কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ফেসবুক বইয়ের নেশা কেড়ে নিয়েছে

ফেসবুক বইয়ের নেশা কেড়ে নিয়েছে

শাওন রহমান
তরুণ লেখক,কলামিষ্ট,নাট্যকার
প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০১৮, ২২:৫০
আপডেট: ১২ আগস্ট ২০১৮, ২২:৫০

আমার বই পড়ার গল্পটা একটু বিশেষ রকমের। তখন আমি সবে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। বাবা-মার সাথে প্রায়ই বই মেলায় যাওয়া হতো। বই মেলায় যেতাম ঠিকই কিন্তু ভালো লাগতো না। বাবা/মাকে বলতাম। আচ্ছা আব্বু/আম্মু আমরা শিশু পার্কে যাই বই মেলায় গিয়ে কী হবে? বাবা বলতেন বই মেলায় গেলে অনেক কিছু শিখতে পারবা বাবা। আর তা ছাড়া বাবা একটু চালাকি করে আমাকে বইয়ের প্রতি দুর্বল করে দিলেন। 

একদিন বাবা একটা পরির গল্পের বই এনে আমাকে দিলেন আর বললেন পড়তে। আমার বই পড়তে ভালো লাগতো না তখন। বাবা বললেন- যদি তুমি এই বইটা আজকে পড়ে শেষ করতে পারো, তাহলে দুদিন তোমার হোমওয়ার্ক করা লাগবে না। হোমওয়ার্ক থেকে বাঁচতে বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম। প্রথম প্রথম বোরিং লাগছিল। কিন্তু কয়েক পৃষ্টা পড়ার পর বইটার প্রতি আকর্ষন বেড়ে গেল। মনযোগ দিয়ে আবার শুরু থেকে বই পড়তে শুরু করলাম। বেশ কিছু পৃষ্ঠা পড়ার পর হঠাৎ বাবা এসে বইটা নিয়ে গেল।

বাবা কে বললাম। আব্বু বই পড়বো না? বাবা বললো, এখন আর না আবার পড়ে। আসলে বাবা বুঝতে পেরেছিল যে বইটার প্রতি আমি দুর্বল হয়ে পড়েছি। তারপর থেকে প্রতিদিন স্কুল থেকে এসেই বইটা পড়তে শুরু করতাম। কয়েকদিনেই বইটা পড়া শেষ হলো। আর তখন থেকেই শুরু হয়েছিলো বই পড়ার নেশা।

প্রতিবছর বই মেলা থেকে বই কিনতাম। ছোট ছোট বই থেকে শুরু হয়ে বড় বইয়ে চোখ বুলালাম। পড়তে পড়তে একসময় নিজেই লেখা শুরু করে দিলাম। লিখতাম আর বাবা কে দেখাতাম। বাবা আমাকে সাধুবাদ জানিয়ে আরও লিখতে উৎসাহ যোগাতো। হঠাৎ করেই একবার জাতীয় পত্রিকায় আমার একটা লেখা ছাপা হলো। লেখাটা আমার বাবাই দিয়েছিল। সেই থেকে যেন লেখার ইচ্ছা আরও বেড়ে গেল। সাথে বই পড়ারও। এতোটাই বই পড়তে শুরু করলাম যে একটা সময় নিজের স্কুলের বই পড়া বন্ধই করে দিলাম। সেবার আমি ক্লাস সেভেন এ পড়ি মতিঝিল মডেল স্কুলে দ্বীতিয় সাময়িক পরিক্ষার পর বাবাকে ডাকা হলো। প্রদীপ কুমার বসাক স্যার বাবা কে ডেকে বললেন। শাওন কিন্তু পরীক্ষায় বেশ কয়েকটা বিষয়ে ফেল করেছে। বার্ষিকে খারাপ করলে আর উপরের ক্লাসে উঠানো হবে না। বাবা আমার বই পড়া কমায় দিল। কোনোমতে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলাম।

তারপর আবার সেই আগের মতো। একটা কথা বলে নেই আমি ক্লাস সেভেন থেকে ফেসবুক ব্যাবহার শুরু করি। তখন অবশ্য ফেসবুকের কিছুই খুব একটা বুঝতাম না। শুধু বুঝতাম বন্ধুদের সাথে কথা বলা যায়। সাইবার ক্যাফেতে মাঝে মাঝে গিয়ে ১০ টাকায় একঘণ্টা ফেসবুক চালাতাম। আস্তে আস্তে ফেসবুক এবং বই দুটোই বুঝতে শুরু করলাম।

নবম শ্রেণিতে আমি খুব ভালো ফেসবুক বুঝি। বই পড়তাম আর বইযের কিছু কিছু অংশ পোস্ট করতাম। অনেক ফেসবুক বন্ধু আবার তা পড়ে আমাকে কমেন্ট করতো। ভালো ভালো কমেন্ট পেযে বেশ ভালোই লাগতো। আস্তে আস্তে ফেসবুকে বুদ হতে লাগলাম। এস এস সি দিলাম। ফেসবুক চালাই বেশি বই পড়ি কম। এদিকে অনেক জাতীয় পত্রিকায় আমার লেখাও ছাপা হতো। ফেসবুকের অনেক বন্ধু আমার পাঠক হতে লাগলো। এ দেখে ফেসবুকের প্রতি আসক্তি বাড়তে লাগলো। তার মধ্যে ফেসবুকের সৌজন্যে আমার অনেক কিছুর প্রাপ্তি ঘটেছে। বড় বড় পত্রিকায় লেখার আমন্ত্রণ পাচ্ছি। মিডিয়ার অনেকের সাথে পরিচয় হতে পারছি। অনেক সাহিত্য সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে লাগলাম। কলেজ পার হলাম। বেশ ভালোই সময় চলছিল। অনেকেই হয়তো এতোক্ষণে একটা জিনিস আন্দাজ করতে পারছেন। আস্তে আস্তে আমি বই ভুলে ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পরেছি। তারপর নিজেই অনেক কিছু নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম। নানা যায়গা থেকে নানা অফার পেতে থাকলাম। আর সেগুলো নিয়ে ব্যাস্ত হতে হতে আমি আমার বন্ধু বইকে ভুলেই বসলাম।তারপর আস্তে আস্তে এখন এতোটাই ফেসবুক প্রেমী হয়েছি যে। মাঝে মাঝে যদিও বই একটু ধরি। হঠাৎ করে আবার বইটা বন্ধ করে রেখে দেখি ফেসবুক নিউজ ফিডস এ নতুন কী এলো। নোটিফিকেশন বক্সের খবর কী? কোন বন্ধুর রসময় বার্তা আমার জন্য অপেক্ষা করছে কিনা!

আর এখন তো সোস্যাল মিডিয়াতে নতুন নতুন অনেক আকর্ষনীয় সাইটের সৃষ্টি হয়েছে- ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, ফ্লিরচি, মিউজিক্যালি, ফ্লিরটক, হোয়াটস এ্যাপ, ভাইবার আরো কতকি…আর আমি তো এই বিজ্ঞান যুগেরই ছেলে আমার তো অধিকার আছে এগুলোতে বুদ হওয়ার। কিন্তু ফেসবুক ও অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়া আমার বইয়ের নেশা কেড়ে নিয়েছে। বেশি দূর যাব না। লেখার দেয়াল টপকে গেলে আপনাদের ফেসবুকের টাইম কমে যেতে পারে! হা. হা.

[প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রিয়.কম লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত মতামতের সঙ্গে প্রিয়.কম-এর সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে।]