
ছবি সংগৃহীত
সিরাজগঞ্জের হুরা সাগর নদীর উপর গ্রামবাসীর ৬শ ফুটের সাঁকো নির্মাণ
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৬, ১৬:৫৩
(জুবায়েল হোসেন সিরাজগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ) দশে মিলে কাজ করলে যে সফলতা আসে তা আবার প্রমাণ করলেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ছয় গ্রামের বাসিন্দারা। নিজেদের উদ্যোগে হুরাসাগর নদীর উপর একটি বিশাল বাশেঁর সাকো তৈরি করে, এতদিন ধরে বিচ্ছিন্ন থাকার শৃংখল জীবন থেকে মুক্ত হয়েছেন। এই বিশাল বাঁশের সাকোটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করলেন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। উদ্বোধন করতে আসা অতিথিরাও এ জন্য নিজেদের লজ্জার কথা জানালেও গ্রামবাসীর এই উদ্যোগে তারাও গর্বিত। আগামীতে এই স্থানে একটি স্থায়ী ব্রীজ নির্মানেরও প্রতিশ্রুতি দিলেন তারা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন্দ। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম ইউসুফজী খান, সিনিয়র সহসভাপতি লুৎফর রহমান মাখন, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক হান্নান তালুকদার, ভাঙ্গবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন প্রামানিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাঁকোটির উদ্যোগতা ইমদাদুল হক এমদাদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল আহম্মেদ, ইউপি সদস্য হযরত আলী প্রমুখ। বেলকুচি উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিম দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে হুরাসাগর নদী।এই নদীর এপাড়ে বানিয়াগাঁতী দক্ষিণ পাড়া এবং নদীর অপরদিকে জোকনালা, চরজোকনালা, ভুতিয়াপাড়া, ক্ষিদ্রজোকনালা, সগুনা, শেলবরিষা গ্রাম। মাত্র তিন কিলোমিটার দুরে উপজেলা সদর অবস্থিত হলেও হুরাসাগর নদীর কারণে তারা ছিলেন বিচ্ছিন্ন। এই ছয়টি গ্রামের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পন্য অনেক কষ্ট করে নদী পাড় হয়ে উপজেলা সদরে নিয়ে যেতেন। একই সঙ্গে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদেরও ছিলো খুব কষ্ট। সেই সঙ্গে এই ছয়টি গ্রামের মানুষ কোন গুরুতর রোগে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে পৌছানো যেতো না। হাতের কাছে সব কিছু থাকতেও তারা সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলো। এদিকে এই ব্রীজটি না থাকায় বেলকুচি থেকে উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলা সদরে যেতে অনেক পথে ঘুরে যেতে হয়। হুরাসাগর নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মান করা হলে অল্প সময়ে বেলকুচি থেকে উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর যাতায়াত করা সম্ভব হবে। তাদের এই কষ্ট লাঘবের জন্য বার বার সরকারের নানা জায়গায় ধরনা দিয়েও মেলেনি তাদের আকাঙ্খিত ব্রীজ। যে কারণে ছয় গ্রামের মানুষ মিলিত হয়ে ঠিক করেন তারা নিজ উদ্যেগেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করবেন। এই গ্রামগুলোর মানুষ মিলিত হয়ে তাদের নেতা ঠিক করেন। ইমদাদুল হক এমদাদকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয় তাদের কাঙ্খিত সাফল্যের জন্য কিছু একটা করতে। এমদাদ গ্রামের উঠতি বয়সি যুবকদের সঙ্গে নিয়ে ছয়টি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটি করে বাশ ও যার যা সাধ্য আছে সেই মত সাহায্য তুলে চরজোকনালা ত্রিমোহনী খেয়াঘাট এলাকায় শুরুকরে দিলেন একটি বাঁশের সাঁকো তৈরির কাজ। দীর্ঘ ২ মাস কাজ করে তারা হুরাসাগর নদীর উপর ৬শ ফিট দীর্ঘ সেতু নির্মান কাজ শেষ করেন। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাঁশের সাকো সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া জোকনালা গ্রামের কৃষক আবু হানিফ তালুকদার জানালেন, এতদিন ধরে অনেক কষ্ট করে উৎপাদিত পন্য বেলকুচি নিতে হতো। এই বাশের ব্রীজটি হবার কারনে এখন অনেক সহজেই পণ্যগুলো নেয়া সম্ভব হবে। তবে এটি কোন স্থায়ী সমাধান নয়। আগামীতে হয়তো বাশের সাঁকোটি ভেঙ্গে পড়বে। তার আগেই যেন সরকার তাদের স্বপ্নের সেতুটি তৈরি করে দেয়।