
ছবি সংগৃহীত
প্রভু প্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত চতুষ্পদ প্রাণী
আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬, ০৪:৪০
জগতের প্রতিটি সৃষ্টিই বিচিত্র। রহস্যময়। সৃষ্টির রহস্যময়তা ভেদ করা মানুষের জন্য অসাধ্য। স্রষ্টার সৃষ্টিকুশলতা কেউই বুঝে উঠতে পারে না। মনুষের চিন্তাশক্তি সীমিত। দৃষ্টিশক্তি সসীম। দর্শনিচ্ছা সীমাবদ্ধ। অথচ দয়ময়ের দান-অবদান অসীম। অফুরান। ধরাধামের সুনিপুণ কারিগর কতই না আশ্চর্য উপায়ে যমিন চিরে বের করেন সকল জীবের জন্য খাদ্যবসস্তু। মানুষের আহারের জন্য উৎপন্ন করেন বিভিন্ন ধরণের খাদ্যশস্য, শাকসবজি, মাছ-গোশত ও ফলমুল। আর মানুষের বশীভূত প্রাণী চতুস্পদ জন্তুর আহার্য স্বরূপ উৎপণ্য করেন রকম রকমের ঘাস, লতাগুল্ম ও সবুজের ঘন উদ্যান। এপ্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-- মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক, আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি, এরপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি। অতপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সব্জী, যয়তুন, খর্জুর, ঘন উদ্যান, ফল এবং ঘাস-- তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারার্থে। (সূরা আবাসা : ২৪-৩২) মানবজীবনে চতুষ্পদ প্রাণীর উপকারিতা : একটা মানুষকে সুস্থ দেহে বেচেঁ থাকতে হলে প্রতিদিনই পর্যাপ্ত পরিমাণ আমিষ খাবার গ্রহণ করতে হয়। আর আমিষের চাহিদা মিটাতে চতুষ্পদ জন্তু তুলনামূলকভাবে সর্বাগ্রে উল্লেখ্য। বাহন, বোঝা বহন ও কৃষি কাজের অন্যতম উপাদান হিসেবে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে চতুষ্পদ জন্তু। আধুনিক যানবাহন আবিষ্কারের পূর্বকালে হাতি, ঘোড়া, উট ও মহিষের পাশাপাশি গরু, গাধা, খচ্চর, ভেড়া ও দুম্বার পিঠে সওয়ার হতো মানুষ ও পন্য। বিশেষত পন্য-পরিবহনের একমাত্র স্থলযান ছিল চতুষ্পদ জন্তু। রোমান, পারস্য ও আরবের রাষ্ট্রিক সৈন্যবাহিনীর একমাত্র বাহন ছিল চতুষ্পদ প্রাণী। পশু পালনের মাধ্যমেই অধিকাংশ আরব বেদুইনের জীবিকা নির্বাহের কথা সর্বজন বিদিত। কুরআনের ভাষায় চতুষ্পদ প্রাণীর উপকারিতা : মনুষ্য জীবনে চতুষ্পদ প্রাণীর ব্যবহার, উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তার কথা মহা গ্রন্থ আল-কুরআনেও সবিশেষ উল্লেখিত হয়েছে। পবিত্র আল-কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা কোন কোনটিকে বাহন হিসাবে ব্যবহার কর এবং কোন কোনটিকে ভক্ষণ কর। তাতে তোমাদের জন্য অনেক উপকারিতা রয়েছে। আর এ জন্য সৃষ্টি করেছেন; যাতে সেগুলোতে আরোহণ করে তোমরা তোমাদের অভিষ্ট প্রয়োজন পূর্ণ করতে পার। এগুলোর ওপর এবং নৌকার উপর তোমরা বাহিত হও। তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখান। অতএব, তোমরা আল্লাহর কোন্ কোন্ নিদর্শনকে অস্বীকার করবে।' (৪০:৭৯-৮১) স্রষ্টার সুনিপুণ সৃষ্টি : পবিত্র কোরআন-এর বহু জায়গায়, প্রসঙ্গক্রমে চতুষ্পদ জন্তুর কথা এসেছে। প্রায় প্রতি জায়গায়ই এসব জীবজন্তু সৃষ্টিতে আল্লাহর নিপুণ সৃষ্টি কৌশল- প্রক্রিয়া পরিব্যক্ত হয়েছে এবং সাথে সাথেই এ কথাও প্রকাশ করা হয়েছে যে, এসব বিষয় হল নিদর্শন, তাদের জন্য যারা চিন্তাশীল। এরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থ ব‘ থেকে পান করাই এবং তোমাদের জন্যে তাদের মধ্যে প্রচুর উপকারিতা আছে, তোমরা তাদের কতককে ভক্ষণ কর। তাদের পিঠে জলযানে তোমরা আরোহণ করে চলাফেরা করে থাক।’ (২৩:২১-২২) অর্থনৈতিতে জতুষ্পদ প্রাণীর অবদান : চতুষ্পদ প্রাণীর ব্যবহারিক দিকগুলোর অন্যতম হলো তার চামড়ার ব্যবহার। বাঙলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধানতম একটি উৎস হলো জতুষ্পদ জন্তুর চামড়া। বাঙলাদেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি আয় অর্থনীতির চাকাকে অনেকটা সচল রেখেছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১৯৯০-এর দশকে এ শিল্পে বার্ষিক গড় রফতানি আয় ছিল ২২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১০ ১১ অর্থবছরে চামড়া রফতানি থেকে আয় হয় ২৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং চামড়াজাত পণ্য থেকে আয় হয় ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১১-১২ সালে এ খাতে মোট রফতানি আয় দাঁড়ায় ৭৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সরকার রফতানি নীতিতে ২০১২-১৫ সালে এ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বাস্তবধর্মী নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ শিল্পের রফতানি আয় ১বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশিহয়েছে। বাংলাদেশে কাঁচা চামড়ার বার্ষিক চাহিদার প্রায় শতকরা ৪৫ভাগ আসে কোরবানির পশু থেকে। সঠিক ব্যবস্থাপনা, বাজার মনিটরিং, দ্রুত সংরক্ষণ, পরিবহন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এ খাতের বিভিন্ন স্তরে ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারেন এবং উন্নতমানের চামড়া প্রস্তুত করা সম্ভব। শুধু চামড়া উৎপাদন নয়, বহুমুখী চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। যে সকল সূরায় চতুষ্পদ প্রাণীর বর্ণনা এসেছে : পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন সূরায় বিভিন্ন প্রসঙ্গে গরু, গাভী, গো-বৎস্য বাছুর প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সূরাগুলো হলো- সূরা বাকারা, সূরা নিসা, সূরা মায়েদা, সূরা আন’আম, সূরা আ’রাফ, সূরা হুদ, সূরা ইউসুফ, সূরা নাহল, সূরা তা’হা, সূরা যারিয়াত, সূরা আবাসা মাওলানা সাঈদ কাদির সহকারী পরিচালক, মোহাম্মাদিয়া কওমী মাদরাসা, কোনাবাড়ি, গাজীপুর।