কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মেহরীন মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম প্রেম করব : মেহরীন

তাশফিন ত্রপা
ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০১৮, ১৩:৪৪
আপডেট: ১২ আগস্ট ২০১৮, ১৩:৪৪

(প্রিয়.কম) বাংলাদেশের জনপ্রিয় পপ সংগীতশিল্পী মেহরীন মাহমুদ। অসংখ্য সংগীত পিপাসু মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে দিয়েছেন নব্বই দশকের এ সংগীতশিল্পী। শুধু গানেই নয়, ফ্যাশন সচেতন শিল্পী হিসেবেও তার বেশ খ্যাতি রয়েছে। ছিমছাম ওয়েস্টার্ন পোশাক আর নিজস্ব স্টাইলে নজর কেড়েছেন অনেকের।

প্রিয়.কমের ‘ফ্যাশন ব্র্যান্ড’ বিভাগের সঙ্গে আলাপ হয় সংগীতশিল্পী মেহরীনের। আলাপ কালে তিনি নিজের ফ্যাশন, স্টাইল, ভালো লাগার ব্র্যান্ড, কেনাকাটা, গেটআপসহ ব্যক্তিগত আরও বিষয় নিয়ে কথা বলেন। চলুন সেই আলাপ থেকে জেনে নেওয়া যাক মেহরীনের পছন্দের ফ্যাশন, স্টাইল আর ব্র্যান্ড সম্পর্কে।

প্রিয়.কম: শুরু থেকেই পর্দায় আপনাকে এক ধরনের আইকনিক হেয়ার স্টাইল বহন করতে দেখা যায়, প্রথমেই জানতে চাইব আপনার এ হেয়ার স্টাইল সম্পর্কে।

মেহরীন মাহমুদ: আমি যে সব সময় একই রকমভাবে চুলকাটাই, ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও তা নয়। সুযোগ পেলেই একেক সময় একেক রকমভাবে কাটাতে পছন্দ করি। কিন্তু আজব ব্যাপার হচ্ছে, যেভাবেই কাটাই না কেন, ঘুরে ফিরে দেখা যায় সেই সবগুলো কাটেই আমাকে এক রকমই দেখাচ্ছে। কিছুদিন আগে চুলে কালার করিয়েছি। যা ছিল আমার জীবনে করা প্রথম হেয়ার কালার।

ছোট চুলে মেহরীন। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়.কম: সাজগোজ করতে কেমন লাগে?

মেহরীন মাহমুদ: খুব একটা সাজগোজ করা হয় না। মঞ্চে আমি এতোটাই চার্জড আপ থাকি যে, দেখা যায় মঞ্চে পারফর্ম করার সময় এক বালতি ঘাম এসে আমার মেকআপ-কাজল সব একাকার করে দিয়ে যায়। তাই আমার কাছে মনে হয়, বেচারা কাজলদের মাখা মানে তাদের অপমান করা।

প্রিয়.কম: সাধারণত পছন্দের পোশাক-আশাক কে কিনেন?

মেহরীন মাহমুদ: জামা কাপড় সাধারণত আমার সাহেবই কিনে নিয়ে আসেন। ও যা কিনে তা আমার একদম চোখ বন্ধ করে পছন্দ হয়ে যায়। আমি মাঝে মধ্যে কিনি। দোকান দোকান ঘুরে কেনাকাটা করা আমার পছন্দ না। অতিরিক্ত কেনাকাটা আমি পছন্দ করি না। আমার ছেলে-মেয়েদেরকেও শেখাই, তারা যেন বাড়তি খরচ না করে।

প্রিয়.কম: পোশাকের ক্ষেত্রে পছন্দের রং কোনটি ?

মেহরীন মাহমুদ: যেহেতু আমি কালো বেশি পরি তাই এ রংটা আমাকে একটু বেশি আকর্ষণ করে। এ ছাড়া অন্য রংগুলোও পরা হয়। তবে কালোই আসলে পছন্দের রং।

কালো প্যান্ট, কালো টপস তার ওপরে ধূসর রঙের কোটি পরেছেন মেহরীন। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়.কম: পারফিউম ভালো লাগে?

মেহরীন মাহমুদ: বিশেষ কোনো পারফিউমের প্রতি আকর্ষণ নেই আমার। মাঝে মধ্যে যদি ইচ্ছে হয় তখন অনেক রাতে ঘুমানোর আগে পারফিউম দিই। এ ছাড়া দিনের বেলায় নিজের ইচ্ছে মতো মাখলে মাখি, না মাখালে না মাখি।
প্রিয়.কম: জানতে চাইব আপনার পছন্দের ব্র্যান্ড সম্পর্কে?

মেহরীন মাহমুদ: আমি একদমই ব্র্যান্ড অনুসারী নই। কিন্তু হোয়াইট হাউস ব্ল্যাক মার্কেট নামের একটি আমেরিকান ব্র্যান্ড আছে। ওদের ফ্যাশন লাইন আমার খুব ভালো লাগে। এর মানে এই নয় যে, আমি সব সময় ওই ব্র্যান্ডের জামা পরি। সুযোগ পেলে চেষ্টা করি কেনার। আর ইন্ডিয়া গিয়ে কালার বার নামের একটি দোকানের সঙ্গে আমার ভীষণ প্রেম হয়েছে। ওই দোকানে ঢুকলেই মনে হয় জীবনটা এতো রঙিন! যদিও ওদের পণ্যের দাম আমার বাজেটের অনেক উপরে উঠে যায়। তার পরেও আমি চেষ্ঠা করি ওই দোকান থেকে কিছু কিনে রাখার। ওদের এই রঙিন আয়োজন আমার খুবই ভালো লাগে।

প্রিয়.কম: এবার জানতে চাইব গয়না নিয়ে।

মেহরীন মাহমুদ: সম্ভবত আমি তখন নবম কিংবা দশম শ্রেণীতে পড়ি। সে সময় কস্টিউম জুয়েলারির এক ধরনের হিড়িক পরে গিয়েছিল। তখন আমার বড় বোন থাকতেন বিদেশ। ও আমাকে অনেক ধরনের গয়না পাঠাতো। ওর সুবাদে আমারতো গয়নার একদম পাহাড়ের স্তুপ হয়ে যেত। আমার একটা আলমারিও ছিল সেটাতে আমি গয়না সাজিয়ে রাখতাম। তা দেখে আমার ভাইরাও আমাকে ভীষণ খেপাতেন। ওরা বলত, তুই আজ কানে কত ওজন পরেছিস ? এরকম নানা ধরনের কথা বলে আমার সঙ্গে কতো রকমের ঠাট্টাই না করত। একটা সময় এসে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসবের প্রতি আমারও অনীহা চলে এসেছে। তাছাড়া একটা সময় গয়নাতো খুব পড়েছি-ই। বয়স যখন ছিল তখনতো মনের মতো করে বেশ গয়নাই পরা হয়েছে। আব্বা একবার বলেছিলেন, ‘মেয়েরা গয়না পরলে দেখতে ভালো লাগে’। চেঞ্জ করে পরার ইচ্ছা ও সময় কোনোটাই এখন আর হয়ে উঠে না। তবে বাসায় অনেক সময় দিই। কিন্তু সাজগোজের বেলায় সময় দিতে এখন আর ভালো লাগে না।

খুব একটা মেকআপ করতে ভালোবাসেন না মেহরীন। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়.কম: জীবনে কি কখনো প্রেম এসেছিল?

মেহরীন মাহমুদ: আমাদের পরিবার ছিল বেশ রক্ষণশীল। বাবা কখনো প্রেম পছন্দ করতেন না। আমার মায়ের কড়া নজরে বড় হয়েছি আমি। মা আমাদের সব সময়েই চোখে চোখে রাখতেন আর প্রচুর সময়ও দিতেন আমাদের। সারাক্ষণ কিছু না কিছু দিয়ে ব্যস্ত রাখতেন। যে কারণে প্রেমের সূচনাটাই করতে পারিনি। ইচ্ছেও হয়নি। তখনকার সময়ের মায়েরা এমনই ছিলেন। আমি যখন কিশোরী। তখন বড় বোন বুঝিয়ে দিলেন এ বাড়িতে কেউ প্রেম করতে পারবে না। যাই হোক, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ক্লাস করতে যাই, সেদিন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রেম করার। মাকেও বলেছি, প্রেম করার জন্য আজ ক্লাসে গিয়েই কাউকে না কাউকে সিলেক্ট করেই ফেলব। কিন্তু সেদিন আমি সত্যিই হতাশ হয়েছি। কারণ ক্লাসে কাউকেই পছন্দ হয়নি। তবে কেউ যে পছন্দ করেনি তা নয়। টুকটাক উপহার যে পাইনি তাও কিন্তু নয়। চিঠিও পেয়েছি দু একটা। তবে কেন যেন ছেলেরা আমাকে ভীষণ ভয় পেত। আমারও একটা নাক উঁচু ভাব ছিল। আমি যাকে বিয়ে করেছি তা ছিল আমাদের পারিবারিক বিয়ে। আমারও তখন বিয়ের বয়স দরজায় এসে কড়া নাড়ে। ওর তখন বিয়ের একেবারে হাই টাইম। আমি এখন আমার ছেলেকে বলি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করো কিন্তু প্রেমের ব্যাপারে একটু সাবধান। কারণ এর সঙ্গে মন যুক্ত। মেয়েকে বলি সবসময় চোখ-কান খোলা রাখবে। কারণ দুঃখটা খুবই কষ্টকর। যে কারণে বাবা মায়েরা বলেন প্রেম করো না। মন: কষ্ট নিতে পারার জন্য একটি পরিপক্ক বয়স প্রয়োজন ।

প্রিয়.কম: সাধারণত কী ধরনের জুতা পরা হয়?

মেহরীন মাহমুদ: একটু আরামদায়ক জুতাই পরি। তাই সাধারণত ফ্ল্যাট জুতাই পরি। একটু হিল জুতা পরতেও আমার ভালোই লাগে। তাছাড়া একটু হিল জুতা তো মেয়েদের পরাই হয়। হাই হিল জুতা পরলে বড় জোর তিন ইঞ্চি উঁচু হিল পরা হয়। ভ্রমণে গেলে টুকটাক বুট জুতা পরা হয়। বান্ধবীদের সঙ্গে যখন একটু ঘোরাঘুরি করতে বের হই তখন স্নিকার পরা হয়। তবে আমার যে অনেক বেশি জুতা আছে ব্যাপারটা নয়। কোনো জুতা পছন্দ হলেই ওই জুতাটা আমার অনেক দিন চলে যায়। তাই আমার পছন্দের খাতাতে চাইলেই যে কোনো জুতা সহজে স্থান পেয়ে যায় না। কিন্তু যখন কোনো জুতা পছন্দ হয় তখন সেই জুতার উপর খুবই প্রেশার যায়। সেটা যতো দিন না, ফেলে দেওয়া পর্যায়ে না পৌঁছায়, ঠিক তত দিন ধরেই পরতে থাকি।

প্রিয়.কম: পছন্দের খাতায় উঠতে হলে, জুতার নকশা কেমন হওয়া চাই?

মেহরীন মাহমুদ: এখন আমার কাছে সোনালী ও রুপালি রঙ মেশানো একটি জুতা আছে। এটা আমার খুবই পছন্দের একটি জুতা। জুতার ক্ষেত্রে শেইপটাকে প্রাধান্য দেই। সামনের দিকে একটু শার্প ধরনের শেইপের জুতা পরতে ভালো লাগে। স্টাইলটা হতে হবে একটু ট্র্যাডিশনাল ও ফ্যাশনেবল। অনেক সময় দেখা যায়, জুতা রেখে দিলে দেখা যায় নস্ট হয়ে যায়, তাই জুতা রেখে দেওয়ার পক্ষপাত নই আমি। অল্প থাকবে, কিন্তু ব্যবহারে থাকবে। আমাদের দেখে অনেকেই মনে করেন যে আমরা খুব সাজগোজ জীবন-যাপন করি। ব্যপারটা আসলে তা নয়। কখন কোথায় গানের পারফর্ম করতে হচ্ছে বলা মুশকিল। দেখা গেল, কখনো বৃষ্টির সময় কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গেলাম। তখন হয়তো, কাদার উপর পা পড়ে গেল। তখন তো জুতার বারটা বেজে যায়।

প্রিয় ফ্যাশন/গোরা