মায়ের সঙ্গে সিফাত। ছবি: সংগৃহীত

১৬ মাস পর নিখোঁজ সন্তানকে পেলেন মা

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ মে ২০১৮, ২০:৪৩
আপডেট: ০২ মে ২০১৮, ২০:৪৩

(প্রিয়.কম) গত বছরের ৬ জানুয়ারি। সেদিন নিখোঁজ হয় ছয় বছরের শিশু সিফাত। তার মা তাকে অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। কোথাও না পেয়ে অবশেষে বাড্ডা থানায় ওই দিন সন্ধ্যায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজ সিফাতের জন্য কেঁদে কেঁদে চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মা মোছা. স্মৃতির। প্রিয় সন্তানের মধুর স্মৃতিগুলো মুছে যাচ্ছিল। সন্তানের মুখটি দেখতে পাবেন— এমন আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই হারানো সন্তানকে ফিরে পেলেন। তাও হারানোর ১৬ মাস পর। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায়।

হারানো সন্তানকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আপ্লুত মা স্মৃতি বেগম। তার স্বামী মো. কামাল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। অসুস্থ স্বামী, দুই সন্তানকে নিয়ে স্মৃতি থাকতেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বড় পাল্লা গ্রামে। আয় না থাকায় সংসার চলছিল না। তার ওপর অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার খরচ। সব মিলিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন স্মৃতি বেগম। তাই বাধ্য হয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে ছুটে আসেন রাজধানীর বাড্ডা এলাকায়। অন্যের বাসায় কাজ করেন আর দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন বাড্ডার আনন্দনগর এলাকায়।

দুই সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে আর স্বামীর অসুস্থতার খরচ জোগাতে সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হতো স্মৃতি বেগমকে। এরই ফাঁকে ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছাকৃত অবহেলায় হোক, গত বছরের ৬ জানুয়ারি ভাড়া বাসার পাশে খেলতে খেলতে হারিয়ে যায় সিফাত। মা স্মৃতি তাকে অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরও না পেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর থেকে সিফাতের কোনো হদিস পায়নি পরিবার। স্মৃতি বেগমও আকুল ছিলেন সন্তানকে কাছে পেতে। কিন্তু জীবিকার ব্যস্ততায় সন্তানকে খোঁজার সময় হয়ে ওঠে না তার।

অন্যদিকে নিখোঁজের দিন রাতে সিফাতকে হাতিরঝিল এলাকা থেকে আবিষ্কার করেন শাহবাগের চা দোকানি আনোয়ার হোসেন (৩৫)। তিনি সিফাতকে পেয়ে সোজা চলে যান শাহবাগ থানায়। শাহবাগ থানা পুলিশ নিখোঁজ শিশু সিফাতের পরিচয় তখন বের করতে পারেনি। সেই সময় পরিচয়হীন সিফাতকে নিজের কাছে রাখার আকুতি জানান আনোয়ার। টানা ১৬টি মাস তার কাছেই ছিল সিফাত। নিঃসন্তান হওয়ায় নিজের সন্তানের মতোই আদর-যত্ন করতেন। তিনি বুঝতেই পারেননি সিফাতকে একদিন ফেরত দিতে হবে তার আসল বাবা-মায়ের কাছে।

পুলিশ জানায়, গতকাল ১ মে সিফাতের মা স্মৃতি বেগম একটা কাজের জন্য গিয়েছিলেন কাকরাইল এলাকায়। সেখানে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সামনে দেখতে পান হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে। দূর থেকে দেখে নিজের সন্তানের মতো লাগছিল তাকে। কিন্তু মা কাছে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। অবশেষে ভয়-ভয় করে কাছে যান। চা দোকানি আনোয়ারকে খুলে বলেন নিজের সন্তান হারানোর গল্প। সেদিন কিছুতেই পাত্তা দেননি আনোয়ার। তাই বাধ্য হয়ে স্মৃতি বাড্ডায় থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান।

অবশেষে বাড্ডা থানা পুলিশ সিফাতকে উদ্ধার করে মা স্মৃতির কাছে ফিরিয়ে দেয়। বুকের ধনকে কাছে পেয়ে এক সুখের কান্নায় ভরে ওঠে স্মৃতির মন। দীর্ঘদিন পর পেটের সন্তানকে ফিরে পাওয়ায় কান্নায় আপ্লুত হয়ে পড়েন।

স্মৃতির চাচাশ্বশুর রাজিব হোসেন বলেন, ‘সিফাতরে অনেক কষ্ট কইরা পাইছি। তার মায়ে তো কাইন্দা কাইন্দা পাগল হইয়া গেছিল। আশা ছাইড়া দিছিল। তয় তারে চা দোকানি আনোয়ার কাছে না রাইখলে হাইরায় যাইতো। আল্লাহ আনোয়ারের ভালো করুক।’

সিফাতকে উদ্ধারকারী এসআই কামরুল হাসান প্রিয়.কমকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ মাস থেকে নিখোঁজ ছিল সিফাত। আমরাও তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। অবশেষে তাকে শাহবাগের চা দোকানি আনোয়ারের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আনোয়ারের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। সেও চেয়েছিল নিখোঁজ সিফাতকে নিজের সন্তানের মতোই বড় করতে।’

বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী ওয়াজেদ আলী প্রিয়.কমকে বলেন, ‘শিশুটিকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে তার মা-ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ কারণে তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়েছে।’

প্রিয় সংবাদ/আজাদ চৌধুরী