কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রতীকী ছবি

আইএমইআই ডেটাবেজ: কী ভাবছেন দেশীয় মোবাইল উদ্যোক্তারা

রাকিবুল হাসান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৫১
আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৫১

(প্রিয়.কম) দেশের সুপরিচিত একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে শাওমি ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেট কেনেন শরিফ হোসেন নামে এক মোবাইল ব্যবহারকারী। ১০ জানুয়ারি হ্যান্ডসেটটি হাতে পান তিনি।

সেট হাতে পাওয়ার পর নির্ধারিত কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে তিনি জানতে পারেন তার হাতে থাকা সেটটি বৈধ নয়। দেশে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া মোবাইল ফোনের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) ডেটাবেজ সিস্টেমেও পান না তার সেটের বৈধতা। বর্তমানে সেটটি নিয়ে তিনি বিপাকে রয়েছেন।

শুধু শরিফ নয়, তার মতো অসংখ্য মোবাইল ব্যবহারকারী অবৈধভাবে নিয়ে আসা এবং গুণগত মানসম্পন্ন নয় এমন সেট কিনে বিপাকে পড়েছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আইএমইআই ডেটাবেজের কারণে ফোন কেনায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।

এদিকে আইএমইআই ডেটাবেজ সিস্টেম চালুর মাধ্যমে নতুন অবৈধ ফোন সেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও ইতোমধ্যে যেসব ফোন অবৈধভাবে দেশে আমদানি হয়ে গেছে সেসব সেটের বিষয়ে এই মুহূর্তে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ডেটাবেজের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার না করলে শতভাগ সুবিধা পাবেন না দেশীয় মোবাইল উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৭৩ লাখের অধিক হ্যান্ডসেট অবৈধভাবে আমদানি হয়ে থাকে। অর্থাৎ দেশে প্রতিবছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়। এর মধ্যে দুই কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার ৮৪০ হ্যান্ডসেট (২০১৮ সালে) বিটিআরসির মাধ্যমে আমদানি অনাপত্তি সনদ পেয়েছে। বাকি হ্যান্ডসেটগুলো অবৈধভাবে দেশে বিক্রি হয়েছে বা নিয়ে আসা হয়েছে।

নামে-বেনামে বা একই লোগো সম্বলিত এসব ফোন সেট কিনে বুঝে ওঠার আগেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা। সরকার প্রায় ১২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

বিটিআরসি বলছে (আইএমইআই) ডেটাবেজ সিস্টেম চালু হওয়ার কারণে অবৈধ হ্যান্ডসেটের আমদানি কমবে এবং প্রতিবছর রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে এক হাজার থেকে ১২০০ কোটি টাকা।

বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেছেন, ‘এই ডেটাবেজের কারণে বাজার চাহিদার সঙ্গে বাজার পর্যবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।’

আইএমইআই ডেটাবেজ সিস্টেমকে মাইলফলক উল্লেখ করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক। আগে চুরি করে হ্যান্ডসেট আমদানি করায় যে রাজস্ব ক্ষতি হতো, তা (ঠেকানো) প্রযুক্তি ছাড়া সম্ভব নয়, এখন তা ঠেকানো যাবে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে চুরি বা ছিনতাই হওয়া ফোন বন্ধ করার সুযোগও তৈরি হয়েছে।’

কী ভাবছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা

বৈধ-অবৈধ হ্যান্ডসেট শনাক্তকরণে বিটিআরসির আইএমইআই ডেটাবেজ সিস্টেম তৈরির পদক্ষেপে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন নতুন মোবাইল ফোন ক্রেতারা। পাশাপাশি সরকারের যুগোপযোগী এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশে মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

স্বাগত জানানোর পাশাপাশি দেশে ফোন আমদানিকারী উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন এই ডেটাবেজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে বিটিআরসিকেই। একইসঙ্গে ডেটাবেজ ধরে বৈধ মোবাইলগুলোকে নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে সুফল মিলবে এই ডেটাবেজ সিস্টেমের।

দেশীয় উদ্যোক্তাদের মতে আইএমইআই ডেটাবেজ সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রাহক যেমন সচেতন হবেন, তেমনি বৈধভাবে সেট আমদানির মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বাজারের সৃষ্টি হবে।

ট্রানশন বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘এই ডেটাবেজের কারণে আমরা এখনই বলতে পারবো না যে আমরা শতভাগ উপকৃত হয়ে গেছি। বলা যায় আমরা অর্ধেক উপকৃত হয়েছি।’

‘বাংলাদেশের কাস্টমসে যেসব সেটের ট্যাক্স দেওয়া হয়েছে সেগুলো শুধুমাত্র ডেটাবেজে এন্ট্রি হচ্ছে। ডেটাবেজের কারণে গ্রাহকরা জানতে পারছে এই মোবাইলটি বৈধ না অবৈধ। উপকৃত আসলে তখনই হবো, যখন বাংলাদেশ সরকার বলবে, যেসব আইএমইআই নম্বরগুলো ট্যাক্স দিয়েছে সেগুলোই শুধুমাত্র বাংলাদেশের নেটওয়ার্কে অ্যাকটিভ হবে। আর যেসব সেটে ট্যাক্স দেওয়া হয়নি সেগুলো নেটওয়ার্কে অ্যাকটিভ হতে পারবে না। সরকার যেদিন এই পদক্ষেপ নেবে সেই দিন থেকে আমরা শতভাগ উপকৃত হবো।’

ইউমিডিজি বাংলাদেশের সিইও এবিএম ওবায়দুল্লাহর মতে, সরকার আইএমইআইয়ের মধ্য দিয়ে মোবাইলের ওপর পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে পরিমাণ অবৈধ সেট আসে সেগুলো যাতে না আসে এবং যেগুলো দেশে ইতোমধ্যে এসেছে সেগুলো পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এ জন্য ডেটাবেজ সার্ভারটি করেছে তারা।’

আগামীতে প্রতি আইএমইআই নম্বরের ওপর চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামীতে যাতে এই ডেটাবেজের জন্য কোনো চার্জ না করা হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের।’

ডেটাবেজের নিয়ন্ত্রণ যাতে বিটিআরসির কাছে থাকে এবং এর নিয়ন্ত্রণ থার্ডপার্টি বা অন্য কোনো বেসরকারি সংস্থা যাতে নিতে না পারে এদিকে খেয়াল রাখতে বলেন তিনি।

সিম্ফনি মোবাইলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মাদ রিয়াদের ভাষ্য, মোবাইলের আইএমইআই ডেটাবেজ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে খুবই সময়োপযোগী একটি পদক্ষেপ এবং এর উপকারিতা, সরকার এবং জনগণ সকলেই উপভোগ করবে।

মোহাম্মাদ রিয়াদ বলেন, ‘কারণ এটি সরকারের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অব্দান রাখবে। পাশাপাশি আইএমইআই ডাটাবেজ অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট আমদানি এবং বাজারজাতকরণ নিরুৎসাহিত করবে। তা ছাড়াও মোবাইলের মাধ্যমে সংগঠিত বিভিন্ন অপরাধ তথা সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং ক্রেতাগণ পাবেন বৈধপথে আসা হ্যান্ডসেট ক্রয় করার নিশ্চয়তা।’

‘সিম্ফনি সহ অন্যান্য কোম্পানিগুলো যারা সরকারকে যথাযথভাবে ভ্যাট ও ট্যাক্স দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হ্যান্ডসেট আমদানি ও বাজারজাত করে আসছে, তাদের জন্য আইএমইআই ডেটাবেজ খুবই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। এর ফলে একদিক থেকে সরকার যেমন তার প্রাপ্য রাজস্ব পাবে, তেমনি হ্যান্ডসেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হবে। এতে করে সর্বোপরি উপকৃত হবেন কাস্টমারা।’

মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, ‘এখাতে এখন সৎভাবে যারা ব্যবসা করছে, তাদের জন্য ব্যবসা সহজ হবে এবং অসৎ ব্যবসায়ীরা থাকতে পারবে না। এই সিস্টেমে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানিকারকরা।’

যেভাবে জানা যাবে হ্যান্ডসেট বৈধ না অবৈধ

নতুন হ্যান্ডসেট কেনার আগে আইএমইআই নম্বর দিয়ে সেটটি বৈধ না অবৈধ তা জানা যাবে। এ জন্য যেকোনো মোবাইলের মেসেজ অপশন থেকে হ্যান্ডসেটের তথ্য যাচাইয়ে KYD <Space> ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখে ১৬০০২ নম্বরে পাঠিয়ে দিলে ফিরতি মেসেজে জানানো হবে, তার সেটটি ডেটাবেজে সংরক্ষিত রয়েছে কি না।

সেটের বক্সের কাভারে ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর দেওয়া থাকে। এ ছাড়া মোবাইলে ডায়ালে গিয়ে *#06# লিখেও আইএমইআই নম্বর বের করা সম্ভব।

২০১৮ সালের ১ জানুয়ারির পর থেকে যেসব হ্যান্ডসেট আমদানি বা দেশে তৈরি করা হয়েছে সেসব হ্যান্ডসেটের বৈধতা শনাক্ত করা যাবে এই ডেটাবেজের মাধ্যমে।

প্রিয় প্রযুক্তি/কামরুল