কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বৈঠকের একটি অংশ। ছবি: সংগৃহীত

বিভাগীয় সমাবেশের পর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ

মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০১৯, ১৮:৪২
আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯, ১৮:৪২

(প্রিয়.কম) দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ফের রাজপথে আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিএনপি। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবার বিভাগীয় শহরে সমাবেশ এবং ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। উদ্দেশ্য, আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি কারাবন্দী নেত্রীর মুক্তির দাবিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা ও গণআন্দোলন গড়ে তুলতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা।

নেতৃবৃন্দের ভাষ্য, ক্ষমতাসীন সরকারের হস্তক্ষেপে আটকে আছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়ার জামিন আদেশ। সে ক্ষেত্রে দাবি আদায়ে রাজপথে ‘গণজোয়ার’ সৃষ্টি করতে না পারলে সহসাই মুক্তি পাবেন না কারাবন্দী খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তে খানিকটা হতাশ ও দ্বিধাদ্বন্ধে জর্জরিত তৃণমূল নেতাকর্মীদের দলের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ফেরানোর বিকল্প নেই। তাই বিএনপির নেতৃত্ব মনে করছেন, দাবি আদায়ে দল পুনগর্ঠনের সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে সময়োপযোগী সাংগঠনিক শক্তি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হওয়াটাও জরুরি।

বিএনপির ঢাকা বিভাগের দায়িত্বে থাকা একাধিক নেতা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বসে নেই বিএনপি। কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার অগণতান্ত্রিকভাবে বিরোধী দল তথা বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রায় অঘোষিতভাবেই বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে বাধা দিচ্ছে। অনুমতির বেড়াজালে আটকে রেখেছে। তারপরও দেশের জনগণ বিএনপির প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। 

এ বিষয়ে বিএনপির সহ দফতর বিষয়ক সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রিয়.কমকে বলেন, ‘ঢাকায় সমাবেশ বা মহাসমাবেশের চিন্তা আপাতত নেই। এই মুহূর্তে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশের সিদ্ধান্ত রয়েছে।’

তবে আলাপকালে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বে থাকা একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রিয়.কমকে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি সব সময় সোচ্চার। দলটি মনে করেছিল খালেদা জিয়া আইনি লড়াইয়ে মুক্তি পাবেন কিন্তু সেখানেও দেখা দিয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে নানান প্রতিবন্ধকতা। তাই আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলনের অংশ হিসেবে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিছু বিভাগীয় শহরে সমাবেশের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হলেও ঢাকায় মহাসমাবেশের স্থান ও সময় এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারান্তরীণ। এরপর থেকে দলটি তাদের নেত্রী বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে নানান কর্মসূচি পালন করে আসছে। যদিও বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীকী অনশন, কালো পতাকা প্রদর্শন, স্মারকলিপি প্রদান, সমাবেশসহ কর্মসূচি খুব একটা সাড়া জাগাতে পারেনি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটও পৃথক কোনো কর্মসূচি দেয়নি।

এদিকে ১৩ জুলাই সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি শুরু হবে শিগগিরিই।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ১৮ তারিখে বরিশালে, ২০ তারিখ চট্টগ্রাম ও ২৫ তারিখ খুলনায় সমাবেশ এখন পর্যন্ত কনফার্ম করেছি। আমরা আশা করছি যে, আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে বাকি বিভাগীয় শহরগুলো সমাবেশ করতে পারব। ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়ে নিয়েছি।’

দলীয় সূত্র মতে, সম্প্রতি স্থানীয় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (বিশেষ শাখা) আবদুল ওয়ারিশের সঙ্গে দেখা করে সমাবেশের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এমনকি সমাবেশ উপলক্ষ্যে বিশেষ প্রস্তুতি সভার অনুমতি চেয়ে বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

সমাবেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবে রহমান শামীম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করতে চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে একটি সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতোমধ্যে দল ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে সমাবেশ সফল করতে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রস্তুতি সভাও করছি। আগামী ২০ জুলাই এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন নির্ধারিত রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা মামলায় গণতান্ত্রিক নেত্রী খালেদা জিয়াকে আদালতকে হাতিয়ার হিসেবে কারান্তরীণ রেখেছেন। আইনি লড়াইয়ে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব, সম্ভব হলে অনেক আগেই মুক্তি পেতেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাই ফের কর্মসূচিতে যেতে হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রিয়.কমকে বলেন, ‘দলের পুনগর্ঠনের সঙ্গে যেমন দলীয় জাতীয় কাউন্সিল জড়িত, তেমনি দলীয় কাউন্সিল নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার মুক্তির ওপর। তাই এই মুহুর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার পূর্বে সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের নানান অনিয়ম ও দুর্নীতি সর্ম্পকে জনগণকে অবহিত করা। দলীয় নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করা।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেন, দেড় বছর ধরে মিথ্যা মামলায় দলের চেয়ারপারসনকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। যিনি সংগঠনের (বিএনপির) প্রাণ, তাকে কারাবন্দী রেখে দেশের গণতন্ত্র চলতে পারে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা নেত্রীর মুক্তির দাবিতে যথাসাধ্য আইনি লড়াই চালিয়ে গেলেও মুক্তি মিলছে না।’

নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘চলতি মাসের ২৫ জুলাই তারিখে খুলনায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যথাসাধ্য প্রস্তুতিও নিচ্ছি।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরিন প্রিয়.কমকে বলেন, ‘রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নাই। সে জন্য দলের অঙ্গ সহযোগী সংগঠন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। উদ্দেশ্য আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত নেতৃত্ব নির্বাচিত করা। কেননা এই মুহূর্তে বিএনপির লক্ষ্য একটাই, সেটা হচ্ছে চেয়ারপারসনের মুক্তি।’

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসাবে বরিশাল বিভাগের নেতৃবৃন্দ জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রস্তুতি সভাও সম্পন্ন করা হয়েছে। সমাবেশের সম্ভাব্য তারিখ ১৮ জুলাই থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে হতে পারে।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আসাদুল হাবিব দুলু প্রিয়.কমকে বলেন, ‘সমাবেশের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ না হলেও প্রস্তুতি চলছে। আশা করছি চলতি জুলাই মাসের শেষ দিকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করতে পারব।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করা বিএনপি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে মাত্র ৭টি সংসদীয় আসন পায়। যদিও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দলটির নেতাদের বক্তব্য ছিল, কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে এবং দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, বিএনপি ধীরে ধীরে সরকার বিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে চলছে। দীর্ঘ নয়, বরং এবার স্বল্প সময়ের আন্দোলনে কীভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি বাস্তবায়ন করা যায় সেই ছক বা পরিকল্পনায় এগোচ্ছে দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরাম। এবং দলটির এবারের চূড়ান্ত কর্মসূচি হবে ঢাকা কেন্দ্রিক।

প্রিয় সংবাদ/কামরুল