আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন। ছবি: সংগৃহীত

যেভাবে উগ্রপন্থি হয়েছিলেন ওসামা বিন লাদেন

আবু আজাদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৪ আগস্ট ২০১৮, ১৩:৩৭
আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০১৮, ১৩:৩৭

(প্রিয়.কম) নিহত আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মা আলিয়া ঘানেম কোনো সংবাদপত্রকে দেওয়া তার প্রথম সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘ওসামা ছিলেন একজন ভালো ছেলে, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময় মগজধোলাইয়ের শিকার হয়ে উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হয়েছিলেন।’

ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের জেদ্দায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় “কাল্ট” বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর পাল্লায় পড়েন এবং পুরোপুরি বদলে যান ওসামা।’

তিনি জানান, তিনি তার ছেলেকে বার বার সাবধান করেছিলেন ওই গ্রুপটি থেকে দূরে থাকার জন্য। কিন্তু ওসামা বিন লাদেন কখনো তার মাকে বলেননি যে, তিনি কি করছেন, কারণ তার মাকে তিনি খুবই ভালোবাসতেন।

ধারণা করা হয় যে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে চারটি ছিনতাই করা বিমান দিয়ে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়, যে হামলায় নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার এবং ওয়াশিংটনের পেন্টাগন ভবন আক্রান্ত হয় এবং দুহাজারের বেশি লোক নিহত হয়, তার আদেশ ওসামা বিন লাদেনই দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর এক অভিযানে ২০১২ সালে ওসামা বিন লাদেন নিহত হন।

গার্ডিয়ানের সাংবাদিক মার্টিন চুলোভের নেওয়া সাক্ষাতকারে বিন লাদেনের মা আলিয়া ঘানেম বলেন, কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়ার সময় ওসামা বিন লাদেন কিছু লোকের সংস্পর্শে আসেন এবং তারাই তার ছেলের মগজধোলাই করে, যখন তার বয়স ছিল ২০-এর কোঠায়।

গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেওয়া ওসামা বিন লাদেনের মায়ের সাক্ষাতকার। ছবি: সংগৃহীত
গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেওয়া ওসামা বিন লাদেনের মায়ের সাক্ষাতকার। ছবি: সংগৃহীত

আলিয়া ঘানেমের ভাষায়,  ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই লোকেরাই তাকে বদলে দেয়, সে একেবারে অন্যরকম মানুষ হয়ে যায়।

আপনি বলতে পারেন এটা ছিল একটা কাল্ট, আমি তাকে সবসময়ই বলতাম ওদের থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু সে কখনো স্বীকার করেনি, সে কি করছে, কারণ আমাকে সে খুবই ভালোবাসতো।’

১৯৮০’র দশকে ওসামা আফগানিস্তানে চলে যান রাশিয়ার দখলদারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লাদেনের ভাই হাসান, তিনিও ওই সাক্ষাতকারের সময় উপস্থিত ছিলেন।

হাসান বলেন, ‘প্রথম দিকে যারই তার সাথে দেখা হয়েছে সেই তাকে সম্মান করেছে। শুরুর দিকে আমরাও তাকে নিয়ে গর্বিত ছিলাম। এমনকি সৌদি সরকারও তাকে সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখতো। তার পরই সে হয়ে উঠল মুজাহিদ ওসামা।’

তার মা ঘানেম বলেন, ‘ওসামা স্কুলে ভালো ছাত্র ছিল, পড়াশোনা ভালোবাসতো। সে তার সব টাকাপয়সা আফগানিস্তানের পেছনে খরচ করেছে। পারিবারিক ব্যবসার ছুতো করে সে গোপনে কোথায় কোথায় চলে যেতো।’

আপনি কী কখনো সন্দেহ করেছিলেন যে, ছেলে জিহাদি হয়ে উঠতে পারে, এই প্রশ্নের জবাবে ঘানেম বলেন, ‘আমার মনে কখনো এমন ভাবনা আসেনি।’

যখন জানতে পারলেন তখন কেমন লেগেছিল জানতে চাওয়ায় ঘানেম বলেন, ‘আমরা খুব ভেঙে পড়েছিলাম, এমনটা হোক আমি চাইনি। কেন সে এভাবে সবকিছু ত্যাগ করতে যাবে?’

বিন লাদেনের পরিবারের দাবি, তারা ওসামাকে সর্বশেষ দেখেছেন ১৯৯৯ সালে, আফগানিস্তানে। কান্দাহার শহরের বাইরে তাদের ঘাঁটিতে দুবার তারা দেখা করতে গিয়েছিলেন।

৯/১১ যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা,যার জন্য ওসামাকে দায়ী করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
৯/১১ যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা, যার জন্য ওসামাকে দায়ী করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

ঘানেম বলছিলেন, ‘জায়গাটা ছিল বিমানবন্দরের কাছে, যা তারা রুশদের হাত থেকে দখল করেছিল। আমাদের পেয়ে সে খুব খুশি হয়েছিল, আমাদের প্রতিদিন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখাত। একটা পশু জবাই করে একটা ভোজ দেওয়া হলো। তাতে সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হলো।’

ওসামা বিন লাদেনের বাবা ইয়েমেনি হলেও তার মা আলিয়া ঘানেমের জন্ম এক সিরিয়ান আলাওয়াইট শিয়া পরিবারে।

তিনি সৌদি আরবে আসেন ১৯৫০এর দশকের মাঝামাঝি, আর ওসামার জন্ম ১৯৫৭ সালে। তিন বছর পর ওসামার বাবাকে তালাক দেন তিনি, বিয়ে করেন আল-আত্তাসকে, যিনি বিন-লাদেনদের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যেরই একজন প্রশাসক ছিলেন। ওসামার বাবা কমপক্ষে ১১জন স্ত্রীর গর্ভে ৫৪টি পুত্রকন্যার জন্ম দেন।

ওসামার আরেক ভাই আহমদ গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘নাইন-ইলেভেনের ১৭ বছর পরও তাদের মা ওই ঘটনার জন্য ওসামাকে দোষ দিতে চান না। তিনি দোষ দেন তার চারপাশের লোকদেরকে। মা শুধু ওসামাকে ‘ভালো ছেলে’ হিসেবেই জানেন, জিহাদি ওসামাকে তার কখনো জানা হয়নি।’

পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেন যখন মার্কিন বিশেষ বাহিনীর হাতে নিহত হন, তখন তার যে স্ত্রী-সন্তানরা ছিলেন তারা এখন জেদ্দায় থাকেন। তাদের শহরের মধ্যে চলাফেরার অধিকার আছে তবে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই।

আলিয়া ঘানেম বলছেন, ‘আমি ওসামার হারেমের সাথে প্রায় সপ্তাহেই কথা বলি। তারা কাছেই থাকে।’

ওসামা বিন লাদেনের সর্বকনিষ্ঠ ছেলে ২৯ বছর বয়স্ক হামজার কথা বিন লাদেন পরিবারকে জিজ্ঞেস করেছিলেন গার্ডিয়ানের সাংবাদিক। হামজা এখন আফগানিস্তানে আছে বলে ধারণা করা হয়।

গত বছর তাকে একজন বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র, এবং তাকে আলকায়েদার বর্তমান নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির ছত্রছায়ায় তার পিতার ‘উত্তরসূরি’ বলে মনে করা হয়।

হাসান বলেন, ‘হামজা বলেছিল, সে তার পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেবে। আমি তার কথা আর শুনতে চাই না।

তার সঙ্গে দেখা হলে আমি বলতাম আল্লাহ যেন তোমাকে পথ দেখান। তুমি যা করছো তা নিয়ে দু’বার ভাবো, তুমি তোমার আত্মার এক ভয়ংকর অংশে পা ফেলছো, তোমার পিতার পথ নিও না।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা

প্রিয় সংবাদ/রুহুল