ইনফোগ্রাফিকস: মামুনুর রশীদ (প্রিয়.কম) বিশ্বে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী দেশগুলোর অন্যতম ভারত। দ্য ইকোনমিক টাইমস প্রকাশিত ১১ এপ্রিল ২০১৪ তারিখের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশটি আয় করে ৭০ বিলিয়ন ডলার, যা ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই আয়ের পেছনে যে দেশগুলোর অবদান সর্বোচ্চ, তার মাঝে বাংলাদেশ পঞ্চম। যে পনেরটি দেশ থেকে ভারত সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আয় করে সেগুলো হল- সংযুক্ত আরব আমিরাত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশ, কানাডা, নেপাল, ওমান, কাতার, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, বাহরাইন, ইতালি এবং মালয়েশিয়া।

১. সংযুক্ত আরব আমিরাত (১৪ বিলিয়ন)

লাখ লাখ ভারতীয় ইউএই-তে বাস করছেন। এদের বেশিরভাগই বাস করেন দুবাই, আবুধাবি এবং শারজায়। দেশটিতে পেট্রোলিয়াম, কন্সট্রাকশন এবং অন্যান্য শিল্পে কাজের সুযোগ থাকায় আরো অনেক ভারতীয় সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এই দেশ থেকে ভারতের বাৎসরিক প্রায় সাড়ে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স আয় হয়।

২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১১ বিলিয়ন)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশ, যা কখনোই ঘুমায় না। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা জাগ্রত এই দেশেও অনেক ভারতীয় বাস করেন। দেশটির বিজ্ঞান, প্রযুক্তি থেকে শুরু করে এমন কোনো খাত নেই, যেখানে কোনো ভারতীয় কাজ করে না। বর্তমানে এখানে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় বাস করছেন এবং অনেকেই নিজ দেশ থেকে এখানে পাড়ি জমানর চেষ্টায় আছেন। এই দেশ থেকে ভারত তার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আয় করে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভারতীয়দের পাঠানো টাকায় বছরে প্রায় ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা পড়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় কোষাগারে।

৩. সৌদি আরব (৮ বিলিয়ন)

২০০০ সালের হিসাবেই এই দেশে বাস করতে ১৫ লক্ষ ভারতীয়। গত ১৫ বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে বৈ কমেনি। এই কারণেই ভারতের রেমিটেন্স আয়ের সর্বোচ্চ দেশুগলোর মাঝে তৃতীয় অবস্থানে আছে এই দেশ। ভারত বছরে প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে এই দেশে অবস্থানকারী ভারতীয়দের কল্যাণে।

৪. যুক্তরাজ্য (৪ বিলিয়ন)

যুক্তরাজ্য পৃথিবীর ষষ্ঠ অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ। দেশটি ভারতীয়দের জন্য শিক্ষা এবং চাকরিক্ষেত্রে দারুন সুযোগ দিয়ে রেখেছে। সেই সুবাদে এখানে রয়েছেন অসংখ্য ভারতীয়। অনেকে স্থায়ীভাবেও বসবাস করেন এখানে। এই দেশ থেকে ভারতের বাৎসরিক রেমিটেন্স আয় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

৫. বাংলাদেশ (প্রায় ৪ বিলিয়ন)

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে ভারতের বাৎসরিক রেমিটেন্স আয় প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার। এদেশে প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় বাস করছেন। বিভিন্ন এনজিও, গার্মেন্ট এবং টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠানে এইসব ভারতীয় কর্মরত আছেন। এছাড়া সরকারি হিসাবের বাইরেও পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম থেকে অবৈধভাবে জীবনের সন্ধানে প্রতিবছরই প্রবেশ করছে অনেক ভারতীয়।

৬. কানাডা (সাড়ে ৩ বিলিয়ন)

উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা পৃথিবীর এগারতম অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ। শক্তি রপ্তানিকারী দেশগুলোর একটি কানাডা। ভারতের রেমিটেন্স আয়ের ক্ষেত্রে এই দেশের অবস্থান ছয় নম্বরে। এখান থেকে ভারতের বাৎসরিক রেমিটেন্স আয় প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

৭. নেপাল (৩ বিলিয়ন)

একটা সময় নেপাল ভারতেরই অংশ ছিল এবং পরবর্তীতে দেশটি পৃথক হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশে পরিণত হয়। ভারত থেকে আলাদা হওয়ার সময় অনেক ভারতীয়ই বিভিন্ন কারণে সেখানে থেকে যায়। এর মাঝে অন্যতম চাকরি এবং ব্যবসা। বর্তমানে এখান থেকে ভারতের বাৎসরিক রেমিটেন্স আয় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

৮. ওমান (২.৫ বিলিয়ন)

এই দেশ এমন একটি দেশ, যেখানে নিজস্ব জনগণের চেয়ে ভারতীয় জনগণের সংখ্যাই বেশি। ইহিতাসবিদদের মতে, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে ভারতীয়দের যাতায়াত। এখন থেকে ভারতের বাৎসরিক রেমিটেন্স আয় প্রায় আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

৯. কাতার (২ বিলিয়ন)

পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস এই দেশের আয়ের মূল উৎস। এখানেও দেখা মেলে অসংখ্য ভারতীয়র। কাতারে অবস্থানরত নিজ নাগরিকদের সৌজন্যে ভারতের বাৎসরিক বৈদেশিক মুদ্রা আয় প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

১০. শ্রীলঙ্কা ১.৫ বিলিয়ন)

চা, রাবার, কফি, চিনি উৎপাদের জন্য সারা পৃথিবীব্যাপী পরিচিত এই দেশটির বাৎসরিক জিডিপি ১১৫ বিলিয়ন ডলার। এখানেও প্রচুর ভারতীয় বাস করেন। এই দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের সৌজন্যে ভারতের বাৎসরিক রেমিটেন্স আয় প্রায় দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

১১. অস্ট্রেলিয়া (��.৩ বিলিয়ন)

দেশটি বিদেশিদের জন্য প্রচুর কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে রেখেছে। এই সুযোগ ভালোভাবেই ব্যবহার করেছেন ভারতীয়রা। ফলে এখানেও সন্ধান মেলে অনেক ভারতীয়র। অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত ভারতীয়দের সৌজন্যে ভারতের বাৎসরিক রেমিটেন্স আয় প্রায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

১২. সিঙ্গাপুর (১ বিলিয়ন)

সিঙ্গাপুর বাজার অর্থনীতিতে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি দেশ। বলা হয়ে থাকে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যবসাবান্ধব দেশ। এখানেও সন্ধান মেলে অনেক ভারতীয়র। সিঙ্গাপুরে থাকা ভারতীয়দের জন্যে ভারতের বাৎসরিক রেমিটেন্স আয় প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

১৩. বাহরাইন (৭শ’ মিলিয়ন)

২০০৮ সালে প্রকাশিত লন্ডন’স ফাইনেন্সিয়াল সেন্টারস ইনডেক্স অনুযায়ী, এই দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। দেশটির উপার্জনের মূল উৎস তেল এবং পেট্রোলিয়াম। এখানেও দেখা মেলে অনেক ভারতীয়র। এই দেশ থেকে ভারতের বাৎসরিক রেমিটেন্স আয় প্রায় ৭শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

১৪. ইতালি (৬শ’ মিলিয়ন)

ইতালি এমন একটি দেশ, যেখানে বেকারত্বের হার সর্বনিন্ম পর্যায়ের। এখানেও অনেক ভারতীয়র দেখা মেলে। এই দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের সৌজন্যে ভারতের বাৎসরিক রেমিটেন্স আয় প্রায় ৬শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

১৫. মালয়েশিয়া (৫শ’ মিলিয়ান)

এই দেশটি পৃথিবীব্যাপী সকল মানুষের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে রেখেছে। বিশেষ করে, তরুণদের জন্য এই দেশটি বর্তমানে স্বপ্নের দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে অবস্থানরত ভারতীয়দের সৌজন্যে ভারতের বাৎসরিক রেমিটেন্স আয় প্রায় ৫শ’ মিলিয়ান মার্কিন ডলার। সূত্র: সিলিকন ইন্ডিয়া নিউজ