কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের বাংলা ও আরবি সংস্করণের প্রচ্ছদ। ছবি : সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র আরবি সংস্করণ প্রকাশ করলো ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাস

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০১৭, ১২:২৮
আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০১৭, ১২:২৮

(প্রিয়.কম) ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’- স্বাধীন বাংলাদেশের স্থাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীমূলক সঙ্কলনগ্রন্থ। ২০১২ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। বঙ্গজমিনের কোনো রাষ্ট্রপতির লেখা সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি গ্রন্থ এই অসমাপ্ত আত্মজীবনী। এটি মূলত সম্পূর্ণ কোনো গ্রন্থ নয়, বঙ্গবন্ধুর জীবনের একটি অসমাপ্ত আখ্যান। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি বেশ কিছু সময়  লেখালেখি করেছিলেন। ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলো ছিলো খুবই পুরানো এবং প্রতিটি পাতা ছিলো জীর্ণ। খাতাগুলো পাওয়ার পর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় আত্মজীবনীমূলক লেখাগুলোকে গ্রন্থে রূপান্তরিত করা হয় এবং প্রকাশিত হয়।

গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর খুব অল্প সময়েই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং সুধী মহলে সমাদৃত হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- গ্রন্থটি এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০১২ সালের ১২ জুন বাংলা সংস্করণের সাথে প্রকাশিত হয় ইংরেজি সংস্করণ। ইংরেজি সংস্করণের অনুবাদ করেছেন মো. ফকরুল আলম। ২০১৫ সালের ২ আগস্ট গ্রন্থটির জাপানি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। অনুবাদ করেছেন কাজুহিরো ওয়াতানাবে। চীনা ভাষায় গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি। এর অনুবাদক চাই সি। ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ ফারসি ভাষায় এবং ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল হিন্দি ভাষায় গ্রন্থটি অনুদিত হয়েছে।

এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীমূলক সঙ্কলনগ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’টি আরবি ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে। গ্রন্থটির আরবি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর। এই দিন গণভবনে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. রিয়াদ এন. এ. মালকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং বইটির আরবি সংস্করণের কপি তার হাতে তুলে দেন। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থটির আরবি সংস্করণটি ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসের উদ্যোগে প্রকাশিত হয়েছে।  

গ্রন্থটির আরবি অনুবাদের কাজ করেছেন মুহাম্মাদ দাবাজাহ নামের একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক। তিনি ১৯৪৫ সালে ফিলিস্তিনে জন্ম গ্রহণ করেন। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রিধারী একজন প্রসিদ্ধ অনুবাদ হিসেবে মুহাম্মাদ দাবাজাহ বেশ পরিচিত। ২০০৯ সাল থেকে তিনি ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। মুহাম্মাদ দাবাজাহ ফিলিস্তিনের অবিসাংবাদিত নেতা প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন ( পিএলও) -এর চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাতের সাথে অনুবাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তখন তার মূল দায়িত্ব ছিলো ইয়াসির আরাফাতের গ্রন্থগুলো অনুবাদের কাজ করা এবং দোভাষী হিসেবে তার সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সফরে যোগদান করা।  

ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসের হেড অব মিশন জনাব ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান। ছবিটি সংগৃহীত

গ্রন্থটির আরবি সংস্করণের প্রকাশনা নিয়ে ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসের হেড অব মিশন জনাব ইউসুফ এস ওয়াই রামাদানের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, ‘বঙ্গবন্ধুর দেশে অবস্থিত ফিলিস্তিন দূতাবাসের দায়িত্বে কাজ করতে পারাটাকে আমি আমার জন্য সৌভাগ্যজনক একটি বিষয় মনে করি। বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মাঝে সম্পর্ক খুবই গভীর ও আন্তরিক। ফিলিস্তিনের অবিসাংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং বাংলাদেশের অবিসাংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান- একে অপরকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন এবং সব সময় সুসম্পর্ক বজায় রাখতে কাজ করেছেন। তাদের এই সুসম্পর্কের সুপ্রভাব উভয় দেশের সম্পর্কে অতীতেও ছিলো, বর্তমানেও রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। কারণ তার সুদৃষ্টি না থাকলে আমরা এমন একটি মহান কাজ করতে পারতাম না।’

এছাড়া তিনি আরো বলেন, ‘আমার আত্মার বন্ধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক -এর মাধ্যমে আমি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীটির আরবি সংস্করণটি করার উৎসাহ লাভ করি এবং এটাকে আমার জন্য সৌভাগ্যকর একটি কাজ বিবেচনা করে আমার কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করি। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আইডিয়াটিকে স্বাগতম জানান এবং গ্রন্থটিকে প্রফেসনালি অনুবাদ ও প্রচার-প্রসার করার আহবান জানান। এরপর আমরা অনুবাদক হিসেবে মুহাম্মাদ দাবাজাহকে তার আগ্রহের ভিত্তিতে অনুবাদের জন্য বাংলাদেশে নিয়ে আসি। তিনি প্রায় মাসাধিকাল বাংলাদেশে থেকে এই কাজটি সমাপ্ত করেন।’

ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসের হেড অব মিশন ইউসুফ রামাদান আরো বলেন, ‘আমার বিশ্বাস এই বইটি শুধু বাংলাদেশিদেরকে নয়, গোটা বিশ্বের সব স্বাধীনতাকামী মানুষকে উৎসাহিত করবে। গ্রন্থটির আরবি সংস্করণ প্রকাশের পর আমরা নিজ উদ্যোগে এটিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে গ্রন্থটি নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়েছে।’     

 

প্রিয় ইসলাম /শামীমা সীমা