
ছবি সংগৃহীত
বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও
আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, ১৪:১৪
‘বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও। মনের মাঝেতে চিরদিন তাকে রেখে দিও। ভুলনা তাকে ডেকে নিতে তুমি...’ চলার পথে বন্ধুকে তো চিনতেই হবে। বন্ধু ছাড়া কি জীবনের স্বাদ বোঝা যায়? তবে সঠিক বন্ধুকে চেনাটাও কিন্তু বেশ শক্ত একটা কাজ। অনেক সময় রঙ-ঢঙ দেখে ডাকে মনে হয় জীবনের সবচেয়ে কাছের জন, হয়তো প্রয়োজন ফুরোলে অচেনা গ্রহের বাসিন্দা হয়ে উঠবে সেই প্রিয় বন্ধুটিই। তাই দেখে শুনে নিজের জন্যে সঠিক বন্ধু নির্বাচন করাটাও বেশ গুরুত্বের সাথেই নিতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন সায়মা। বলেন- ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে একটা বড় পরিসর পেয়েছিলাম সবার সাথে মেশার। কিন্তু সবার কি আর সবার সাথে মানসিকতা মেলে? তাই স্কুল কলেজের বন্ধুদের ছেড়ে এসে এখানে কাছের বন্ধু পেতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তবে মননে, মানসিকতায় মিলেছে যাদের সাথে তাদের সাথেই বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে একটু একটু করে।’ চল্লিশ পেরোনো আবদুস সালাম বাস করেন মিরপুর ১০ এ। তিনি মনে করেন- ‘সময়ের পরিবর্তনে বন্ধুরাও পরিবর্তিত হয়ে যায়। একটা দল যে সারাজীবন একসাথে থাকবে তা নয়। সময় সবাইকে দুরে সরিয়ে নিয়ে নেবে আর সেটাই স্বাভাবিক। তবে এর মধ্যেও কিছু কিছু সম্পর্ক চিরস্থায়ী হতে পারে। আর সেসবের মধ্যে অন্যতম হলো বন্ধুত্ব।’ বন্ধুত্বের মুখোশ সবাই পরে। সবাই কি আর প্রকৃত বন্ধু হয়? সবার মধ্যে থেকে ভালো বন্ধু চিনে নেওয়াটা কিন্তু জরুরী। তা না হলে খারাপ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে সারাজীবন পস্তাতে হবে আপনাকে। জেনে নিন কি করে চিনবেন নিজের প্রকৃত বন্ধুকে। ১) ভেবে দেখুন তো এমন কোনো দিন গেছে যেদিন আপনার মনের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। ঠিক সেই সময়ে আপনাকে একটু প্রশান্তি দিতে ছায়া হয়ে পাশে দাড়িয়েছে একজন। বুঝে নিন সেই মানুষটিই আপনার প্রিয় বন্ধু। তার হয়তো প্রতিটি ছুটির দিনে আপনার সাথে বসে চা খাওয়ার বা আপনার সাথে চ্যাট করার সময় হয় না কিন্তু বিপদে তার সহায়তা মোটেও মিস হয় না। ২) হয়তো কোনো একদিন আপনার বাসায় এসে চুটিয়ে আড্ডা জমানোর চেষ্টায় ব্যস্ত সে। কিন্তু তখন আপনার মোটেও ভালো লাগছে না এসব ঝামেলা। উপরন্তু ঘরদোর নোংরা করার জন্যে বিরক্তিও আপনার চোখে মুখে। তাই তার সাথে করে বসলেন খারাপ ব্যবহার। কিন্তু পরদিন নিজের ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে ক্ষমা চাইতেই যদি সে আপনার অবস্থাটা বুঝতে পারে। মেনে নিন সেই আপনার সঠিক বন্ধু। ৩) পছন্দের মানুষটির সাথে ঝামেলা। হৃদয় ভেঙে যাওয়ায় আপনার মন বলছে ‘চাই একাকীত্ব।’ ভুলভাল সিধান্ত নেয়াও অসম্ভব নয় এসময়। দেখবেন এই ক্রান্তিকালেও আপনি তাকে পাশে পাবেন যে সত্যিই আপনাকে ভালো বন্ধু মনে করে। আর তার সঙ্গ আপনি ততক্ষণ পাবেন যতোক্ষণ না আপনি পুরোপুরি ঠিক হয়ে যান। ৪) হতে পারে ব্যস্ত জীবনে তারও দম ফেলার ফুরসত নেই। কিন্তু কথাটা যদি হয় আপনার কোনো বিষয়ে পরামর্শ দরকার দেখবেন তার সম্পূর্ণ মনোযোগ তখন আপনারই দিকে। বলে দিতে হবে না নিশ্চয়ই যে তিনি আপনার প্রকৃত বন্ধু। ৫) ভেবে দেখুন তো আপনার বন্ধুদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে সারাদিন নিজের কাজ, চাপ, ঝামেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে বটে। কিন্তু দিনশেষে একটু সময় আপনার জন্যে রেখেই দেয় বন্ধুত্বেও বাঁধনটা আর একটু জোড়দার করতে। ৬) সকাল থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছেন, ম্যাসেজ করছেন। নাহ্, কোনো রেসপন্স নেই। হতাশ আপনি যখন একগাদা বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে বিছানার দিকে এগোচ্ছেন দেখলেন সেই বন্ধুটি আপনার জন্যে একটা সারপ্রাইজ নিয়ে হাজির। মানতেই হবে তিনি আপনার প্রকৃত বন্ধু। ৭) কোনো একটা পার্টিতে গেছেন। হয়তো অনেকের মদ্যে নিজেকে অনেক একা মনে করছেন। আপনার প্রিয় বন্ধুটিও নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু যেই না কেউ আপনার দিকে আঙুল তুলে কোনো কথা বললো। তখনই সে পাশে এসে দাড়ালো আপনার। সাহায্য করলো ঝামেলা থেকে বেরিয়ে আসতে। তাহলে বুঝতে হবে তিনি আপনার প্রকৃত বন্ধু। ৮) হয়তো কোনো কারনে আপনাকে সঙ্গ দিতে পারলো না আপনার বন্ধুটি। তবে পরদিন দেখা হতেই সে যেমন সেটার জন্যে সরি বললো, তেমন কোনো না কোনোভাবে আর একটু সঙ্গ দিয়ে আপনাকে ভালো রাখার চেষ্টা করলো। তাহলে বুঝতে হবে আপনার সামনেই দাড়িয়ে আছেন আপনার প্রকৃত বন্ধু। ৯) যদি দেখেন যে আপনার বন্ধুটির আপনার সাথে বন্ধুত্ব সারাজীবন রাখার জন্যে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাহলে বুঝে নিন সেই আপনার প্রকৃত বন্ধু। ১০) ঝুটঝামেলা কোথায় নেই বলুন? তবে টুকটাক ঝামেলা মানেই যে সম্পর্ক শেষ তা নয় নিশ্চয়ই? তবে দেখবেন আপনার সেই বন্ধুটিকে যে কিনা নিজেদের মধ্যে যে কোনো সমস্যা নিরসনে নিজেই এগিয়ে আসে। টুকটাক ঝগড়া মানেই সম্পর্ক শেষ তা নয় বলেই বিশ্বাস করে। সেই হচ্ছে আপনার প্রকৃত বন্ধু। ১১) আস্থা আর বিশ্বাসই বন্ধুত্বের প্রথম শর্ত। তাই যেখানে বিশ্বাস নেই সেটা ভালো বন্ধুত্ব হতে পারে না। আপনার প্রকৃত বন্ধু যেমন আপনার ওপর বিশ্বাস হারাবে না তেমন আপনার বিশ্বাসটা নষ্ট হোক এমন কোনো কাজও করবে না। ১২) আপনার প্রকৃত বন্ধু যেমন আপনার সুখের সময় আপনার আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে আপনার পাশে থাকবে। জমিয়ে মজা করবে। তেমন বিপদের সময়ও তার ছায়া আপনি পাবেন। যেকোনো সমস্যার সমাধানে আপনি পরামর্শ পাবেন তারই কাছ থেকে। ১৩) আপনার জন্যে ক্ষতিকর সেটা বর্তমানে হোক বা পরবর্তী জীবনে সেটা সে কখনোই আপনাকে করতে বলবে না। বিপথে পা বাড়ালেও তার সহায়তায় আপনি আবার ঠিক পথে ফিরে আসবেন। তাহলে বুঝবেন যে মানুষটি আপনাকে ফিরিয়েছে নির্ঘাত ধ্বংসের হাত থেকে সেই আপনার প্রকৃত বন্ধু। বন্ধুত্ব একটি চারার মতো। একে বরাবর যতœ করতে হয়। তাহলে সেটা বটের মতো বিশাল হতে পারে। আর যে গাছের শিকড় যতো গভীরে যায় সেই গাছ হাজার ঝড়েও ভেঙে পড়েনা। ছবি: সাহিত্য.কম