ছবি সংগৃহীত

হজরত মুসা [আ.] মাদায়েন হিজরত করেছিলেন যে কারণে

সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
লেখক
প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০১৫, ০৪:১৫
আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৫, ০৪:১৫

এক ইসরাইলি এবং এক মিসরির ঝগড়া থামাতে গিয়ে মুসা [আ.] মিসরিকে থাপ্পড় মারলে সে তৎক্ষণাত মৃত্যুবরণ করে এবং ফেরাউনের লোকজন মুসা [আ.]-কে গ্রেফতার করার জন্য সৈন্য প্রেরণ করে। মিসরীয়দের দরবারে এমন একজন সম্মানিত ও পদস্থ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন যিনি মুসা [আ.]-কে মনে-প্রাণে ভালোবাসতেন এবং ইসরাইলি ধর্মকে সত্য বলে বিশ্বাস করতেন। তিনি ফেরআউনের বংশেরই একজন ব্যক্তি ছিলেন এবং দরবারের সভাষদও ছিলেন। তিনি ফেরআউনের এই আদেশ শুনে জল্লাদের পূর্বেই দরবারে থেকে বের হয়ে গেলেন এবং দৌড়ে গিয়ে মুসা [আ.]-এর খেদমতে হাজির হলেন। তিনি সব ঘটনা মুসা [আ.]-কে জানালেন এবং পরামর্শ দিলেন যে, এখন এটাই আপনার জন্য কল্যাণকর হবে যে আপনি মিসরীয়দের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করুন এবং এমন কোনো স্থানের দিকে হিজরত করুন যেখানে ফেরআউনের ক্ষমতা অচল। হজরত মুসা [আ.] তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করলেন এবং চুপচাপ মাদয়ানের দিকে হিজরত করে চলে গেলেন। এখানে একটি কথা চিন্তা-ভাবনা করার যোগ্য যে, কুরআনুল কারিম এই লোকটি সম্পর্কে শুধু এতটুকু বলেছে— وَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ يَسْعَى قَالَ يَا مُوسَى إِنَّ الْمَلَأَ يَأْتَمِرُونَ بِكَ لِيَقْتُلُوكَ ‘নগরীর দূর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি ছুটে এলো ও বললো, হে মুসা, (ফেরআউনের) পারিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করার পরামর্শ করছে।’ [সুরা কাসাস : আয়াত ১৯] আর আমরা তাঁর সঙ্গে ‘সম্মানিত’ ও ‘পদস্থ’ বিশেষণ দুটি যোগ করে দিলাম। এই কারণ আবদুল ওয়াহ্হাব নাজ্জার মিসরি কথায় এই যে, ১. লোকটি শহরের শেষ প্রান্ত থেকে এসেছিলেন। আর আরব দেশে এই প্রবাদ প্রসিদ্ধ রয়েছে যে, শহরের প্রান্তভাগ সম্মানিত লোকদের বাসস্থান’। আর তিনি মুসা [আ.]-কে বলেছিলেন, ‘রাজদরবারের লোকেরা তোমাকে হত্যা করার পরামর্শ করছে।’ বলা বাহুল্য, এরূপ কথা এমন ব্যক্তিই জানতে পারেন যিনি ফেরআউন ও তার সভাষদগণের মধ্যে বিশেষ পদ-মর্যাদার অধিকারী। কুরআনুল কারিম এই ঘটনা বর্ণনা করছে এভাবে— وَقَتَلْتَ نَفْسًا فَنَجَّيْنَاكَ مِنَ الْغَمِّ وَفَتَنَّاكَ فُتُونًا “এবং (হে মুসা,) তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে; তখন আমি তোমাকে মনঃপীড়া থেকে মুক্তি দিই, আমি তোমাকে বহু পরীক্ষা করেছি।” [সুরা তোয়া-হা : আয়াত ৪০] এ-জায়গায় কুরআন ও তাওরাতের বর্ণনায় কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। ক. কুরআনুল কারিম দ্বিতীয় দিনের ঝগড়কারীদের একজনকে বনি ইসরাইলের এবং দ্বিতীয়জনকে মিসরীয় (ফেরআউনি) বলেছে। আর তাওরাত বলেছে, দুজনই বনি ইসরাইলের ছিলো। খ. তাওরাতে সেই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয় নি, যিনি মুসা [আ.]-কে ফেরআউন ও তার পারিষদবর্গের পরামর্শ সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছিলো। কিন্তু এ-দুটি বিষয় সম্পর্কে (নিরপেক্ষ চিন্তায়) জ্ঞান ও প্রকৃতি এদিকেই পথ প্রদর্শন করে যে, কুরআনুল কারিমের বিবরণই সত্য এবং তার ওপরই বিশ্বাস রাখা আবশ্যক। কেননা, ফেরআউনের সম্প্রদায়ের কাছে বনি ইসরাইরের প্রাণের কোনো মূল্যই ছিলো না যে, হজরত মুসা [আ.]-এর মতো রাজপ্রাসাদে অবস্থানকারী ব্যক্তি বিরুদ্ধে খুনের বদলার দাবিদার হতো। আর দ্বিতীয় কথা হলো, তাওরাতের বর্ণনার সঙ্গে এটি একটি স্বাভাবিক সংযোগ, যা বিশ্বাস ও জ্ঞানের সঙ্গে করা হয়েছে। হাফেজ মাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর