২ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার চর চারতলা গ্রামের নানার বাড়িতে। পৈত্রিক সম্পত্তি পাওয়ায় বাবা আব্দুল জব্বার তালুকদার পাটের ব্যবসার পাশাপাশি একজন পুরোদস্তর কৃষক ছিলেন। মা রাবেয়া খাতুন গৃহিনী। মোস্তাফা জব্বারের বাবা দুটি বিবাহ করেছিলেন এবং তিনি দ্বিতীয় পরিবারের সন্তান। বাবার প্রথম সংসারে এক বোন ছিল আর দ্বিতীয় সংসারে তিন ভাই ও দুই বোন। নিজের পরিবারে বড় মোস্তাফা জব্বার। মেঝ ভাই কিবরিয়া জব্বার নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী থানা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সেঝ ভাই এফবিসিসিআই-এর সাবেক পরিচালক ও আনন্দ প্রিন্টার্সের মালিক রাব্বানী জব্বার। বোন নিলুফার বেগম গৃহিনী। তার স্বামী নেত্রকোনা জেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। আরেক বোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন।
দাম্পত্য জীবনে দুটি বিয়ে করেছেন মোস্তাফা জব্বার। ১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী রোকসানা সুলতানাকে বিয়ে করেন তিনি। রোকসানা সুলতানা বেসরকারি সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের পরিচালক। এই সংসারে তাদের দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বড় মেয়ে সাবরিনা শারমিন পেশায় চিকিৎসক এবং ছোট মেয়ে সুনন্দা শারমিন তন্বী একজন স্থাপত্যশিল্পী। এই মেয়ের নামেই জনপ্রিয় বাংলা ফন্ট সুতন্বী এমজি নির্মাণ করেন মোস্তাফা জব্বার।
১৯৮৯ সালে নারী মুক্তিযোদ্ধা আমেনা সুলতানা বকুলের সঙ্গে দ্বিতীয় সংসার জীবন শুরু করেন মোস্তাফা জব্বার। এই পরিবারের একমাত্র সন্তান বিজয় জব্বার। যার নামে সব সফটওয়্যার তৈরি। বিজয় মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্সে গ্র্যাজুয়েশন করছেন।
মোস্তাফা জব্বারের প্রথম আয় ছিল ১৯৬৯ সালে রেডিওতে একটি যুব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে সাপ্তাহিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় সাংবাদিক পেশাদার কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তখন বেতন ছিল মাত্র ১০০ টাকা। এরপর সাপ্তাহিক থেকে পত্রিকাটি দৈনিক হয়। ৭৫'র জানুয়ারি পর্যন্ত পত্রিকাটিতে তিনি কর্মরত ছিলেন। গণকণ্ঠ বন্ধ হয়ে যাবার পর তিনি ট্রাভেল এজেন্সি, প্রকাশনাসহ আরও কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায় যুক্ত হন।
১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তার লেখা বাংলাদেশের প্রথম গণনাট্য এক নদী রক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্রে (বর্তমান টিএসসি) মঞ্চস্থ হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
এরপর ১৯৮৭ সালের কম্পিউটার ব্যবসায় যোগ দেন মোস্তাফা জব্বার। তখন মেকিন্টোস কম্পিউটারই ছিল একমাত্র ভরসা। একই বছরের মে মাসে দেশে প্রথম কম্পিউটারে কম্পোজ করা বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা আনন্দপত্র প্রকাশ করেন তিনি। এরপর থেকেই চিন্তা করেন কীভাবে বাংলা ভাষাকে কম্পিউটারে আরও সহজলভ্য এবং জনপ্রিয় করতে উদ্যোগ নেন তিনি। সে ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেকিন্টোস কম্পিউটারের জন্য প্রকাশ হয় বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যার। পরে ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ প্রকাশ করেন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম সংস্করণ। এ ছাড়াও ডিজিটাল বাংলা নিউজ সার্ভিস 'আনন্দপত্র বাংলা সংবাদ' বা আবাসের চেয়ারম্যান ও সম্পাদক তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের পক্ষে নির্বাচন করে সূর্যসেন হলের নাট্য ও প্রমোদ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর একই বছর তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ইতিপূর্বে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির নির্বাহী পরিষদের সদস্য, কোষাধ্যক্ষ ও সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮-০৯ সময়কালে তিনি দ্বিতীয় এবং ২০১০-১১ সালে তিনি তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পরবর্তী মেয়াদেও তিনি এই সমিতির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কপিরাইট বোর্ড এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কাউন্সিল সদস্য।
কম্পিউটার বিষয়ে অনেকগুলো বই বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন মোস্তাফা জব্বার। নবম ও দশম শ্রেণীর কম্পিউটার বিষয়ক পাঠ্যপুস্তক মাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষা বইটির লেখক তিনি। তার লেখা ‘কম্পিউটার ও ইনফরমেশন টেকনোলজি’ এবং ‘একাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম’ স্নাতক পর্যায়ের পাঠ্য বই। উচ্চ মাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষা, দুই খণ্ডের প্রাথমিক কম্পিউটার শিক্ষা, মাল্টিমিডিয়া ও অন্যান্য প্রসঙ্গ ছাড়াও তার লেখা কম্পিউটারে প্রকাশনা, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল ও তার সম্পাদিত কম্পিউটার অভিধান ব্যাপকভাবে প্রচলিত কম্পিউটার বিষয়ক বই।
তার প্রথম উপন্যাস নক্ষত্রের অঙ্গার ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে। সুবর্ণে শেকড় নামে আরেকটি উপন্যাস তিনি লিখছেন। এ ছাড়াও কম্পিউটার কথকতা, ডিজিটাল বাংলা, একুশ শতকের বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, একাত্তর ও আমার যুদ্ধ তার লেখা বইগুলোর অন্যতম। তথপ্রযুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখা ও বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যার তৈরির করার জন্য তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেরা সফটওয়্যারের পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গের কমপাস কম্পিউটার মেলার সেরা কমদামী সফটওয়্যারের পুরস্কার, দৈনিক উত্তরবাংলা পুরস্কার, পিআইবির সোহেল সামাদ পুরস্কার, সিটিআইটি আজীবন সম্মাননা ও আইটি এ্যাওয়ার্ড, বেসিস আজীবন সম্মাননা পুরস্কার ও বেস্টওয়ে ভাষা-সংস্কৃতি পুরস্কারসহ ১৬টি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
প্রিয় সংবাদ/রিমন