
শিল্পীর তুলিতে অ্যাডলফ হিটলার। ছবি: সংগৃহীত
হিটলার কি সত্যিই ১৯৪৫ সালে মারা গিয়েছিলেন?
আপডেট: ২০ মে ২০১৮, ১৭:২৫
(প্রিয়.কম) জার্মানির স্বৈরশাসক এডলফ হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে মারা যাননি, তিনি পালিয়ে গিয়েছিলে এবং আরও অনেক দিন বেঁচেছিলেন। হিটলারকে নিয়ে এ রকম জনশ্রুতি থাকলেও একদল ফরাসি বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, হিটলার ১৯৪৫ সালেই বার্লিনে মারা গিয়েছিলেন।
ফরাসি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল রাশিয়ায় সংরক্ষিত হিটলারের দাঁত ও মাথার খুলির অংশ পরীক্ষা করে বলেছেন, হিটলার বুলেটের আঘাত ও সায়ানাইড পান করার ফলে মারা গিয়েছিলেন।
ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ইন্টার্নাল মেডিসিন নামে এক সাময়িকীতে ওই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে।

হিটলার ও তার স্ত্রী ইভা ব্রাউন। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান গবেষক ফিলিপ শার্লিয়ে বলছেন, ‘তাদের এই জরিপের ফলে নাৎসী জার্মানির নেতার ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা নিয়ে বহু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নস্যাৎ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল বার্লিনে মার্টির নিচের বাঙ্কারের ভেতর এডলফ হিটলার এবং তার সদ্যবিবাহিত স্ত্রী ইভা ব্রাউন আত্মহত্যা করেন।
ইভা ব্রাউন সায়ানাইড বিষ পান করেন, আর হিটলার নিজের মাথায় গুলি করেন। এ ছাড়া সম্ভবত সায়ানাইডও গ্রহণ করেছিলেন। দীর্ঘদিনের সঙ্গিনী ইভা ব্রাউনকে তার আগের দিন বাঙ্কারের মধ্যে বিয়ে করেন হিটলার। তখন রুশ সৈন্যরা বার্লিন শহরের উপকণ্ঠে ঢুকে পড়েছে, এবং নাৎসী শাসকদের পতন নিশ্চিত হয়ে গেছে। হিটলারের মৃতদেহ জার্মান সৈন্যরাই বাঙ্কার থেকে বের করে রাইখ চান্সেরির বাগানে একটি গর্তে ফেলে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। কিন্তু তার মৃতদেহের কিছু অংশ রুশরা উদ্ধার করে এবং তা মস্কোয় নিয়ে যায়।’

এ ভবনের নিচের একটি বাঙ্কারে লুকিয়ে ছিলেন হিটলার। ছবি: সংগৃহীত
ফরাসি বৈজ্ঞানীরা বলছেন, ‘১৯৪৬ সালের পর তারাই প্রথম হিটলারের দেহাবশেষের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন।’
হিটলারের মাথার খুলির একাংশের বাম দিকে একটি গর্ত দেখা গেছে - যা সম্ভবত বুলেটের আঘাতে সৃষ্ট।
এ ছাড়া হিটলারের বাঁধানো দাঁতের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে তারা নীলাভ আস্তরণ দেখতে পেয়েছেন - যা সম্ভবত ধাতব দাঁতের সঙ্গে সায়ানাইডের বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছে।
হিটলারের মৃত্যু নিয়ে ভিন্নমত
অনেকে বলেন, ‘হিটলার ১৯৪৫ সালে মারা যাননি। তিনি জার্মানির পরাজয়ের পর একটি সাবমেরিনে করে আর্জেন্টিনা পালিয়ে যান। আরেক তত্ত্বে বলা হয়, হিটলার এ্যান্টার্কটিকায় এক গোপন ঘাঁটিতে চলে গেছেন। প্রধান গবেষক ফিলিপ শার্লিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘তাদের গবেষণার পর এখন সব ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব থেমে যাওয়া উচিত।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে এ বাঙ্কারেই বাস করতেন হিটলার। ছবি: সংগহীত
হিটলারের মৃত্যুর পরদিন পহেলা মে জার্মান রেডিওতে খবরটি ঘোষণা করা হয়।
সেদিন লন্ডনের ৪০ মাইল উত্তরে রেডিং শহরের উপকণ্ঠে বিবিসি মনিটরিংয়ের দফতরে বসে জার্মান রেডিওর অনুষ্ঠান শুনছিলেন জার্মানি থেকে পালিয়ে আসা কর্মী কার্ল লিমান। তিনি বলছিলেন, ‘শ্রোতাদের জানানো হলো যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসছে। এরপর তারা ভাবগম্ভীর সঙ্গীত বাজালো এবং ঘোষণা করলো যে বলশেভিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় হিটলার মারা গেছেন।’
‘তারা বলেনি তিনি আত্মহত্যা করেছেন বরং তাদের কথায় মনে হয় যে তিনি যুদ্ধ করতে করতে নিহত হয়েছেন- যা ছিল একটা বড় মিথ্যে।’
কয়েকদিন পর ৭ মে জার্মানি আত্মসমর্পণ করে ও ইউরোপে ৬ বছরের যুদ্ধের অবসান হয়।
সূত্র: বিবিসি
প্রিয় সংবাদ/কামরুল