
ছবি সংগৃহীত
প্রিয় গন্তব্য: বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:৫৩
আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:৫৩
আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:৫৩
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। ছবি: ড. জিনিয়া রহমান।
(প্রিয়.কম) ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সম্মিলনে অসাধারণ কারুকার্যময় কিছু বাড়ি নিয়ে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। এটি দেখতে হলে যেতে হবে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায়। প্রায় ২০০ বছর পুরাতন জমিদার বাড়িটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও।
জানা যায় আনুমানিক ১৭৯০ খৃষ্টাব্দে এই জমিদার বাড়িটির গোড়াপত্তন হয়। নিবৃত্ত সাহা পরিবার থেকে এই জমিদার বংশের উদ্ভব। মহেশ রাম সাহা নামে জনৈক বৈশ্য, বারেন্দ্র শ্রেণীর ছোট্ট এক কিশোর ভাগ্য অন্বেষণে বালিয়াটিতে আসেন। সেখানে জনৈক পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকরি নেন তিনি। চাকরিতে নিজের যোগ্যতার যথাযথ প্রমাণ দেন এবং এখানেই বিয়ে করেন। মহেশ রামের এক ছেলে হয়, যার নাম গণেশ রাম। গণেশ রাম তার পিতার আনুগত্যতায় লবণের ব্যবসা শুরু করেন এবং তার মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে লবণের ব্যবসায় বেশ উন্নতি লাভ করেন।
গণেশ রামের চার ছেলের মধ্যে একজন হল গোবিন্দ রাম। তিনিও তার পিতার ব্যবসাকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নেন। একপর্যায়ে গোবিন্দ রাম বিয়ে করেন বালিয়াটিতে। তার ঘরে জন্ম নেয় চার ছেলে। যথাক্রমে আনন্দ রাম, দধি রাম, পণ্ডিত রাম ও গোপাল রাম। এ চার ভাইয়ের পৃথক পৃথক ব্যবসা ছিল।
দিনে দিনে তাদের ব্যবসা অনেক উন্নতি করে। মানিকগঞ্জের বাইরে সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঝালকাঠি, নলছিটি ইত্যাদি বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তাদের ব্যবসা। অর্থ এনে দেয় প্রতিপত্তি এবং তারা পরিণত হন গ্রামের জমিদারে। বালিয়াটি গোলাবাড়ি, পূর্ববাড়ি, পশ্চিম বাড়ি, মধ্যবাড়ি ও উত্তরবাড়ি নামে পাঁচটি জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন তারা। প্রত্যেক বাড়িরই রয়েছে পৃথক পৃথক নামকরণের বৈশিষ্ট্য।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ির বিশাল কমপ্লেক্সটি উঁচু দেয়ালে চারদিকে ঘেরা। প্রাচীন আমলের সেই প্রাচীর এবং স্থাপনা গুলো এখনও টিকে আছে, যা দেখলে সে সময়কার মানুষের জীবন-জীবিকা, চাল-চলন, আনন্দ-বিনোদন আর শৌখিনতার পরিচয় খুব সহজেই পাওয়া যায়।
বালিয়াটি বাড়ি
৫ একর ৩২ শতাংশ জায়গা জুড়ে নির্মিত এই কমপ্লেক্সটির চার দেয়ালের মাঝে পূর্বে একইরকম পাঁচটি সুদৃশ্য প্রধান ভবন থাকলেও, কালের বিবর্তনে বর্তমানে সেখানে ৪ টি ভবন দাঁড়িয়ে আছে। যার মধ্যে মাঝের দুটি দোতলা আর (পশ্চিম এবং পূর্ব) দুপাশের দুটি তিনতলা। এবং পশ্চিম থেকে শুরু করে পূর্ব দিকের ভবন গুলো যথাক্রমে ১-২-৩-৪ নং ভবন নামে পরিচিত।
এগুলোর মধ্যে, ১ নং তথা পশ্চিম বাড়ির বারান্দায় লোহার একটি সিঁড়ি রয়েছে যা দেখার মতো সুন্দর। এছাড়াও করিনথিয়ান কলামে নির্মিত এই ভবনটির স্থাপত্যশৈলী অবাক হওয়ার মতো।
এই ১ নং ভবনের পিছন বা উত্তর দিকে গেলে লম্বা কাঠের কারুকায করা ২ টি ভবন পড়বে। ধারণা করা হয়, এগুলো জমিদারদের দাসী-বাদী, ঘোড়ার দেখাশোনা করে এমন যারা ছিল তাদের জন্য নির্মিত হয়েছিল। তবে ১ নং ভবনটি কী কাজে ব্যবহার করা হত, তা সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় নি।
৪ ঘাটলা বিশিষ্ট পারিবারিক পুকুর। ছবি: ড. জিনিয়া রহমান।
২ নং বাড়িটি (দোতালা) বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। জাদুঘরটি ঘুরে মনে হবে, এই ভবনটি এক সময় জমিদারদের রঙমহল হিসেবে ব্যবহার হত।
৩ নং ভবনটিও অনেকটা ২ নং বাড়ির মতো। তবে কী কাজে ব্যবহার হত তা বিস্তারিত জানা নেই। তবে এই ২ এবং ৩ নং দুটি ভবনের পেছনে বা উত্তর দিকে গেলে দেখা যাবে, আরও দুটি দোতালা ভবন, যেগুলো অন্দরমহল নামে পরিচিত। এখানে জমিদারদের পরিজনরা বসবাস করতো। আর ৪ নং ভবন আর ১ নং ভবনের স্থাপত্য স্টাইল অনেকটা একই রকম হলেও এই ভবনের পিছনের দিকে তেমন কিছুই নাই।
গোলাবাড়ি
জমিদারবাড়িটির ঐতিহ্য শুরু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। আর এই গোলাবাড়িটিতে লবণের একটি বিশাল গোলা ছিল বলে ধারণা করা হয়। জমিদাররা ধর্মপ্রাণ হওয়ায় বাড়ির মন্দিরে পূজা অর্চনা করা হতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যপক লুটপাট চলে এখানে।
পশ্চিম বাড়ি
জমিদারবাড়ির পশ্চিম অংশে অবস্থান বলেই বাড়িটির নাম পশ্চিম বাড়ি। ১৮৮৪ সালে জমিদারের উত্তরাধিকার জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
পূর্ববাড়ি
বালিয়াটির পূর্ব অংশে এ বাড়ির অবস্থান বলেই এ বাড়ির নামকরণ করা হয় পূর্ববাড়ি। এ বাড়ির প্রথম জমিদার পুরুষ রায় চাঁন। তিনি দুটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের সম্পত্তির দশ আনা অংশ এবং দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সন্তানদের দান করেন ছয় আনা অংশ। দশ আনির জমিদার বাড়িটিই বর্তমানে পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান। এখানে পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত চারটি সুবৃহৎ অট্টালিকা বিদ্যমান। এগুলো বড় তরফ, মেঝো তরফ, নয়া তরফ এবং ছোট তরফ নামে পরিচিত। ছয় আনির জমিদার বাড়ির অস্তিত্ব বর্তমানে নেই।
তবে প্রত্যেকটি ভবনের সর্ব উত্তরে রয়েছে ৪ টি বিশাল ঘাটলা বিশিষ্ট জমিদারদের পারিবারিক পুকুর এবং এর পরেই রয়েছে আড়াআড়ি ভাবে নির্মিত বাথরুম। এছাড়াও এই কমপ্লেক্সটির বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি কুয়া রয়েছে এবং সম্পূর্ণ কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে প্রায় ২০০ টির উপর কক্ষ। কোন একদিন সময় করে ঘুরে আসুন জমিদার বাড়িটি। নিশ্চয়ই ভালো লাগবে।
সময়সূচি:
গ্রীষ্মকালীন (১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) খোলার সময়: সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত
বিরতি: দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ মি. পর্যন্ত
শুক্রবার: বিরতি ১২.৩০ মি. থেকে দুপুর ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত
শীতকালীন (১লা অক্টোবর থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত) খোলার সময়: সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত
বিরতি: দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ মি. পর্যন্ত
শুক্রবার: বিরতি ১২.৩০ মি. থেকে দুপুর ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত
বিরতি: দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ মি. পর্যন্ত
শুক্রবার: বিরতি ১২.৩০ মি. থেকে দুপুর ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত
শীতকালীন (১লা অক্টোবর থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত) খোলার সময়: সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত
বিরতি: দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ মি. পর্যন্ত
শুক্রবার: বিরতি ১২.৩০ মি. থেকে দুপুর ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত
বন্ধ:
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রোববার পূর্ণদিবস আর সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও বন্ধ থাকে।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রোববার পূর্ণদিবস আর সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও বন্ধ থাকে।
খরচ/টিকেট মূল্য
বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। এই মূল্য কেবল দেশি দর্শনার্থীদের জন্য। তবে বিদেশি দর্শনার্থীরাও বেড়াতে আসেন এই বিখ্যাত জমিদারবাড়িতে। তাদের টিকিটের মূল্য রাখা হয় ২০০ টাকা।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী থেকে পাটুরিয়া, আরিচা বা মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে চড়ে মানিকগঞ্জের ৮ কি.মি. আগেই সাটুরিয়া বাসস্টপে নেমে যেতে হবে। ভাড়া লাগবে ৩৫-৪০ টাকা। আর মানিকগঞ্জ থেকে যেতে চাইলে শুভযাত্রা, পল্লীসেবা, শুকতারা ইত্যাদি বাসে চড়ে চলে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ২০ টাকার মত। সাটুরিয়া বাসস্টপেজ থেকে ১২ কি.মি. দূরে এই বালিয়াটি জমিদার বাড়ির অবস্থান। সাটুরিয়া থেকে পাকুটিয়াগামী রাস্তায় সাটুরিয়ার জিরো পয়েন্টে নামতে হবে। এখান থেকে মাত্র ১ কি.মি. এর কম দূরত্ব বালিয়াটি জমিদার বাড়ির।
কৃতজ্ঞতা: ফরিদ সোহাইল
সম্পাদনা: ড. জিনিয়া রহমান
www.ajkerpatrika.com
| উত্তর প্রদেশ
১ ঘণ্টা, ২৬ মিনিট আগে
১ ঘণ্টা, ২৮ মিনিট আগে
১ ঘণ্টা, ২৯ মিনিট আগে
১ ঘণ্টা, ৩১ মিনিট আগে
১ ঘণ্টা, ৩২ মিনিট আগে